নয়াদিল্লি, ২ এপ্রিল (হি.স) : করোনাভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত ক্রমশ চিন্তা ফেলেছে ভারতকে। হু হু করে বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার। বৃহস্পতিবার সারাদিনে ভারতে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮১,৪৬৬ জন, এ বছরের মধ্যে সর্বাধিক। বিগত ২৪ ঘন্টায় সমগ্র দেশে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৬৯, মৃত্যুর সংখ্যাও সর্বাধিক। ভারতে সক্রিয় করোনা-রোগীর সংখ্যাও বাড়তে বাড়তে ৬.১৪-লক্ষের (৫ শতাংশ) গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে। সংক্রমণ বৃদ্ধির মধ্যে সেরে ওঠাও স্বস্তি দিচ্ছে, বৃহস্পতিবার সারা দিনে ভারতে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫০,৩৫৬ জন করোনা-রোগী। ফলে শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট সুস্থ হয়েছেন ১,১৫,২৫,০৩৯ জন করোনা-রোগী (৯৩.৬৮ শতাংশ)।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিগত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে নতুন করে ৮১,৪৬৬ জন কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর মোট করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১,২৩,০৩,১৩১-তে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক বুলেটিনে জানিয়েছে, বিগত ২৪ ঘন্টায় ৪৬৯ জনের মৃত্যুর পর ভারতে কোভিড-১৯ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১,৬৩,৩৯৬ জন। শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ৬ লক্ষ ১৪ হাজার ৬৯৬ জন (৫ শতাংশ), বিগত ২৪ ঘন্টার মধ্যে বেড়েছে ৩০,৬৪১ জন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে মোট ৬ কোটি ৮৭ লক্ষ ৮৯ হাজার ১৩৮ জনকে করোনা-টিকা দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৩৬,৭১,২৪২ জনকে বিগত ২৪ ঘন্টায় কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে।
ভারতে ২৪.৫৯-কোটির গণ্ডি ছাড়িয়ে গেল করোনা-পরীক্ষার সংখ্যা। শুক্রবার সকালে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, ১ এপ্রিল সারা দিনে ১১,১৩,৯৬৬ জনের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা-স্যাম্পেল টেস্ট করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভারতে করোনা-টেস্টের সংখ্যা ২৪,৫৯,১২,৫৮৭-এ পৌঁছে গিয়েছে। বিগত ২৪ ঘন্টায় ভারতে নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন ৮১,৪৬৬ জন।
থামার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, ভারতে বেড়েই চলেছে সক্রিয় করোনা-রোগীর সংখ্যা। বিগত ২৪ ঘন্টায় বেড়েছে ৩০,৬৪১ জন। বিগত ২৪ ঘন্টায় ভারতে করোনা-মুক্ত হয়েছেন ৫০,৩৫৬ জন। শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত ভারতে করোনা-আক্রান্ত ১,৬৩,৩৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে (১.৩৩ শতাংশ)। বিগত ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু হয়েছে ৪৬৯ জনের। ভারতে সুস্থতার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১,১৫,২৫,০৩৯ জন (৯৩.৬৮ শতাংশ)। বিগত ২৪ ঘন্টায় ভারতে চিকিৎসাধীন করোনা-রোগীর সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে, ৩০,৬৪১ জন বেড়ে এই মুহূর্তে ভারতে মোট ৬,১৪,৬৯৬ জন করোনা-রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন (৫ শতাংশ)।
এদিকে করোনা সংক্রমণ রুখতে পুণেতে সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কার্ফু কার্যকর করার সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। শনিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য এই কার্ফু কার্যকর থাকবে। পরের শুক্রবার ফের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় বসবে প্রশাসন। পরবর্তী পদক্ষেপ তারপরে ঠিক করা হবে। এই এক সপ্তাহ শহরে বন্ধ থাকবে শপিং মল, ধর্মীয় স্থান, পানশালা, হোটেল এবং সিনেমা হলও। শুধু চালু থাকবে হোম ডেলিভারি। ওষুধ, খাবার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলবে আগের মতোই।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের নিরিখে মহারাষ্ট্রের সবচেয়ে আক্রান্ত শহরগুলির মধ্যে মুম্বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে পুণে। বৃহস্পতিবার পুণেতে ৮ হাজার ১১ জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। বুধবারের থেকে সংখ্যা সামান্য কম হলেও আতঙ্ক তাতে কমছে না। পুণের মেয়র মুরলীধর মোহল বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ৮০ শতাংশ শয্যা করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত রাখতে বলেছেন। যদিও তিনি জানিয়েছেন, এখনও শহরে লকডাউন ঘোষণা করার মতো পরিস্থিত হয়নি। বদলে টিকাকরণ, পরীক্ষার মতো বিষয়গুলিতে জোর দিতে বলেছেন তিনি। তবে বলেছেন, ‘‘এই পদক্ষেপগুলিতে কাজ না হলে পরবর্তীতে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে পারে প্রশাসন।’’
পুণের পাশাপাশি খারাপ অবস্থা মুম্বইয়েরও। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে নতুন করে ৮ হাজার ৬৪৬ জন আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যায় যা রেকর্ড। সংক্রমণ ঠেকাতে অনেকগুলি ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। বিভিন্ন স্থান, যেমন বাসস্ট্যান্ড, শপিং মলে শুরু হয়েছে করোনার র্যান্ডম টেস্ট। যারা স্বাস্থ্যবিধি ভাঙছেন, তাঁদের কড়া জরিমানাও করছে মুম্বই পুর প্রশাসন। মুম্বইয়ের মেয়র কিশোরী পেদনেকর জানিয়েছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে শহরের হাসপাতালে শয্যার আকাল দেখা দিতে পারে।
এরমাঝে পশ্চিমবঙ্গে চলছে বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ পর্ব । তারই মাঝে দ্বিগুণ আতঙ্ক বাড়িয়ে একদিনে লাফিয়ে বাড়ল করোনা আক্রান্তের সংখ্যা । গত ২৪ ঘন্টায় পশ্চিমবঙ্গে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১২৭৪ জন। বৃহস্পতিবার এমনটাই খবর স্বাস্থ্য দফতরের তরফে প্রকাশিত বুলেটিন সূত্রে ।
স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় ১২৭৪ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৭১ হাজার ৩৪৫ জন । একদিনে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। যার জেরে করোনা আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা ১০,৩২৯। একদিনে সুস্থ হয়েছেন ৫৩৪। যার জেরে রাজ্যে সুস্থতার হার বেড়ে ৯৭.১৬শতাংশ। এখনও পর্যন্ত সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৫৩০৩। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা পরীক্ষা হয়েছে ২৫,৭৬৬ ।
মঙ্গলবার রাজ্যে করোনার নিম্নমুখী গ্রাফ স্বস্তি ফিরিয়েছিল। কিন্তু বুধবার থেকেই সেই গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। বুধবারই দৈনিক সংক্রমণ প্রায় হাজার ছুঁয়েছিল। এদিন করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৮২ জন, প্রাণ হারিয়েছিলেন ২ জন। বৃহস্পতিবার সেই সংক্রমণের হার বাড়ল আরও বেশ কয়েকগুন।রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হাজার পার করা নিয়ে রীতিমত উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞ মহল। সংক্রমণে অবিলম্বে রাশ টানতে না পারলে আরও বড় বিপদের পড়তে পারে বাংলা, আশঙ্কা তাঁদের।
পশ্চিমবঙ্গে ভোটযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই দু’দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে ৬ দফা বাকি। ফলে রাজনৈতিক দলগুলি জোরকদমে প্রচার চালাচ্ছে। সভাগুলিতে জমায়েত করছেন হাজার হাজার মানুষ। এছাড়া ট্রেনে-বাসে রীতিমতো বাদুরঝোলা হয়ে যাতায়াত করছে আমজনতা। অর্থাৎ দূরত্ব বিধি কার্যত শিকেয়! মাস্ক ছাড়াই পথে নামছেন অনেকে। আর এরই মাঝে লাফিয়ে বাড়ছে মারণ করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্যদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, একদিনে রাজ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৭৩৩ জন। তার মধ্যে ৫১৩ জনই কলকাতার। অর্থাৎ সংক্রমণের নিরিখে প্রথম স্থানে তিলোত্তমা। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়ছে সংক্রমিতের সংখ্যা। যা আতঙ্ক ছড়িয়েছে শহরবাসীর মনে। দ্বিতীয় স্থানে উত্তর ২৪ পরগনা। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত সেখানকার ৩৩১ জন। তৃতীয় স্থানে দক্ষিণ ২৪ পরগনা। সেখানে সংক্রমিত ১৭৩ জন। চতুর্থ স্থানে হাওড়া। এই একদিনে করোনা থাবা বসিয়েছে সেখানকার ১৫৯ জনের শরীরে। কালিম্পং ও ঝাড়গ্রাম বাদে বাকি সব জেলা থেকেই নতুন আক্রান্তের হদিশ মিলেছে। ফলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫, ৮৯, ৯২২। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা প্রাণ কেড়েছে রাজ্যের ৪ জনের। তাঁদের মধ্যে দু’জন কলকাতার ও বাকিরা হাওড়ার।
সংক্রমণের পাশাপাশি সামান্য হলেও বেড়েছে করোনাজয়ীর সংখ্যাও। ২৪ ঘণ্টায় করোনাকে পরাস্ত করে হাসিমুখে ঘরে ফিরেছেন রাজ্যের ৫৫০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৭৩ জন কলকাতার। অর্থাৎ সুস্থতার নিরিখেও প্রথম স্থানে তিলোত্তমা। এখনও পর্যন্ত করোনা জয় করেছেন রাজ্যের মোট ৫, ৭১, ৮৯৫ জন।

