ত্রিপুরায় আগামী দুই বছরের মধ্যে আগর নির্ভর দুই হাজার কোটি টাকার অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৩ জুলাই : ত্রিপুরায় আগামী দুই বছরের মধ্যে আগর নির্ভর দুই হাজার কোটি টাকার অর্থনীতির লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার। আগর নির্ভর অর্থনীতির লক্ষ্যে বনমহোৎসবের এবারের ভাবনা হল “ঘর ঘর আগর, হর ঘর আগর’”। প্রতি বাড়িতে একটি আগর গাছ লাগানোর লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে সমগ্র রাজ্যে প্রায় ২ লক্ষ আগরের চারা বন্টন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আজ ৭২তম বনমহোৎসব উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি আবাসে আগর গাছের চারা রোপন করে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তাঁর কথায়, ত্রিপুরার বনভূমিতেও আগর গাছ লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ত্রিপুরাতে বেসরকারি উদ্যোগে লাগানো ৫০ লক্ষ পরিণত আগর গাছ রয়েছে। পরিকল্পিত পদ্ধতির অভাবে বিগতদিনে কিছু মানুষ আগর গাছ থেকে উপার্জন করলেও প্রকৃত আগর চাষীরা অর্থনৈতিকভাবে বঞ্চিত হতেন। কিন্তু বর্তমান রাজ্য সরকার আগর নির্ভর অর্থনীতি তৈরির লক্ষ্যে আগর মিশন সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রকে সরলিকরণ করেছে। আগরকে কেন্দ্র করে আরও বেশি রোজগার তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার।

আজ সকালে মুখ্যমন্ত্রী সরকারি আবাসে বনমহোৎসব উপলক্ষে বৃক্ষরোপন করে তিনি আরও বলেন, বৃক্ষরোপন ভারতীয় সংস্কৃতির এক ঐতিহা। তাঁর দাবি, রাজ্যে বৃক্ষরোপনের পাশাপাশি বৃক্ষ রক্ষণাবেক্ষণের উপরও গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে আগের তুলনায় দ্বিগুণ বৃক্ষ বাচিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। তাঁর মতে, অক্সিজেন প্রদানকারী রাজ্যগুলির মধ্যে অন্যতম স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। ত্রিপুরার মোট ভূভাগের প্রায় ৭০ শতাংশ বনাঞ্চল। শুধু বৃক্ষরোপনই নয়, রোপন করা বৃক্ষগুলো সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েও কাজ করছে সরকার। এরফলে আগে যেখানে ৪০ শতাংশের কম বৃক্ষ বাচানো সম্ভব হতো, বর্তমানে গাছ রক্ষণাবেক্ষণের প্রবণতা তৈরির ফলে ৮০ শতাংশের অধিক বৃক্ষ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। জনজাগরণ এবং সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতির ফলেই তা সম্ভব হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রোজগারের দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথে প্রতিটি কার্যক্রমের সাথে ব্যবহারিক দিককে যুক্ত করে তাকে ফলপ্রসু করার উপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এরই অঙ্গ হিসাবে উপার্জন ভিত্তিক কর্মসূচি রূপায়ণে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এই প্রসঙ্গে তাঁর দাবি, তিন বছরের মধ্যে দুগ্ধ ক্ষেত্রে স্বয়ম্ভরতার লক্ষ্যের মুখ্যমন্ত্ৰী উন্নত গোধন প্রকল্প চালু করেছে রাজ্য সরকার। দুধের চাহিদা মেটাতে একটা বড় অর্থ যা ত্রিপুরার বাইরে চলে যায়, দুধ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর হলে তা ত্রিপুরার অর্থনৈতিক উন্নয়নে যেমন সহায়তা করবে তেমনি ডায়েরি নির্ভর শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে রোজগারের নয়া দিশা পাবে রাজ্যের যুবকরা।

তিনি বলেন, স্বনির্ভর পরিবার ছাড়া স্বনির্ভর ত্রিপুরা গড়া সম্ভব নয়। তাই প্রতিটি পরিবারকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পের অন্তর্গত বিভিন্ন সহায়তার পাশাপাশি প্রতিটি পরিবারকে পাচটি করে ফল ফুল এবং বিভিন্ন অর্থকরী গাছের চারা দেওয়া হচ্ছে। বৃক্ষরোপনের মতো কর্মসূচিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যদি প্রতি ব্যক্তি জীবনে ১৫টি গাছ রোপনের অভ্যাস করেন তাহলেই মহোৎসবের সার্থকতা আসবে। তার পাশাপাশি নির্বিচারে বন ধ্বংস রোধেও সবাইকে ভূমিকা নিতে আহ্বান জানান তিনি।