অসমের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন মল্লিকার্জুনরা

গুয়াহাটি, ২৭ মার্চ (হি.স.) : অসমের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কংগ্রেস মহাজোট সরকার গঠন করলে যে পাঁচটি গ্যারান্টি দিয়েছে তাতে রাজ্যের জনতা বিশ্বাস রেখে বিজেপিকে ঘরে তুলতে মন বেঁধে নিয়েছেন বলে সংকেত পাচ্ছেন দলের সর্বভারতীয় এবং প্রদেশ নেতৃত্ব। দাবি করেছেন রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা মল্লিকাৰ্জুন খাড়গে।

শনিবার দলের অসম প্রদেশ সদর দফতর রাজীব ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যসভার দুই সদস্য ড. নাসির হুসেন, ড. অখিলেশ প্ৰসাদ সিং, লোকসভার সদস্য তথা অসম প্ৰদেশ কংগ্ৰেস কমিটির সংবাদ মাধ্যম তথা যোগাযোগ কমিটি চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক, নিখিল ভারত কংগ্ৰেস কমিটির মুখপাত্ৰ প্ৰফেসর গৌরব বল্লভ এবং অসম প্ৰদেশ কংগ্ৰেস কমিটির সংবাদ মাধ্যম সেলের চেয়ারপার্সন ববিতা শৰ্মাকে পাশে বসিয়ে এই দাবি করেছেন মল্লিকাৰ্জুন খাড়গে।

তিনি বলেন, অসমে বিধানসভা নিৰ্বাচনের প্ৰথম দফায় ৪৭টি আসনে ভোটগ্ৰহণ পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। এতে প্রায় সব আসনেই কংগ্ৰেস বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে বলে সংকেত পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, কংগ্ৰেস জনতার কাছে গিয়ে পাঁচটি গ্যারান্টি পূর্ণ করার অঙ্গীকার করেছে। এই গ্যারান্টিগুলো অসম তথা অসমিয়াদের ভবিষ্যতের দিশা পরিবৰ্তন প্ৰক্ৰিয়ায় নিৰ্ণায়কের ভূমিকা নেবে। যে পাঁচটি গ্যারান্টি কংগ্রেস দিয়েছে তাতে দূরদৃষ্টি এবং ইচ্ছাশক্তির প্ৰতি তাঁরা সব বয়সি জনতার কাছ থেকে অবিশ্বাস্যভাবে সাড়া পেয়েছেন, দাবি মল্লিকার্জুনের। তিনি বলেন, নির্বাচনি দৌড়ের অন্তিম পর্যায়ে এসে কংগ্রেস নেতাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে বিজেপি তিন দফার ভোট পর্ব শেষ হওয়ার আগেই পরাজয় স্বীকার করে নিয়ে। খাড়গে বলেন, প্ৰচারাভিযানে বিজেপি জোট সরকার তাদের পাঁচ বছরের কার্যকালে কাজকর্ম সম্পর্কিত প্ৰশ্নাবলির সদুত্তর দিতে পারছে না।

মল্লিকার্জুন বলেন, গত পাঁচ বছরে কতটা প্ৰতিশ্ৰুতি পূরণ করা হয়েছে সেই সব প্ৰশ্নের মুখোমুখি হওয়ার ভীতি বিজেপিকে ত্ৰস্ত করে তুলেছে। এমন-কি দলটির মূল প্ৰচার অভিযান থেকে ক্ষমতাসীন বিদ্যমান মুখ্যমন্ত্ৰী প্ৰায় অন্তৰ্ধান হয়ে গেছেন। এছাড়া পরাজয়ের আগাম সংকেত পেয়ে বিজেপি এতটাই উদ্বিগ্ন যে ‘গুজরাটি মামাও’ স্বীকার করেছেন দলটি নাকি সৰ্বানন্দ সনোয়ালের নেতৃত্বে আর সাফল্য আসবে বলে বিশ্বাস করেন না। তাই দল যদি একান্তই জয়লাভ করে তা-হলে কে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্ৰী হবেন তা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।

রাজ্যসভায় বিরোধী দলের নেতা মল্লিকাৰ্জুন খাড়গের জিজ্ঞাসা, ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্ৰীর চেহার সামনে রেখে বিজেপি কেন নিৰ্বাচনে প্ৰতিদ্বন্দ্বিতা করছে না? প্ৰয়াত তরুণ গগৈয়ের মুখকে সামনে রেখেই কংগ্ৰেস গত চারটি নিৰ্বাচনে অবতীৰ্ণ হয়েছিল। কারণ আমরা গৌরবের সঙ্গে প্রয়াত তরুণ গগৈ এবং তাঁর সরকারের সাফল্য প্ৰদৰ্শন করতে পারছিলাম। বিজেপি ১৮ শতাংশ অর্থাৎ বিদ্যমান ৬০ জন বিধায়কের মধ্যে ১১ জনকে এবার দলীয় টিকিট থেকে বঞ্চিত করেছে। নিজেরা যে সকল প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ সে-সব প্ৰতিশ্ৰুতিগুলির স্মৃতি অসমের জনসাধারণের মন থেকে দলটি মুছে ফেলতে চাইছে।  

কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা বলেন, অপশক্তি, বিদ্বেষ ছড়িয়ে অসমের গৌরব ও স্বাভিমানের ওপর দল যে মোক্ষম আঘাত করেছিল তার পরিণতিতেই জন্ম নিয়েছিল কা-বিরোধী প্ৰতিবাদ। তাপ পর বিজেপি এবার আবার অসমিয়া গৌরব এবং পরিচয়কে পদদলিত করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। তিনি বলেন, গুজরাটি মামা বলেন, অসমের নাগরিকদের আশা-আকাঙ্ক্ষার নামমাত্ৰও জ্ঞান নেই এমন দুই ব্যক্তি নাকি সিদ্ধান্ত নেবেন, কে অসমকে নেতৃত্ব দেবেন, যদি দলটি জয়লাভ করে।

তিনি আরও বলেন, কংগ্ৰেস প্ৰদত্ত পাঁচটি গ্যারান্টির প্ৰতি জনতার বিশ্বাস ও আশার জন্য বিজেপি যেহেতু চরম পরাজয়ের পূৰ্বাভাস পাচ্ছে, সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী বিজেপির মিত্ৰজোটের অন্যতম শরিক ইউনাইটেড পিপলস পাৰ্টি লিবারেল (ইউপিপিএল) প্ৰচণ্ড হতাশায় ভুগছে। তাই উগ্রপন্থী সংগঠনগুলোর আত্মসমৰ্পণকারী ক্যাডারদের নাকি স্বঘোষিত পূর্ব পদমৰ্যাদা অনুযায়ী স্থলসেনা এবং আধা-সামরিক বাহিনীতে চাকরি দেবে বলে প্ৰতিশ্ৰুতি দিচ্ছে আঞ্চলিক দলটি। তাঁর জিজ্ঞাসা, কী করে একটি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল প্ৰতিরক্ষা বাহিনীগুলিতে চাকরি দেবে প্ৰতিশ্ৰুতি দিতে পারছে? হতাশায় ভুগে মানুষকে ভোটের জন্য এ-ধরনের বিভ্ৰান্ত করার মতো কাজই হল তাদের একটি উৎকৃষ্ট পরিচয়। এ ব্যাপারে বিজেপি কেন নীরব?

এই সব ঘটনাক্রম একটি মাত্র সত্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিজেপি পরাজয় স্বীকার করে এখন মুখলজ্জা থেকে হাত ধোয়ার চেষ্টা করছে। মল্লিকার্জুন বলেন, এবারের নিৰ্বাচন হলো কংগ্ৰেসের গ্যারান্টি বনাম বিজেপির অসম্পূৰ্ণ প্ৰতিশ্ৰুতির লড়াই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *