BRAKING NEWS

জরুরি ভিত্তিতে ব্যবহারের জন্য ডিআরডিও-র তৈরি কোভিড প্রতিরোধকারী ওষুধ-এ অনুমোদন ডিসিজিআই-এর

নতুন দিল্লি, ০৮ মে ।। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য হায়দ্রাবাদের ডাঃ রেড্ডি পরীক্ষাগারের সহযোগিতায় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (ডিআরডিও)-এর আওতাধীন পরীক্ষাগার ইনস্টিটিউট অফ নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালাইড সায়েন্স (এনএমএএস) যৌথভাবে ২-ডিওক্সি-ডি-গ্লুকুজ (২-ডিজি)ওষুধ তৈরি করেছে। ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে যে এই ওষুধ হাসপতালে ভর্তি কোভিড রোগীর দ্রুত স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে সহায়তা দান করেছে এবং পরিপূরক অক্সিজেনের নির্ভরতা হ্রাস করেছে। চিকিৎসাধীন কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীকে ২-ডিজি প্রয়োগ করার ফলে দেখা গেছে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের আরটি-পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল নেতিবাচক এসেছে।এই ওষুধটি কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে যথেষ্টই উপকারী।

কোভিড অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাতে সাড়া দিয়ে ডিআরডিও যে উদ্যোগ নেয় তারই অঙ্গ হিসেবে কোভিড প্রতিরোধকারী চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য ২-ডিজি ওষুধ তৈরি করা হয়েছে। গত বছর এপ্রিল মাসে অতিমারির প্রথম ঢেউয়ের সময় আইএনএমএস-ডিআরডিও বিজ্ঞানীরা হায়দ্রাবাদের সেন্টার ফর সেলুলার অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি (সিসিএমবি)-এর সহায়তায় পরীক্ষাগারে একটি পরীক্ষা চালায় এবং তারা আবিষ্কার করেন যে ওষুধের অণুকনাগুলি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর এবং এই সংক্রমণ প্রসারের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করছে। এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই), সেন্ট্রাল ড্রাগস স্যান্ডার্স কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (সিডিএসসিও) গত বছর মে মাসে কোভিড-১৯ রোগীদের ২-ডিজি চিকিৎসার জন্য দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালে অনুমতি দেয়।

ডিআরডিও, তার শিল্প সহযোগী সংস্থা হায়দ্রাবাদের ডিআরএল-এর সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে এই ওষুধের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করে। গত বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলে। এই পরীক্ষায় দেখা গেছে যে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য এই ওষুধটি যথেষ্টই নিরাপদ এবং একই সঙ্গে রোগীর দ্রুত স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে উল্লেখযোগ্য উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে। ট্রায়ালের দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম ধাপটি ৬টি হাসপাতালে চালানো হয়। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপটি দেশের ১১টি হাসপাতালে চালানো হয়। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১১০ জন রোগীর ওপর এই ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালানো হয়।

এই ওষুধের কার্যকারীতা লক্ষ্য করে দেখা গেছে যে ২-ডিজি-র মাধ্যমে চিকিৎসা করা রোগীরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন। অন্যান্য ওষুধ প্রয়োগ করে সুস্থ হওয়ার সঙ্গে এই ওষুধ প্রয়োগে সুস্থ হওয়ার মধ্যে ২.৫ দিনের ব্যবধান থাকছে। এই উল্লেখযোগ্য সাফল্যের ভিত্তিতে ডিসিজিআই গত বছর নভেম্বরে তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের জন্য অনুমতি দেয়। গত বছর ডিসেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সহ ২৭টি কোভিড হাসপাতালে এই তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলে। তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের বিস্তারিত তথ্য ডিসিজিআই-এর কাছে উপস্থাপন করা হয়। উপসর্গ যুক্ত রোগীদের মধ্যে বেশিরভাগ রোগীদের ২-ডিজি প্রয়োগ করার ফলে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠেছেন এবং তুলনামুলকভাবে তিনদিনের মধ্যেই পরিপূরক অক্সিজেনের নির্ভরতা অনেকটাই কমে এসেছে। এক্ষেত্রে অক্সিজেন থেরাপি/নির্ভরতা থেকে রোগীদের প্রাথমিক পরিত্রাণ মিলেছে।

৬৫ বছরের বেশি বসয়ী রোগীদের ক্ষেত্রেও এই একই রকম উল্লেখযোগ্য সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে। তাই চলতি বছরের পয়লা মে ডিসিজিআই এই ওষুধটি জরুরি ভিত্তিতে গুরুতর কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহারে অনুমতি দেয়। কোভিড-১৯ অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে বিপুল সংখ্যক রোগী এখন অক্সিজেনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরছেন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হচ্ছে। এক্ষেত্রে এই ওষুধ মূল্যবান জীবন বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে। এমনকি এই ওষুধ কোভিড-১৯ রোগীদের হাসপাতালে দীর্ঘদিন ভর্তি থাকার সময়ও হ্রাস করতে সাহায্য করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *