আগরতলা, ১৯ মার্চ (হি. স.) : রাজ্য বিধানসভায় আজ ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেট পেশ করেছেন অর্থ মন্ত্রী তথা উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মণ৷ তিনি ২২৭২৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার বাজেট পেশ করেছেন৷ শতাংশের নিরিখে গত অর্থ বছরের তুলনায় ১১৮.০৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ তাতে, ঘাটতি রয়েছে ৭৭৩ কোটি ৪৩ লক্ষ টাকা৷ অর্থমন্ত্রী-র দাবি, ২০২১-২২ অর্থ বছরে বৃদ্ধিকেন্দ্রিক বাজেট পেশ করা হয়েছে৷ তাতে, পর্যটন, তথ্য ও প্রযুক্তি, কৃষি ও অন্যান্য, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা ক্ষেত্র-কে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, বাজেটে নতুন কর আরোপ করা হয়নি৷
এদিন, তিনি বিধানসভায় বাজেট পেশ করে প্রেস সেল-এ সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থ মন্ত্রী বলেন, ২০২০ পুরো বছরটি নানাহ সমস্যার মধ্যে দিয়ে কেটেছে৷ করোনা-র প্রকোপে অর্থনীতি-তে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে৷ ফলে, ২০২১-২২ অর্থ বছরের বাজেটে মানুষের কাছে অর্থ পৌছে দেওয়া সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই বাজেট তৈরি করা হয়েছে৷ তিনি বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি-কে চাঙ্গা করাই বাজেট-এ বিশেষ ভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে৷
অর্থমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়ন আরও ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে একাধিক প্রকল্পের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে৷ তাতে, রয়েছে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনা, জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয়, জৈব চাষাবাদ উতাহ দানে বায়ো-ভিলেজ, জনজাতি সংসৃকতি এবং সঙ্গীত-র সংরক্ষণ ও প্রচার, ১০ টি মোবাইল প্লেনেটেরিয়া, পুষ্পবন্ত প্রাসাদ-কে ন্যাশনাল মডার্ন আর্ট গ্যালারী স্থাপন করার প্রস্তাব৷
সেই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, উতর্ষ বৃদ্ধির জন্য বিদ্যালয়, মুম্বাইতে খারগার এলাকায় নতুন ত্রিপুরা ভবন নির্মাণ, প্রত্যেক দফতরের জন্য নির্দিষ্ট ভবন নির্মাণ, নতুন পুলিশ মুখ্য কার্যালয় ভবন নির্মাণ, মুখ্যমন্ত্রী পুষ্প উদ্যান প্রকল্প, প্রধান সমাজপতিদের মাসিক ২০০০ টাকা সান্মানিক প্রদান এবং মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন স্থাপন-র জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে৷
প্রসঙ্গত, উপমুখ্যমন্ত্রী তথা অর্থ দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা আজ বিধানসভায় ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য ২২৭২৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকার ব্যয় বরাদ্দের প্রস্তাব পেশ করেছেন৷ বাজেট বক্তব্যে উপমুখ্যমন্ত্রী ২০২০-২১ অর্থবছরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কাজ ও সাফল্য এবং আগামী আর্থিক বছরে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কাজের প্রস্তাবের কথাও তুলে ধরেছেন৷
আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট পেশ করতে গিয়ে উপমুখ্যমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতেই কোভিড-১৯ অতিমারির কথা তুলে ধরেন৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বাজেট এমন একটা পরিস্থিতিতে প্রস্তুত করা হয়েছে যখন কোভিড-১৯ অতিমারি সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করেছে এবং যার প্রভাব সমগ্র বিশ্বের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলেছে৷ এর ফলে প্রত্যেক দেশই কম বেশি অর্থনৈতিক মন্দার শিকার হয়েছে৷ বাজেট ভাষণে উপমুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনার মতো প্রকল্প চালু করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র ভাই মোদিকে ধন্যবাদ জানান৷ এই প্রকল্পের আওতায় ৮০০ মিলিয়ন জনগণকে বিনামূল্যে খাদ্যশস্য, ৮০ মিলিয়ন পরিবারকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস সরবরাহ করা হয়েছে৷ এই অতিমারির সময় ৪০০ মিলিয়নের বেশি ব্যক্তির কাছে সরাসরি অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে৷ আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ ঘোষণা করার জন্যও তিনি ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানান৷ যেখানে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার শিকার সেখানে ভারতবর্ষের অর্থনীতির ভারসাম্য বজায় রাখতে আত্মনির্ভর ভারত প্যাকেজ বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাদের দেশ ইতিমধ্যেই দুটি প্রতিষেধক আবিষ্কার করেছে৷ সমগ্র দেশে টিকাকরণ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হয়েছে৷ অতিমারির পর ভারতে জিডিপি বৃদ্ধির হার নেতিবাচক হবে বলে বিভিন্ন মহল থেকে আশঙ্কা করা হয়েছিল৷ কিন্তু আই এম এফক্ষ্মএর রিপোর্ট অনুসারে ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ১১.৫০ হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ তাছাড়া অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কোপারেশন অ্যাণ্ড ডেভেলপমেন্টের সমীক্ষা অনুসারে ২০২১-২২ অর্থবছরে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার ১২.৬০ গিয়ে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, অতিমারির সময় সৃষ্ট সমস্যা কাটিয়ে উঠতে রাজ্য সরকার ৫.৭৯ লক্ষ এন এফ এস এ পরিবারকে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১৩,২৪০ এমটি চাল বিনামূল্যে সরবরাহ করেছে৷ এছাড়াও ৫০,০০০ চিহ্ণিত গরীব এপিএল পরিবারকে বিনামূল্যে দুই মাসের নির্ধারিত চাল সরবরাহ করেছে৷ তাছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে প্রতি পরিবারপিছু ১,০০০ টাকা করে এককালীন নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে৷ এ পর্যন্ত ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে ৪৪,০৯৩ গরীব এপিএল পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ৪.৪১ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে৷ করোনা অতিমারির সময়ে যখন কিছু কিছু রাজ্য সরকার কর্মচারীদের কম বেতন দিতে বাধ্য হয়েছে এবং মহার্ঘ্যভাতা স্থগিত রেখেছে সেখানে রাজ্য সরকার কর্মচারী ও পেনশনারদের জন্য ৩ ডি এ / ডি আর দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে, যা ২০২১ সালের ১ মার্চ থেকে কার্যকর হয়েছে৷
উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য রাজ্য সরকারের তরফ থেকে কয়েকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ঘোষণা করেন৷ তিনি জানান, নতুন প্রকল্পগুলির মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মডেল ভিলেজ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়নকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলা এবং স্থানীয় প্রশাসনকে ঢেলে সাজানো৷ যা দেখে পার্শ্ববর্তী গ্রাম প’ায়েত / ভিলেজ কমিটি অনুপ্রাণিত হতে পারে৷ এই প্রকল্পে চিহ্ণিত গ্রাম প’ায়েত / ভিলেজ কমিটির ব্যাপক উন্নয়ন হবে এবং যার অঙ্গ হিসেবে সেখানে বসবাসকারী সমস্ত অংশের মানুষের জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটবে৷ আমোদপ্রমোদের ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়ন, মানব সম্পদের উন্নয়ন যেমন ঘটবে তেমনি উৎপাদনের পরিমাণ বাড়বে, বাড়বে জীবিকা নির্বাহের উপায়৷ একজন বিধায়ক তার নির্বাচনী এলাকা থেকে ২০২১ সাল থেকে শুরু করে তিন বছরের উন্নয়ন কাজের জন্য একটি পিছিয়েপড়া অথবা তার পছন্দ অনুযায়ী কোনও গ্রাম প’ায়েত / ভিলেজ কমিটিকে বেছে নেবেন৷ এই প্রকল্প শুধুমাত্র গ্রামীণ এলাকার জন্যই সীমাবদ্ধ থাকবে৷ এই প্রকল্প ৩ পর্যায়ে কার্যকর করা হবে৷ যার প্রথম পর্যায় হবে ২০২১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ৩১ জলাই, দ্বিতীয় পর্যায় ২০২১ সালের ১ সেপ্ঢেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২৮ ফেবয়ারি এবং ত’তীয় পর্যায় হবে ২০২২ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের ২৮ ফেবয়ারি পর্যন্ত সময়ে৷ রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সমন্বয়ে এই প্রকল্পের কাজ করা হবে এবং এরজন্য প্রয়োজন হবে ১৩.১০ কোটি টাকা৷ এই অর্থরাশি ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ অর্থবছরের রাজ্য বাজেট থেকে বরাদ্দ করা হবে৷ দ্বিতীয়টি হলো মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর পরিবার যোজনা৷ রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতিকল্পে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মানুষ তার বাড়িঘরের চাহিদা পূরণে যাতে আত্মনির্ভর হতে পারেন এবং রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন যাতে আরও ত্বরান্বিত হয় সেই লক্ষ্যে এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে৷ ২০২১-২২ থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে ৬.০ লক্ষ গ্রামীণ পরিবারকে এই প্রকল্পের আওতায় আনা হবে যার মধ্যে ১.৫০ লক্ষ পরিবার মৎস্য দপ্তর থেকে, ১.২৩ লক্ষ পরিবার প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তর থেকে এবং অবশিষ্ট পরিবারগুলি ক’ষি / উদ্যান চর্চা / বন দপ্তর থেকে সহায়তা পাবেন৷ এই প্রকল্পের জন্য ১১৭.৩৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ ধরা হয়েছে, যার মধ্যে ৬৯.৮৪ টাকা রাজ্য বাজেট থেকে মেটানো হবে৷ নতুন ঘোষিত চিফ মিনিস্টার্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাণ্ড প্রকল্পে পরিকাঠামোগত উন্নয়ন বাড়ানোর লক্ষ্যে ও রাজ্যের পরিকাঠামোগত চাহিদার ক্ষেত্রে যে ঘাটতি থাকবে তা পূরণ করার লক্ষ্যে এই ফাণ্ড গঠন করা হয়েছে৷ চলতি বছরের বাজেটে এরজন্য ২০০.০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে৷ অনারেরিয়াম টু প্রধান সমাজপতি প্রকল্পে জনজাতি সমাজের প্রধান সমাজপতিদের সাম্মানিক ২,০০০ টাকা করে মাসিক ভাতা প্রদান করা হবে৷
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, এস্টাব্লিশমেন্ট অব সুকল অব এি’লেন্স প্রকল্পে আগরতলার হেনরি ডিরোজিও একাডেমি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে পুনের দক্ষনা ফাউণ্ডেশনের সহযোগিতায় সুকল অব এি’লেন্স স্থাপনের প্রস্তাব করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে ১০০ রোস্টার মেনে ১০০ জন ছাত্রছাত্রীকে প্রত্যেক বছর বি’ান বিভাগে দ্বাদশ শ্রেণীতে ভর্তি করা হবে৷ ইি’নীয়ারিং, মেডিক্যাল এবং অন্যান্য কোর্সে ভর্তির লক্ষ্যে জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় বসার জন্য তাদের কোচিং দেওয়া হবে৷ স্টেট কাউন্সিল ফর এডুকেশন রিসার্চ ্যণ্ড ট্রেনিং কমপ্লেে’ বালক এবং বালিকাদের জন্য পৃথক হোস্টেল চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে৷ ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক সহ শিক্ষা সামগ্রী, খাদ্য এবং থাকার ব্যবস্থা করা হবে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী জানান, নতুন প্রকল্পের মধ্যে আরেকটি হলো অ্যাসিস্টেন্স ফর ট্রেডিশনাল মিউজিক্যাল ইনস্ট্রমেন্টস টু প্রোমোট ট্রাইবাল কালচার৷ ত্রিপুরা জনজাতি সাংস্ক’তিক ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে জনজাতি শিল্পীরা যাতে চিরাচরিত বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করতে পারেন সেজন্য এককালীন আর্থিক সহায়তা করা হবে৷
জনজাতিদের ঐতিহ্যবাহী সংস্ক’তিকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ক্রয় করার জন্য ৩০.০০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কার প্রাপকদের সংবর্ধনা দেওয়ার জন্য ২০.০০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে৷ তিনি বাজেট বক্তব্যে বলেন, পেশাদারী আইন শিক্ষা, গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের গুণগতমানকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে আগরতলায় একটি জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের সঙ্গে এ বিষয়ে ইতিমধ্যেই যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে৷ মুম্বাই-এর টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে যে সব রোগী এবং তাদের আত্মীয়স্বজন চিকিৎসার জন্য যান তাদের থাকার সুুবিধার জন্য হাসপাতালের কাছাকাছি মুম্বাই-এর খারঘর এলাকায় একটি নতুন ত্রিপুরা ভবন স্থাপন করা হবে৷ একই কমপ্লেে’ বিভিন্ন দপ্তর একসাথে কাজ করার লক্ষ্যে নতুন অফিস ভবন নির্মাণ করা হবে৷ প’দশ অর্থকমিশন এজন্য ১০০.০০ কোটি টাকা বরাদ্দের সুুপারিশ করেছে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, মুখ্যমন্ত্রী পুপ উদ্যান প্রকল্পে ২২৯ হেক্টর উন্মক্ত জমি ফুল চাষের আওতায় আনা হবে৷ আগামী ৩ বছরে ফুলচাষিরা যাতে ১০০.০০ কোটি টাকা আয় করতে পারে সেই লক্ষ্যে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে৷ উল্লেখ্য, এখন ফুল চাষ করে বার্ষিক আয় হচ্ছে ৬.২০ কোটি টাকা৷ মুখ্যমন্ত্রী রাবার মিশন প্রকল্পে জনজাতিদের দ্রত আর্থিক উন্নয়ন ও জমির যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে রাজ্য সরকার আগামী পাঁচ বছরে ৩০,০০০ হেক্টর লাকায় রাবার প্ল্যান্টেশনের পরিকল্পনা নিয়েছে৷
বাজেট ভাষণে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, ক’ষকদের আয় দ্বিগুণ করা বর্তমান সরকারের লক্ষ্য৷ ২০২২ সালের মধ্যে ক’ষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ৩ বছরের একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷ ক’ষিক্ষেত্রের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মহকুমায় ১৯ ক’ষক বন্ধ কেন্দ্র খোলা হয়েছে৷ চলতি অর্থবছরে রাজ্যে অতিরিক্ত ১৫,০০০ হেক্টর ছমি জৈব চাষের আওতায় আনা হবে৷ প্রাক’তিক বিপর্যয় থেকে ক’ষকদের রক্ষা করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনার আওতায় আরও বেশি সংখ্যক ক’ষককে আনার জন্য রাজ্য সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে৷ ক’ষি সামগ্রী কেনার লক্ষ্যে ক’ষকদের স্বল্প মেয়াদি ঋণের চাহিদা পূরণের জন্য কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে৷ উৎপাদনের পর ক’ষকরা যাতে ফসলের সঠিক মূল্য পায় সেই লক্ষ্যে সহায়ক মূল্যে ধান কেনার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে৷ শুরু থেকে ৩৪,৫৭৪ জন ক’ষকের কাছ থেকে নূ্যনতম সহায়ক মূল্যে ৫৯,৯৮২ এমটি ধান কেনা হয়েছে৷ ক’ষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে এই খাতে ১০৭.৬৯ কোটি ঝাকা প্রদান করা হয়েছে৷ চলতি অর্থবছরে ২০,০০০ এমটি ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে৷ এতে ক’ষকদের আয় হবে ৪৪.২৪ কোটি টাকা৷ প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্পের সুুযোগ গ্রহণ করে ত্রিপুরার ক’ষকগণ বিশেষ করে ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক চাষিরা দারুণভাবে উপক’ত হয়েছেন৷ এই প্রকল্পে ২,২৮,০০০ জন ক’ষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৭২ কোটি ঝাকা সরাসরি দেওয়া হয়েছে৷ ২০২১-২২ অর্থবছরে এস আর আই দ্ধতিতে ৫৫,০০০ হেক্টর ছমি সংকর প্রজাতির ধান, ১৭,৪০০ হেক্টর সংকর প্রজাতির ভু-া চাষের, ৫,০০০ হেক্টর জমি ক্লাস্টার ভিত্তিতে সরিষার প্রদর্শনীমূলক চাষ এবং ১৯,০০০ হেক্টর জমি জৈব চাষের আওতায় আনা হবে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুধ, মাংস ও ডিমের উৎপাদন বাড়ানোর মধ্য দিয়ে গ্রামা’লে বসবাসরত মানুষের আয় বাড়ানোর এবং তাদের স্বনির্ভর করে তোলার জন্য রাজ্য সরকার উদ্যোগ নিয়েছে৷ ডেয়ারি ফার্মের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ৫ জেলায় মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্প চালু করা হয়েছে৷ ২০২১-২২ অর্থবছরে নর্থ-ইস্ট কাউন্সিলের আর্থিক সহায়তায় পেঁচারথলে মডার্ন অ্যাবাটর ফর পিগ কাম পর্ক প্রসেসিং প্ল্যান্ট শ্াপনের প্রস্তাব রয়েছে৷
এছাড়াও ন্যাশনাল লাইভস্টক মিশনের আওতায় সিপাহীজলা জেলার বিশ্রামগে’র আওতাধীন আরেকটি পিগ বিডিং ফার্ম স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে মাছের উৎপাদন বাড়ানোর দিকে রাজ্য সরকার নজর দিয়েছে৷ রাজ্য সরকার ১৩,৫৬৭ জন মৎস্যজীবি, ৩১২টি স্ব-সহায়ক দল এবং সমবায় সমিতিকে সহায়তা করেছে৷ ১৬১৪.৪৬৪ হেক্টর ওয়াটার এরিয়া এই সহায়তার আওতায় এসেছে৷ ১৩.৩৩ হেক্টর নতুন জলাশয় সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ১,২৫০ জন মৎস্যজীবীকে ঋণ দেওয়া হয়েছে৷ এস সি এ টু এস সি এস পি প্রকল্পে ৩৫৮৬ জন মৎস্যজীবিকে চিহ্ণিত করা হয়েছে৷ তাদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে৷ তাছাড়াও তপশীলি জাতি সম্পদায়ভুক্ত ১৬০ জন মৎস্যচাষীকে বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছচাষের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্য সরকার গ্রামীণ ও ক্ষুদ্র শিল্প এবং এর পাশাপাশি মাঝারী ও বৃহৎ শিল্পের উন্নয়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এতে শুধু রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নই হবেনা, রাজ্যের বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুুযোগ সৃষ্টি হবে৷
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন শিল্প ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পর্কিত পরিকাঠামো সমগ্র রাজ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে৷ পশ্চিম ত্রিপুরার বোধজংনগরে শিল্পের পরিকাঠামো এবং খয়েরপুরে আর কে নগর ইণ্ডাষ্ট্রিয়াল গ্রোথ সেন্টারকে আরও উন্নত করা হচ্ছে৷ আখাউড়া ইন্টিগ্রেটেড চেকপোষ্ট এবং সোনামুড়ার ল্যাণ্ড কাষ্টমস স্টেশনের উন্নত পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ব্যবসা বাণিজ্যের পরিমাণ যেখানে ছিল ৩৯০.৬৮ কোটি টলকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৬৭৫.০০ কোটি টাকা৷
ত্রিপুরা থেকে রপ্তানীর পরিমাণও এই সময়ে অনেক বেড়েছে৷ ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রপ্তানীর পরিমাণ যেখানে ছিল ৬.৪৬ কোটি টলকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০.৩৪ কোটি টাকায়৷ ইন্টিগ্রেটেড চেকপোষ্ট এবং সাবমের ল্যাণ্ড কাস্টমস স্টেশন ভবিষ্যতে উত্তর পূর্বা’লের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত স্থলবন্দরে পরিণত হতে চলেছে৷ আগরতলা-আখাউড়া রেল লাইনের জংশন নিশ্চিন্তপুরে আরেকটি আইসিপি স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে৷ এখন যে সমস্ত বর্ডার হাট রয়েছে সেগুলির পাশাপাশি ধর্মনগর এবং কমলপুরে ২ নতুন বর্ডারহাট গড়ে তোলা হচ্ছে৷ সাবমে স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে, যা আমদানী ও রপ্তানীর পরিধিকে আরও সম্পসারিত করবে৷ ফেনী নদীর উপর নির্মিত মৈত্রী সেতু চ-গ্রাম বন্দরকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রপথে ত্রিপুরার সাথে অন্যান্য দেশের সম্পর্ক স্থাপন করবে৷ এই সেতু ব্যবসা-বাণিজ্যের যেমন শ্রীবৃদ্ধি ঘটাবে তেমনি রাজ্যের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আরও ত্বরান্বিত করবে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, স্কিল ডেভেলপমেন্ট অ্যাণ্ড ক্যাপাসিটি বিল্ডিং-এর মাধ্যমে স্ব-উদ্যোগী হওয়ার সুুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০২০-২১ অর্ত্নবছরে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা ২.০-এন অধীনে ৮৯২৩ জত্রকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ এছাড়া প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা ৩.০-এ আরও ৮০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে৷
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে পর্যটকদের আসার সংখ্যা যে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা রাজ্যবাসী প্রত্যক্ষ করেছেন৷ রাজ্যে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্য যেমন বাঁশবেত, হস্তহাঁত, এথনিক ফুডের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে৷ যা রাজ্যের আর্থিক উন্নতিতেও সহায়ক হবে৷ পর্যটকদের আরও ভাল পরিষেবা দেওয়ার জন্য পর্যটন দপ্তরের পরিকাঠামো পিপিপি ধাঁচে নিয়ে যাওয়া হবে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, ক’ষকদের আয় দ্বিগুণ করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে প্রক’ত চাষযোগ্য জমি সেচের আওতায় আনা হচ্ছে৷ তাতে ফসলের উৎপাদন অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে৷
বর্তমানে রাজ্যের মোট ক’ষিযোগ্য জমির ৪৬ জমিতে সেচ ব্যবস্থা সুুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে৷ সেচের সম্ভাবনা বাড়াতে চিফ মিনিস্টার্স অ্যাসুুরড ইরিগেশন প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্প রূপায়ণ করা হচ্ছে৷ এই প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে আরও ৫৬০০০ হেক্টর চাদ্রযোগ্য জমি সুুনিশ্চিত সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে৷ তাতে প্রায় ৭০ চাষযোগ্য জমি সেচের আওতায় আসবে৷ রাজ্যের প্রতিটি বাড়িতে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে৷ অটল জলধারা মিশন প্রকল্পে রাজ্যের সব বাড়িতে বিনামূল্যে ফাঙ্কশনাল হাউসহোল্ড টেপ ওয়াটার কানেকশন পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে৷ ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে সব বাড়িতে পানীয়জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে৷ উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার অন্যান্য স্টেট হাইওয়েজ এবং গ্রামীণ সড়ক তৈরিতে গুরুত্ব দিয়েছে৷ সব ঋতুতে চলার উপযোগী সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে রাজ্যের সমস্ত প্রান্তিক এলাকাকে জড়ে দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে এবং আরও ২২ আর সি সি বিজ তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে৷
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকার বিদ্যৎ ক্ষেত্রের উন্নয়নে বিশেষ প্রাধান্য দিয়েছে৷ ২০২০-২১ অর্থবছরে ত্রিপুরা পাওয়ার জেনারেশন আপগ্রেডেশন অ্যাণ্ড ডিস্ট্রিবিউশন রিলায়াবিলিটি ইমপ্রভমেন্ট প্রজেক্টে ২২০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার বরলদ্দ করেছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক৷ সূর্যমনিনগর সাব স্টেশন ১৩২ কেভি থে:ক ৪০০ কেভি-তে উন্নীতকরণে জন্য ব্যয় হবে ১৭১.৩৮ কোটি টাজ্রা৷ ভারত সরকারের মিনিস্ট্রি অব ডোনার ১২০.৮৮ কোটি টাজ্রা ম’র করেছে৷ তাতে ভবিষ্যতে ত্রিপুরা গ্রীড থেকে বাংলাদেশে বিদ্যৎ সরবরাহে ইনক্রিজ লোড ডিমাণ্ড মেটাতে সহায়ক হবে৷ কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তায় রাজ্য সরকার গ্রামীণ এবং প্রত্যন্ত এলাকায় সর্বাধিক পরিবারে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রামজ্যোতি যোজনা এবং প্রধানমন্ত্রী সহজ বিজলি হর ঘর যোজনা (সৌভাগ্য) প্রকল্পে ১১৬৬.৫১ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে৷ তাতে গ্রামে এবং দূরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বহু মানুষ উপক’ত হচ্ছেন৷
উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক লক্ষ্য হিসেবে সমস্ত রাজ্যবাসীর কাছে গুণগতমানসম্পন্ন এবং সাশ্রয়ী স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে রাজ্য সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর একটি স্পেশালিটি সহ ৬ স্টেট হসপিটাল, ৬ ডিস্ট্রিক্ট হসপিটাল, ১২ সাব ডিভিশন্যাল হসপিটাল, ২৩ কমিউনিটি হেলথ সেন্টার এবং ১১৫ প্রাইমারি হেলথ সেন্টার, ৭ ইউপিএইচসিস এবং ১০০১ হেলথ সাব সেন্টারের মাধ্যমে রাজ্যবাসীর কাছে হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস, ইমার্জেন্সি সার্ভিসেস এবং প্রিভেনটিভ সার্ভিসেস দিচ্ছে৷ ধলাই জেলা হাসপাতালে একটি ট্রমা কেয়ার ফ্যাসিলিটি (লেভেল-৩) নির্দ্দাণ কাজ শেষ হয়েছে৷ ধর্মনগরে উত্তর ত্রিপুরা জেলা হাসপাতালে, উদয়পুরের তেপানীয়ায় গোমতী জেলা হাসপাতালে এবং শান্তিরবাজারে দক্ষিণ জেলা হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার ফ্যাসিলিটি (লেভেল-৩) নির্দ্দাণের কাজ, এজিএমসি এবং জিবিপি হাসপাতালে সুুপার স্পেশালিটি ব্লক, কুদ্দারঘাট, পানিসাগর এবং করবুকে কমিউনিটি হেলথ সেন্টার ৫০ শয্রা বিশিষ্ট মহকুমা হাসপাতালে উন্নীতকরণের কাজ চলছে৷ সাবমে ১০০ শয্যার মহকুমা হাসপাতাল, বিলোনীয়া মহকুমা হাসপাতাল এম সি এইচ উইং নির্মাণ, স্টেট ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরোটরি উন্নষতকরণ এবং ধলাই ত্রিপুরার ছৈলেংটায় লংতরাইভ্যালী মহকুমা হাসপাতালের উন্নীতকরণের কাজ চলছে৷ আই জি এম হাসপাতালের জি৭ ভবন, ক্যান্সার হাসপাতালের ভবন, এজিএমসি-র নতুন টিচিং হসপিটাল ব্লক-২, আই জি এম হাসপাতালের নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং এডমিনিস্ট্রেটিভ ব্লক, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে এজিএমসি এবং জিবিপি হাসপাতালের জয়ন্তী ব্লক পুনর্নবীকরণ করে ডেডিকেটেড কোভিড হসপিটাল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে এবং চালু করা হয়েছে৷
উন্নত পরিসরে মান্দাই পিএইচসি ভবন, চেলাগাঙ পিএইচসি-র নতুন ভবন এবং স্টাফ কোয়ার্টার, বোরাখা পিএইচসি-র নতুন ভবন, তিলথৈ পিএইচসি-র ২০ শয্যা বিশিষ্ট নতুন ভবন, দক্ষিণ জেলা হাসপাতালের নতুন সি এম ও অফিস ভবন, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার রাজনগরে উন্নত পরিসরে ৩০ শয্যার সিএইচসি ২০২০-২১ অর্থবছরে চালু করা হয়েছে৷ পশ্চিম ত্রিপুরার হেজামারা এবং বিদ্যা দেববর্মা মেমোরিয়্যাল পিএইচসি, দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার মনুঘাট ও রাধানগর পিএইচসি এবং ধলাই জেলার জমথাং পিএইচসি ১০ শয্যল বিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে৷
বাজেট ভাষণে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার ত্রিপুরার জনজাতি অংশের জনগণের আর্থ-সামাজিক, ভাষাগত ও সাংস্ক’তিক উন্নয়নের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ৷ রাজ্য সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে ত্রিপুরার প্রত্যন্ত অ’লে বসবাসকারী নাগরিকদের কল্যাণ এবং প্রত্যন্ত জনজাতি এলাকার ছাত্রছাত্রীদের গুণগত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা৷ ৭ একলব্য মডেল আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণের কাজ শীঘই শুরু হবে৷ জনজাতি ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাগত মানদণ্ড উন্নত করতে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে৷ আবাসিক ছাত্রাবাস/ ছাত্রীবাসগুলিতে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মিশন মোডে একটি বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে৷ সাধারণত সরকারি বিদ্যালয়গুলির প্রকল্প ইনফরমেশন টেকনোলজির মাধ্যমে মনিটর করা হবে৷ পরিকাঠামো উন্নয়ন যেমন বায়োমেট্রিক অ্যাটেনডেন্স, সিসিটিভি, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং, লাইফ স্কিল ট্রেনিং ও অন্যান্য শিশু সুুরক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে৷ মেধাবী দরিদ্র এসটি ছাত্রছাত্রীদের এককালীন ১.০০ লক্ষ টাকল সহায়তা দেওয়া হবে৷ এস এস সি, আই বি পি এস, টি পি এস সি, ইউ পি এস সি, আর আর বি, টি ই টি ইত্যাদি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য এস টি ছাত্রছাত্রীদের ইনসেনটিভভিত্তিক কোচিং দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে৷ ত্রিপুরার এস টি ছাত্রট্টাত্রীদের সুুবিধার্থে মেঘালয়ের শিলং-এ হোস্টেল নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে৷ পূর্ববর্তী সরকার আর ও এফ টি অ্যাক্ট, ২০০৬-এর অধীন প্রায় ১.৩০ লক্ষ পা-া প্রদান করেছিল কিন্তু বহু পা-া প্রাপকদের জমির সীমানা নির্ধারিত করা হয়নি৷ কিন্তু এখন রাজ্য সরকার জিপিএস নির্ভর হস্তচালিত ডিভাইস-এর মত প্রযুক্তি ব্যবহার করে জমির সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নিয়েছে৷ তাদের রেকর্ড অব রাইটসে পা-ার বিস্তারিত বিবরণও থাকবে৷ জম চাষিদের চাষ পদ্ধতিকে পুনর্বিন্যাস করতে বাজারজাতকরণের সুুবিধা সহ সাস্টেনেবল অর্গানিক ফার্মিং-এ অন্তর্ভক্ত করার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হবে৷ তাতে জমিয়াদের জীবনযাপনের ধরণ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন আসবে৷ রাজ্য সরকার জনাজতি সম্পদায়ের শিল্প ও সংস্ক’তির সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে৷ সেই লক্ষ্যে রাজ্য সরকার ভারত সরকারের জনজাতি বিষয়ক মন্ত্রকের কাছে ৩৫১১.০০ লক্ষ টাকার একটি প্রকল্পের প্রস্তাব জমা দিয়েছে৷ এই প্রস্তাব লেম্বছড়াতে মিউজিয়াম সহ ট্রাইবাল রিসার্চ অ্যাণ্ড কালচারাল ইনস্টিটিউট-এর অফিস কমপ্লে’ নির্মাণ, ফুড কোর্ট, ১৯ জনজাতি সম্পদায়ের জন্য কুটির নির্মাণ এরজন্য বরাদ্দ ধরা রয়েছে৷ সেজন্য লেম্বছড়াতে ১০.০১ একর জমি চিহ্ণিত করা হয়েছে এবং ট্রাইবাল রিসার্চ অ্যাণ্ড কালচারাল ইনস্টিটিউট-কে বন্দোবস্তও দেওয়া হয়েছে৷ ভারত সরকার এখন পর্যন্ত এই কাজে প্রশাসনিক ভবন ও বাউণ্ডারি ওয়াল নির্মাণের জন্য ৪৬১.০৪ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে৷ বাজেট প্রস্তাব পেশ করে উপমুখ্যমন্ত্রী বলেন, সরকার সবকা সাথ সবকা বিকাশ ও সবকা বিশ্বাসকে পাথেয় করে রাজ্যকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছে৷ খুব সহসাই ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা ও আত্মনির্ভর ত্রিপুরাতে পরিণত হবে৷