আগরতলা, ১৬ মে (হি. স.) : জনজীবনের স্বার্থে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় করোনা কারফিউ জারি করতে হচ্ছে। কারণ শুধু কন্টেনমেন্ট জোন এলাকায় বাড়ি বাড়ি সমীক্ষায় নমুনা পরীক্ষায় করোনা আক্রান্তের হার দাড়িয়েছে ২১.২৫ শতাংশ। শুধু তাই নয়, পশ্চিম জেলায় করোনা আক্রান্ত-দের মধ্যে কেবল আগরতলায় সংক্রমণের হার ৬৫.৬৬ শতাংশ। তাই, আগামীকাল সোমবার ১৭ মে ভর ৫টা থেকে ২৬ মে ভোর ৫টা পর্যন্ত করোনা কারফিউ জারি করা হবে। আজ সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এই ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী রতন লাল নাথ। সাথে তিনি যোগ করেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ত্রিপুরায় আরও ৮টি এলাকা-কে সম্পুর্ন কন্টেনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিন তিনি বলেন আগামীকাল ভোর ৫টা থেকে ২৬ মে ভোর ৫টা পর্যন্ত আগরতলা পুর নিগম এলাকায় করোনা কারফিউ-র বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলাশাসক। একই সাথে রাজ্যের ৮টি জায়গাকে সম্পূর্ণ কনটেইনমেন্ট এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জানান, আগরতলা পুর নিগম এলাকায় করোনা কার্ফু ছাড়াও যে আটটি এলাকাকে সম্পূর্ণ কনটেইনমেন্ট এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলি হলো পানিসাগর নগর পঞ্চায়েত এলাকা, কৈলাসহর পুর পরিষদ, উদয়পুর পুর পরিষদ, অমরপুর নগর পঞ্চায়েত, রাণীরবাজার নগর পঞ্চায়েত, বিশালগড় পুর পরিষদ এলাকা, নাগিছড়া এবং বি এস এফ পাড়া৷
শিক্ষামন্ত্রী জানান, গত দু’দিনে আগরতলা পুর নিগম এলাকায় ৬৮,৬৫৬টি বাড়িতে সার্ভে করা হয় এবং এরমধ্য থেকে ১,১৮ ১টি পরীক্ষা করা হয় রোগের লক্ষণ অনুসারে। এরমধ্যে ২৫১টি নমুনা পজিটিভ পাওয়া যায় এবং এর পজিটিভিটি হার ২১.২৫ শতাংশ। শুধু তাই নয়, পশ্চিম জেলায় বর্তমানে করোনা সক্রিয় রোগী রয়েছেন ২২৬৩ জন। তাদের মধ্যে শুধু আগরতলায় রয়েছেন ১৪৮৬ জন যার আক্রান্তের হার ৬৫.৬৬ শতাংশ। এছাড়াও জওহরলাল নেহরু বালিকা নিবাসে ৫২টি শিশুর নমুনা পরীক্ষায় ৩২ জনের পজিটিভ পাওয়া যায়। পজিটিভিটি রেট ৬১.৫৪ শতাংশ। উজান অভয়নগর আবাসে ৮১টি নমুনা পরীক্ষায় ৪ জনের দেহে কোভিড পজিটিভ পাওয়া যায়৷ অনুরূপভাবে নীলজ্যোতি অনাথ আশ্রমে ২২টি নমুনা পরীক্ষায় কোনও পজিটিভ কেইস পাওয়া যায়নি৷ তিনি বলেন, জওহরলাল নেহরু বালিকা আবাসের শিশুদের হোম আইসোলেশনে বিশেষজ্ঞ শিশু চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছে বলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, আগরতলা পুর নিগম এলাকায় গত কয়েকদিনে কোভিড পজিটিভিটির রেট ক্রমশই ঊর্ধ্বগামী৷ রাজ্য সরকার পরিস্থিতির উপর প্রতিনিয়ত নজর রাখছেন। গতকাল উপমুখ্যমন্ত্রীর পৌরোহিত্যে উচ্চ পর্যায়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞরাও উপস্থিত ছিলেন এবং সকলের অভিমতের ভিত্তিতেই জনজীবনের স্বার্থে করোনা কার্ফু জারি করা ছাড়া উপায় ছিলো না বলে শিক্ষামন্ত্রী জানান।
তাঁর বক্তব্য, জনগণের সচেতনতা, আরও বেশি করে পরীক্ষা এবং ভ্যাকসিন নেওয়া এটাই হচ্ছে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই-এর প্রধান হাতিয়ার। জনগণকে সচেতন থেকে করোনা কার্ফুর বিধিনিষেধগুলি সঠিকভাবে মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এখনও পরিস্থিতি নাগালের বাইরে যায়নি, কিন্তু সচেতন না হলে পরিস্থিতি সংকটজনক হতে বাধ্য বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, বর্তমানে জিবি হাসপাতালটিই রাজ্যের একমাত্র ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল হিসাবে কাজ করছে। শীঘ্রই হাঁপানিয়াস্থিত ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজটিকে ১২০ শয্যা বিশিষ্ট ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতাল হিসেবে চালু করা হবে।
এদিন তিনি বলেন, রাজ্যে বর্তমানে কোভিড কেয়ার সেন্টার ও ডেডিকেটেড কোভিড হেলথ সেন্টার সহ মোট ৪১টি সেন্টার রয়েছে। তাতে মোট শয্যার সংখ্যা ২,৭১৭টি। আরও ৫০০ শয্যা সংযুক্ত হওয়ার পথে। শিক্ষামন্ত্রী জানান, ১০ দিনের করোনা কার্ফু সংক্রান্ত নোটিফিকেশন পশ্চিম জেলার জেলাশাসক জারি করেছেন। তাতে যে বিধিনিষেধ লাগু করা হয়েছে তা যথাযথভাবে মেনে চলতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান। শিক্ষামন্ত্রী করোনা কার্ফু সম্পর্কিত বিধিনিষেধ উল্লেখ করে জানান, সমস্ত সিনেমা হল, শপিং মল, জিমনাসিয়াম, স্পোর্টস কমপ্লেক্স, সুইমিং পুল, বিনোদনমূলক পার্ক, থিয়েটার, অডিটোরিয়াম করোনা কার্ফু চলাকালীন বন্ধ থাকবে। সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক, ক্রীড়া, বিনোদনমূলক, সাংস্কৃতিক জমায়েত নিষিদ্ধ থাকবে। এই সময় সমস্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান খোলা থাকলেও সেখানে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে৷ শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, করোনা কার্ফুর সময় আইন শৃঙ্খলার সাথে যুক্ত ব্যক্তি, পুরকর্মী, বিপর্যয় মোকাবিলা, আরক্ষা কর্মী, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, পানীয় জল, সাংবাদিক সহ বিভিন্ন জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। এই সময় পেট্রোল পাম্প, এল পি জি, সি এন জি ইত্যাদি পরিষেবাগুলি চালু থাকবে।
টিকাকরণ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ জানান, রাজ্যে এখন পর্যন্ত ১৮-৪৫ বছর বয়সী মোট ৯ হাজার ২৪৫ জনের টিকাকরণ করা হয়েছে। রাজ্যে ইতিমধ্যেই আরও হাজার টিকা এসে পৌঁছেছে। ১৮-৪৫ বছর পর্যন্ত ব্যক্তি যারা টিকাকরণের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন তারা করোনা কার্ফু চলাকালীন উপযুক্ত প্রমাণপত্র দেখিয়ে টিকাকরণ কেন্দ্রে যেতে পারবেন বলে মন্ত্রী শ্রীনাথ সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে জানান। তাঁর মতে, ত্রিপুরায় করোনা পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রনের বাইরে যায়নি। কিন্ত, যথেচ্ছাচারে তা নাগালের বাইরে যেতে সময় লাগবে না।