আগরতলা, ১২ মে (হি. স.)৷৷ করোনা-র শৃঙ্খল ভাঙ্গার লক্ষ্যে পুর নিগম-র ৫, ২১ এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড-কে কন্টেনমেন্ট জোন হিসেবে ঘোষণা করেছে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা প্রসাশন৷ ওই তিনটি ওয়ার্ড-র ২ কিমি ব্যাসার্ধে সমস্ত রকম গতিবিধি-তে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ শুধু মাত্র জরুরি ভিত্তি-তে কিছু পরিসেবা সচল থাকবে৷ আগামী ১৩ মে দুপুর ১২টা থেকে ২২ মে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ওই আদেশ কার্যকর হবে৷ এই সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষজনকে বলা হয়েছে যাতে প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে নেন৷ এটি শুধুমাত্র বৃহস্পতিবারের জন্যই প্রযোজ্য হবে৷ প্রসঙ্গত, এর আগে বুধবার জেলা শাসকের তরফ থেকে বিজ্ঞাপ্তিতেবলা হয়েছিল বৃহস্পতিবার সকাল পাঁচটা থেকে এই বিধি কার্য্যকর হবে৷ তবে, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কনটেনমেন্ট জোনের প্রায় সাড়ে তিনশ পরিবারকে বিনামূল্যে ফুড পেকেট সরবরাহ করা হবে৷
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় করোনা-র প্রকোপ মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে৷ বিশেষ করে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে৷ সারা ত্রিপুরায় ওই জেলায় রোজ সংক্রমিত-র সংখ্যা সর্বাধিক পাওয়া যাচ্ছে৷ উদ্বেগের বিষয় হল, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় পুর নিগম এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ আকার নিয়েছে, নৈশকালীন কারফিউ জারি করেও সংক্রমণ ঠেকানো যাচ্ছে না৷ ফলে, ওয়ার্ড ভিত্তিক কন্টেনমেন্ট জোন-র মাধ্যমে করোনা-র শৃঙ্খল ভাঙ্গার পদক্ষেপ নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার৷
আজ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক রাভেল হেমেন্দ্র কুমার আজ পুর নিগম এলাকায় ৫, ২১ এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ড-কে কন্টেনমেন্ট জোন ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে৷ বর্তমানে, পুর নিগম-র ৫ নম্বর ওয়ার্ড-এ ১১২০৪ জন, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১১৩৭৩ জন এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ১৪৪০০ জন নাগরিক রয়েছেন৷ করোনা-র সংক্রমণ থেকে পুর নাগরিক-দের রক্ষায় ওই তিনটি ওয়ার্ডে সমস্ত ধরনের গতিবিধি-তে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷ শুধু মাত্র নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী-র দোকান ভোর ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি রয়েছে৷ এছাড়া, স্বাস্থ্য দফতর এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কর্মী, আরক্ষা প্রশাসন এবং জরুরি পরিষেবার সাথে যুক্ত-দের ওই আদেশ কার্যকর হবে না৷
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক জেলা পুলিশ সুপার-কে ওই তিনটি ওয়ার্ডে দুই বা ততোধিক ব্যক্তির জমায়েত কোনভাবেই না হয় টা সুনিশ্চিত করতে বলেছেন৷ এদিকে, জরুরি পরিসেবার যুক্ত ব্যক্তি-রা কেবল সচিত্র পরিচয়পত্র দেখালেই ওই ওয়ার্ডগুলিতে প্রবেশের অনুমতি পাবেন৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহে পুর নিগম চিহ্ণিত দোকানী-র কাছ থেকে ওই ওয়ার্ডের নাগরিক-রা ক্রয় করতে পারবেন৷ এছাড়া, পুর নিগমের তরফে ওই তিনটি ওয়ার্ডে প্রতিনিয়ত স্যানিটাইজেসন করতে হবে৷
শুধু তাই নয়, করোনা-র সংক্রমণ ছড়িয়ে পরা এড়ানোর উদ্দেশ্যে প্রত্যেক বাড়ির অন্তত একজন সদস্যের নমুনা পরীক্ষা করা হবে৷ এদিকে, পানীয় জল ও স্বাস্থ্য বিধান দফতর এবং বিদ্যুত দফতর-কে ওই তিনটি এলাকায় পানীয় জল ও বিদ্যুত পরিসেবা স্বাভাবিক রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ যে কোন সমস্যা এড়াতে সংস্কারের জন্য দল প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে৷ এছাড়া, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি পালন এবং সদর মহকুমা শাসক কন্টেনমেন্ট জোন-এ ব্যারিকেড, চেক পয়েন্ট সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা শাসক৷
এদিকে, সাংবাদিক সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানান, কনটেইনমেন্ট এলাকায় বসবাসকারী প্রায় সাড়ে তিন হাজার গরীব পরিবারকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ফুড প্যাকেট দেওয়া হবে৷ ৮ প্রকার সামগ্রীর এই ফুড প্যাকেটে চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, আলু, পেঁয়াজ, সোয়াবিন, দুধ ও লবণের প্যাকেট থাকবে৷ প্রায়োরিটি হাউস হোল্ড, অন্ত্যোদয় যোজনা, এ পি এল ভুক্তদের মধ্যে যারা গরীব অংশের রয়েছেন এবং কোনওরকম ক্যাটাগরি ভুক্ত নন এমন গরীব অংশের জনসাধারণকে এই ফুড প্যাকেট দেওয়া হবে৷ তবে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত অন্ত্যোদয় যোজনা বা অন্য ক্যাটাগরিতে যারা বিনামূল্যে চাল পাচ্ছেন তারা চাল ছাড়া বাদবাকি সমস্ত সামগ্রীই পাবেন৷ শিক্ষামন্ত্রী আরও জানান, গরীব অংশের কাউকেই বাদ দেওয়া হবে না৷ তিনটি ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ৩১,৫৬৪ জন৷ এরফলে প্রায় ৫০ শতাংশ লোকই বিনামূল্যে এইসব সামগ্রী পাবেন৷
প্রসঙ্গত, যে তিনটি ওয়ার্ডে কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলির মধ্যে ৫ নং ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা গড়ে ২০ শতাংশ, ২১ নম্বর ওয়ার্ডে ১০ শতাংশ এবং ৪৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩১.৭ শতাংশ৷ অন্যদিকে, ২, ১২,২০,২৪,৩৩,৪৫ এবং ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে আক্রান্তের সংখ্যা গড়ে ৯ শতাংশ৷ ১০ শতাংশের উপরে গেলেই ওইসব ওয়ার্ডেও কনটেনমেন্ট জোন ঘোষণা হতে পারে৷

