করোনায় পিতৃমাতৃহারা অনাথ শিশুদের ১৮ বছর পর্যন্ত সহায়তায় মুখ্যমন্ত্রী বাল্যসেবা প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৯ মে৷৷ করোনা-য় আক্রান্ত হয়ে বাবা ও মা উভয়ের মৃত্যুতে তাঁদের অনাথ সন্তানদের ১৮ বছর পর্যন্ত সহায়তার জন্য নতুন প্রকল্প এনেছে ত্রিপুরা সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী বাল্য সেবা প্রকল্পের অধীনে ওই সব ছেলে-মেয়েদের মাসিক সাড়ে তিন হাজার টাকা এবং পড়াশুনার সমস্ত দায়িত্ব নেবে সরকার৷ শুধু তা-ই নয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিবাহের সময় এককালীন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে সহায়তা করা হবে৷ আজ শনিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে ওই প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, করোনা-র প্রকোপে অপূরণীয় ক্ষতিপূরণ করা হয়ত সম্ভব নয়৷ কিন্তু করোনা-য় বাবা ও মা-কে হারিয়ে অনাথ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিন্তায় ত্রিপুরা সরকার এই প্রকল্প এনেছে৷


এদিন তিনি বলেন, ত্রিপুরায় এখনও করোনা-য় বাবা ও মা উভয়ের মৃত্যুর ঘটনা সরকারি রেকর্ডে পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু এ ধরনর দুর্ঘটনার শিকার হলে অনাথ শিশুদের ভরণ-পোষণ নেওয়ার ভাবনায় মুখ্যমন্ত্রী বাল্য সেবা প্রকল্পের সূচনা করা হচ্ছে৷ তাঁর কথায়, করোনা-য় অনাথ শিশুরা হোমে কিংবা পরিবারের অন্য অভিভাবকের সাথে থাকতে চাইবে৷ হোমে যারা থাকবে তাদের সমস্ত খরচ সরকারই বহন করবে৷ এখন দাদু-দিদা কিংবা পরিবারের অন্য কারোর সাথে থাকলে চাইলে ওই সব অনাথ শিশুদের জন্য সরকার ১৮ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেবে৷ পাশাপাশি, পড়াশুনার সমস্ত খরচ ত্রিপুরা সরকার বহন করবে৷ শুধু তা-ই নয়, মেয়েদের ক্ষেত্রে বিবাহের সময় এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হবে৷


সাথে তিনি যোগ করেন, ওই অনাথ শিশুরা দশম উত্তীর্ণ হওয়ার পর ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবলেট দিয়ে সহায়তা করবে ত্রিপুরা সরকার৷ তাতে তারা ইন্টারনেটের সহায়তায় আরও বেশি জ্ঞান অর্জন করতে পারবে৷
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা অতিমারিতে অনেকেই আপনজনদের হারিয়েছেন৷ মা-বাবাকে হারিয়েছে এমন ছেলেমেয়েদের ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষার দায়িত্ব নেবে সরকার৷ কোভিড অতিমারি মোকাবিলায় রাজ্য ও কেন্দ্র সরকার মিলে কাজ করছে৷ কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই ৫৭৯ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছে৷ গরীব জনগণের কথা চিন্তা করে এই প্যাকেজের মাধ্যমে রেগায় ৩৩২ কোটি টাকা এবং টুয়েপে ২৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে৷ সামাজিক ভাতা প্রাপকদের দুই মাসের ভাতা একসঙ্গে সরাসরি তাদের অ্যাকাউন্টে প্রদান করা হবে৷ তাতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি টাকা৷ ৭ লক্ষ গরীব এবং প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারকে এক হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে৷ এছাড়াও এই ৭ লক্ষ গরীব এবং প্রয়োজন রয়েছে এমন পরিবারে ফুড প্যাকেট প্রদান করা হবে৷ তাতে ব্যয় হবে ৮০ কোটি টাকা৷


সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারকে সময়ে সময়ে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করছে৷ করোনা পরিস্থিতিতেও কেন্দ্রীয় সরকার প্রধানমন্ত্রী আবাসন যোজনায় রাজ্যের জন্য একসঙ্গে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ঘরের বরাদ্দ করেছে৷তাতে ২,৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে৷ এরজন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের মন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমরকে রাজ্যবাসীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী৷
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে টিকাকরণের হার দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশী৷ রাজ্যে কোভিড মোকাবিলায় অি’জেন যুক্ত শয্যা, অক্সিমিটার, কোভিড কেয়ার সেন্টার, কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতাল, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি ব্যবস্থাগুলি রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই করেছে৷ এছাড়াও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় অক্সিজেন প্ল্যান্ট আই জি এম হাসপাতালে স্থাপন করার প্রক্রিয়া চলছে৷ এই অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে প্রতি মনিটে ১০৫০ লিটার অক্সিজেন তৈরী হবে৷ জিবি হাসপাতালেও অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হবে৷ সেখানে প্রতি মিনিটে ৯০০ লিটার অক্সিজেন প্রস্তুত হবে৷ এছাড়াও রাজ্যের ৮টি জেলায় এবং খুমুলুঙ অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে আরও ১৮টি অক্সিজেন প্ল্যান্ট তৈরী করার প্রক্রিয়া চলছে বলে মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনে জানান৷ সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব জে কে সিনহা উপস্থিত ছিলেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *