নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ মে৷৷ শিক্ষা হচ্ছে জাতির মেরুদন্ড৷ শিক্ষাই দেশ এবং জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে৷ তাই এই সরকার গত তিন বছরে রাজ্যে শিক্ষার উন্নয়নে প্রায় ২৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ রাজ্যের প্রথম শিক্ষামূলক চ্যানেল ’’বন্দে ত্রিপুরা’-র আনুষ্ঠানিক সূচনা করে একথা বলেন৷ রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের পরিচালনায় নতুন এই চ্যানেলটি আজ থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছে৷ মহাকরণে ভিডিও কনফারেন্স হলে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ, মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, শিক্ষা সচিব সৌম্যা গুপ্তা, উচ্চশিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা সাজু ওয়াহিদ এ, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ইউ কে চাকমা সহ অন্যান্যদের উপস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব বোতাম টিপে নতুন এই চ্যানেলটির সূচনা করেন৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে শিক্ষার উন্নয়নে একের পর এক সিদ্ধান্ত কার্যকর করছে৷ নতুন এই শিক্ষামূলক চ্যানেলের সূচনা এই কর্মসূচিরই একটি অন্যতম পদক্ষেপ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা দপ্তর একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর৷ কোভিড পরিস্থিতির মধ্যেও শিক্ষা দপ্তর পিছিয়ে নেই৷ কিভাবে রাজ্যের শিক্ষার্থীদের আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার জন্য দপ্তর কাজ করছে৷ রাজ্যে সকল স্তরের পড়ুয়াদের জন্য এবং শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা দপ্তর গত তিন বছরে যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ কার্যকর করেছে তার উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সময়ের মধ্যে রাজ্যে শিক্ষা ব্যবস্থায় এন সি ই আর টি পাঠক্রম চালু, শিক্ষাবর্ষের পরিবর্তন করা, কেন্দ্রীয়ভাবে একই প্রশ্ণপত্রে পরীক্ষা চালু, ত্রিপুরা বিজ্ঞান ও গণিত মেধা অন্বেষণ পরীক্ষা প্রচলন, প্রি-বোর্ড পরীক্ষা প্রথার প্রচলন, টি বি এস ই থেকে সি বি এস ই’’তে পরিবর্তন, বছর বাঁচাও পরীক্ষা, বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয়কে ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে রূপান্তর, ‘নতুন দিশা’ চালু, প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, চিফ মিনিষ্টার মেরিটরিয়াস অ্যাওয়ার্ড প্রদান, স্পোকেন ইংলিশ, বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম, ককবরক সাহিত্য চর্চা, ওয়ার্কবুক প্রস্তুত, ‘শিক্ষা উৎকর্ষতায় মুখ্যমন্ত্রী মেধা পুরস্কার’ ও শিক্ষক নিয়োগ সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নতুন নতুন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা আগে কখনোই ছিল না৷ তিনি বলেন, জনজাতি সম্প্রদায় থেকে শুরু করে গরীব অংশের ছাত্রছাত্রী সহ সমাজের সকল অংশের পড়ুয়ারা যাতে গুণগত শিক্ষায় নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে পারে তার জন্যেই এই সমস্ত উদ্যোগ কার্যকর করা হচ্ছে৷ উপস্থিত সাংবাদিকদের এক প্রশ্ণের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব, কোভিড পরিস্থিতিতে যথাযথ নিয়ম মেনে চলতে এবং করোনা কার্টুর বিধিনিষেধ মেনে চলতে রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, নিয়ম অনুসারেই রাজ্যে টিকাকরণ চলছে৷ প্রায় ২৬ শতাংশ টিকাকরণ করা হয়েছে, যা দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য স্থানে রয়েছে৷ এনিয়ে অযথা বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ নেই৷ সরকার এবিষয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করছে এবং নজর রাখছে বলেও তিনি সাংবাদিকদের জানান৷
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে গত ১৪ মাস ধরে বিদ্যালয়ের পঠন পাঠন বন্ধ রয়েছে৷ মাঝখানে সুকল খুললেও বর্তমানে পরিস্থিতির কারণে পুণরায় বন্ধ রাখতে হয়েছে৷ তিনি বলেন, নতুন দিশা কর্মসূচির মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানের অগ্রগতি ঘটানো হয়েছিল কিন্তু ১৪ মাস সুকল বন্ধ থাকার ফলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষায় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ৷ এই অবস্থায় ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠনের স্বার্থে নতুন এই চ্যানেলটি চালু করতে হয়েছে৷ শিক্ষামন্ত্রী শ্রীনাথ জানান, এর আগে শিক্ষা দপ্তর রাজ্যের বিভিন্ন ক্যাবল চ্যানেল ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের পঠন পাঠনের বিষয়টি চালু রেখেছিল৷ কিন্তু সেক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার কারণে শিক্ষা দপ্তরের একান্ত নতুন এই চ্যানেলটি চালুর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়৷ এই অতিমারির সময়েও ছাত্রছাত্রীরা কোনভাবেই যাতে ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখেই এই চ্যানেলটি চালু করা হচ্ছে৷ তিনি বলেন, এই চ্যানেলটিতে প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত পাঠক্রমের পাশাপাশি শিক্ষামূলক আলোচনা ও শিক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় সম্প্রচারিত হবে৷ রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় আজ একটি শুভদিন বলে শিক্ষামন্ত্রী তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেন৷ তিনি কোভিড পরিস্থিতিতে সকলের সচেতনতা, সাবধানতা, নিয়ম মেনে চলা, পরীক্ষা করা এবং টিকাকরণের জন্য রাজ্যবাসীর প্রতি আহ্বান জানান৷ সংক্ষিপ্ত ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা ইউ কে চাকমা৷
বর্তমানে চ্যানেলটি সারা রাজ্যে ৯০ শতাংশ এলাকায় উপলব্ধ হবে৷ সৃষ্টি হ্যাথওয়ে ক্যাবল নেটওয়ার্ক (চ্যানেল-৩২৭), জিও টিভি এবং ইউ টিউব চ্যানেলে এবং বাকি ১০ শতাংশ ক্লাউড নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেখতে পাওয়া যাবে৷ ‘বন্দে ত্রিপুরা’ চ্যানেলটি ২৪ শ্র ৭ সময়কাল অনুযায়ী বিদ্যালয় এবং মহাবিদ্যালয়স্তরের বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেণী উপযোগী এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়াদি সম্প্রচারিত হবে৷ চ্যানেলের স্টুডিও রয়েছে আগরতলার কুমারীটিলা, কুঞ্জবনস্থিত এস সি ই আর টি অফিসে৷