BRAKING NEWS

Bee buzz waves : মৌমাছির গুঞ্জন-তরঙ্গ ব্যবহার করে প্রচুর হাতির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে, দাবি উপূসী রেলওয়ের

গুয়াহাটি, ২১ জুলাই (হি.স.) : মৌমাছির গুঞ্জন-তরঙ্গ ব্যবহার এবং আরও বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রেল দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যু হ্রাস পেয়েছে। এই দাবি করেছে উত্তরপূৰ্ব সীমান্ত রেলওয়ে। গুয়াহাটির মালিগাঁওয়ে অবস্থিত উত্তরপূৰ্ব সীমান্ত রেলওয়ের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক শুভানন চন্দের দাবি, ২০১৭ সাল থেকে এখন এখন পর্যন্ত ৯৫০টি হাতির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। তাতে, মৌমাছির গুঞ্জন-তরঙ্গ অন্যতম ভূমিকা পালন করেছে। ৫৫টি স্থানে মৌমাছির গুঞ্জন-তরঙ্গের যন্ত্র বসানো হয়েছে। সেখানে রেল দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যু এড়ানো সম্ভব হয়েছে।


তিনি বলেন, উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে নিজের অধিক্ষেত্রের অধীনে বন্যপ্রাণীর প্রাণ রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই, বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাতে বিগত কয়েক বছর ধরে শতাধিক হাতির প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
শুভানন চন্দের দাবি, ট্রেন-হাতির সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের পক্ষ থেকে একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অতি আবশ্যকারী সমাধান ‘প্ল্যান বি’ গ্রহণ করা হয়েছে। এ-বিষয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, ২০১৭ সালে রঙিয়া ডিভিশনের ডিআরএম ‘প্ল্যান বি’ আবিষ্কার করেন। তিনি বলেন, হাতি সাধারণত মৌমাছির গুঞ্জন শুনলে পালিয়ে যায়। বিভিন্ন গ্রামে মৌমাছি চাষ করা হয় এমন স্থানে হাতি কখনও আসে না। তাই, বন দফতরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে মৌমাছির গুঞ্জন-তরঙ্গের যন্ত্র তৈরি করে পোষা হাতির উপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছিল। এমন-কি বন দফতরের সহায়তায় বুনো হাতির ওপর ওই যন্ত্রের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছিল। তাতে দারুণ সাফল্য পাওয়া গিয়েছিল। এর পরই উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে হাতির করিডোর হিসেবে চিহ্নিত ৫৫টি স্থানে ওই যন্ত্র বসানো হয়েছিল। ২০১৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ওই স্থানগুলিতে একটি হাতিরও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি।


তাঁর কথায়, এমন একটি যন্ত্র বানানো হয়েছে যা ৪০০ মিটার পরিধির মধ্যে মৌমাছির গুঞ্জনের মতো ধ্বনির সৃষ্টি করে। এ ধরনের প্রথম যন্ত্র রঙিয়া ডিভিশনের অন্তর্গত আজারা ও কামাখ্যা স্টেশনের মধ্যে এনএন ২৭৪ লেবেলক্রসিং গেটে স্থাপন করা হয়েছিল। এর পর এ ধরনের ডিভাইস উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের অধীনে হাতি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকার ৫৫টি স্থানে স্থাপন করা হয়। তিনি জানান, হাতি আসছে টের পেলেই সেখানে দায়িত্বপ্ৰাপ্ত কর্মীরা ওই যন্ত্র বাজিয়ে দেন। তখন হাতি রেল লাইনের দিকে না গিয়ে অন্য দিকে চলে যায়। তাঁর দাবি, উত্তরপূৰ্ব সীমান্ত রেলওয়ের পাঁচটি ডিভিশনে ওই যন্ত্র বসানো হয়েছে। কাটিহার, আলিপুরদুয়ার, রঙিয়া, তিনসুকিয়া এবং লামডিং ডিভিশনের ৫৫টি স্থানে ওই যন্ত্র বসেছে। তার মধ্যে আলিপুরদুয়ার, রঙিয়া এবং লামডিং ডিভিশনে রেল দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি ঘটনা অতীতে ঘটেছে। যা ওই যন্ত্র বসানোর পর থেকে অন্যান্য ডিভিশনের পাশে ওই তিনটি ডিভিশনেও দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যু শূন্যের ঘরে পৌঁছেছে।


তিনি আরও বলেন, ট্রেনের সাথে হাতির ধাক্কা লাগলে হাতির পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য এক বিপদজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হাতি হল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের অধীনে একটি সুরক্ষিত প্রজাতি। একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, গত ১৮ জুলাই ০৪-২৫ মিনিটে ডাউন পোলা এইচএসডি ট্রেনের লোকো পাইলট গোপাল প্রসাদ (এলপি) এবং এসসি যাদব (এএলপি) তিনটি হাতিকে লামডিং ডিভিশনের বোকাজান-খটখটি স্টেশনের মধ্যে ট্র্যাক অতিক্রম করতে দেখেন। তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে জরুরিকালীন ব্রেক কষে বন্য হাতিগুলির প্রাণ রক্ষা করেন।


তাঁর দাবি, হাতির সুরক্ষার জন্য বন বিভাগের সাথে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় এমন আরও কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। চন্দ বলেন, ডিভিশনাল কন্ট্রোলে বন আধিকারিকদের নিয়োগ ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে হাতির চলাফেরার রিয়েল টাইম মনিটরিং করা হচ্ছে। চিহ্নিত স্থানগুলিতে গতিবিধি নিষেধ সংবলিত বোৰ্ড লাগানো হয়েছে। ট্রেন চালক ও গার্ডদের মধ্যে সংবেদনশীলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। হাতির করিডোরে প্রবেশের সময় চালকদের সতর্ক করতে সাইন বোর্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাথে তিনি যোগ করেন, হাতি অতিক্রমের জন্য রেম্প অথবা আন্ডারপাস নির্মাণ ও ভালোভাবে দেখার জন্য ট্র্যাকের নিকটস্থ জঙ্গল পরিষ্কার রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।
তাঁর দাবি, রেলওয়ের পদক্ষেপগুলির জন্য ট্রেন-হাতি সংঘর্ষের পাশাপাশি হতাহতের ঘটনাও হ্রাস পেয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে সমগ্র উত্তরপূৰ্ব রেলওয়েতে ৯৫০টিরও অধিক হাতির প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *