আগরতলা, ২৭ এপ্রিল (হি. স.) ৷৷ করোনা বিধি ভঙ্গের দায়ে বিয়ে বাড়িতে ঢুকে পশ্চিমা ত্রিপুরা জেলা শাসকের অভিযানে সমালোচনার ঝড় বইছে ত্রিপুরায়৷ কারণ, প্রশাসনিক উচ্চ পদে থেকে বর, বর পক্ষ এবং পুরোহিতকে শারীরিক নিগ্রহের ঘটনায় পশ্চিম জেলা শাসক ডা: শৈলেশ কুমার যাদবের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি উঠেছে৷ ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে এক রাশ ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নেটিজেনরা৷ শুধু তাই নয়, পুলিশের আধিকারিক এবং কর্মীদের সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য অশালীন এবং অনাধিকার বলে নিন্দায় সরব হয়েছেন সকল অংশের মানুষ৷ ওই ঘটনা অনভিপ্রেত এবং অপ্রত্যাশিত বলে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন পশ্চিম ত্রিপুরা সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক৷ তাঁর কথায়, জন নিরাপত্তায় প্রশাসনের ভূমিকা প্রশংসনীয়৷ কিন্ত, গতকাল রাতে বিয়ে বাড়িতে ওই ঘটনা কোনভাবেই কাম্য নয়৷ এদিকে, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব মুখ্যসচিবের কাছে গতকালের ওই ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছেন বলে জানা গিয়েছে৷
প্রসঙ্গত, ত্রিপুরায় করোনা মোকাবিলায় নৈশকালীন কারফিউ জারি রয়েছে৷ রাত ১০টা থেকে কারফিউ জারি হয়৷ এদিকে, বিয়ের মরশুম শুরু হওয়ায় অনেকেই হল ভাড়া নিয়েছেন৷ কিন্ত, সরকারি নিয়মে বাড়িঘরে অনেক রাত পর্যন্ত বিয়েতে আপত্তি নেই প্রশাসনের৷ কিন্ত, হল ভাড়া নিয়ে বিয়ে রাত ১০টার মধ্যে সমস্ত অনুষ্ঠান সমাপ্ত করতে হবে৷ তাতেই, দেখা দিল বিপত্তি৷ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক দুইটি বিয়ে বাড়িতে ঢুকে সকলকে বের করে দেন৷ এমনকি একটি বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, দুই হল ১ বছরের জন্য সিল করার নির্দেশ দেন৷ এখানেই তিনি থেমে থাকেননি, পুলিশের সাথে অশালীন আচরণ করার সাথে পশ্চিম আগরতলা থানার ওসিকে বরখাস্ত করার প্রস্তাব করেন৷
গতকাল আগরতলায় উত্তর গেইট এলাকায় মানিক্য কোর্ট এবং গোলাপ বাগানে দুইটি বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া নিয়েছিলেন কন্যাপক্ষ৷ যথারীতি বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়৷ মানিক্য কোর্ট-এ সন্ধ্যার মধ্যে বিয়ের মূল অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়ে গিয়েছিল৷ তারপর আত্মীয় স্বজনদের খাওয়া-দাওয়ার পর্ব চলছিল৷ জানা গিয়েছে, সদূর বেনারস থেকে বর বিয়ে করার জন্য পরিবারের সাথে আগরতলায় এসেছিলেন৷ পেশায় চিকিতক ওই বর গতকাল জেলা শাসকের হাতে নিগৃহিত হয়েছেন৷ শুধু তাই নয়, সেখানে উপস্থিত মহিলা সহ শিশুরাও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসকের রক্তচক্ষুর সম্মুখীন হয়েছে৷ একই ঘটনা ঘটেছে গোলাপ বাগানে অনুষ্ঠিত বিয়ের অনুষ্ঠানে৷ পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক সেখানে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেন৷ এমনকি, খাবার টেবিল থেকে অতিথিদের তুলে দেন তিনি৷ সেখানেও তিনি বরকে ঘাড় ধরে ধাক্কা দেন৷ সাথে পুরোহিতের গলা ধরে চলে যেতে বলেন৷ বর ও কন্যা পক্ষের লোকজন তাঁকে বোঝাতে গেলে তিনি তাদের সাথেও অশালীন আচরণ করেন৷
মানিক্য কোর্ট-এ বরকে গ্রেফতার করার আদেশে তাঁর আত্মীয় এগিয়ে গিয়ে কথা বলার চেষ্টা করলে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক তাঁকে গলা ধরে ধাক্কা দেন৷ গতকাল রাতে দুইটি বিয়ে বাড়িতে একই ভাবে অভিযান চালান পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক৷ তাঁর সাফ কথা, করোনা বিধি ভঙ্গ করে এভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান চালু রাখতে দেওয়া যায় না৷ কারণ, ভবিষ্যতে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি হলে জনগনই প্রশাসনকে দোষারোপ করবেন৷ তাই তিনি দুইটি বিয়ে বাড়ি এক বছরের জন্য সিল এবং বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন৷ অবশ্য, রাতে গোলাপ বাগানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দাড়িয়ে থেকে বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছেন৷
তবে, এখানেই ঘটনা সমাপ্ত হয় নি৷ ক্ষুব্ধ জেলা শাসক পশ্চিম আগরতলা থানার ওসি এবং পুলিশ কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন৷ শুধু তাই নয় ওসিকে তিনি নিগ্রহও করেছেন৷ পুলিশ অবশ্য অত্যন্ত ধৈযর্ে্যর সাথে সমস্ত পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন৷ কারণ, আজ ভারপ্রাপ্ত পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গতকাল পশ্চিম ত্রিপুরা জেলা শাসক বেআইনি ভাবে অভিযান চালিয়েছেন৷ তাই, তাঁর নির্দেশে কাউকেই বরখাস্ত করা সম্ভব নয়৷
এদিকে, গতকালের ঘটনা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পরতেই সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে৷ বর-কনে, পুরোহিত এবং বিয়েতে আমন্ত্রিত অতিথিদের সাথে জেলা শাসকের অশালীন আচরণ কোন ভাবেই মেনে নেওয়া যায়না বলে সরব হয়েছেন নেটিজেনরা৷ তাঁদের বক্তব্য, আইনের রক্ষায় প্রশাসনিক আধিকারিকরা কোনও ভাবেই আইনের ঊধর্ে নন৷ বিধি ভঙ্গের দায়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল জেলা শাসকের৷ তার বদলে সাধারণ নাগরিকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং অশালীন আচরণ কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায়না৷
প্রদ্যুত কিশোর দেববর্মন এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, সরকারিভাবে বিয়ের হল বন্ধ করার কোন আদেশ এখনও হাতে আসেনি৷ তবুও এক বছরের জন্য ওই দুইটি বিয়ে বাড়ি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন৷ তাঁর ওই সিদ্ধান্তে সোশ্যাল মিডিয়াতে আরও আলোড়ন সৃষ্টি করেছে৷ তাঁর শুভাকাঙ্খী অনেকেই জেলা শাসকের ওই ভূমিকায় আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷ কারণ, তাঁরা চাইছেন প্রশাসনিক আধিকারিক হয়ে আইন হাতে তুলে নেওয়ায় তদন্ত ক্রমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা হোক৷
এদিকে, আজ পশ্চিম আগরতলা থানায় গিয়ে আধিকারিকদের সাথে গতকালের ঘটনা নিয়ে আলোচনা করেন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক৷ থানা থেকে বেরিয়ে সংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সকলের নিরাপত্তা প্রশাসনের দায়িত্ব৷ সেই দায়িত্ব পালনে কোন খামতি নেই৷ তবে, গতকাল রাতে বিয়ে বাড়িতে ঘটনা অনভিপ্রেত এবং অপ্রত্যাশিত৷ তিনি বলেন, স্পর্শকাতর ওই ঘটনায় তিনি সকলের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন৷