তেরঙার সামনে সব কিছুই ফিকে : আর কে সিনহা

প্রজাতন্ত্র দিবসে গোটা দেশের প্রতিটি কোণে কোণে যখন আবালবৃদ্ধবনিতা জাতীয় পতাকার সামনে দাঁড়িয়ে স্যালুট করছিলেন, তখন রাজধানীতে তথাকথিত আন্দোলনকারীরা লালকেল্লার ভিতরে ঢুকে গিয়ে ঠিক সেই স্থানে কৃষক সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করেন, যেখানে প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী তেরঙা উত্তোলন করেন। লালকেল্লায় তেরঙা ছাড়া অন্য কোনও পতাকার কোনও স্থান থাকতেই পারে না। যাঁরা এমন দুঃসাহস দেখিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তি হওয়া উচিত। তথাকথিত কৃষকরা তেরঙাকে অপমান করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। এ বিষয়ে কিন্তু, কেনোর কোনও স্থান নেই। ক্ষমা করবেন জাতীয় পতাকাকে অবমাননা করার স্পর্ধা শুধুমাত্র ভারতেই সম্ভব। আপনাদের হয়তো মনে আছে কয়েক বছর আগে কর্ণাটকের সিদ্দারামাইয়া সরকার রাজ্যের পৃথক পতাকার দাবি জানিয়েছিলেন। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট অবস্থান জানিয়ে দিয়েছিল।


একটু ভাবুন দেশের একটি জাতীয় দলের সরকার দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর সঙ্গে খেলা করার সাহস দেখাচ্ছে। সিদ্দারামাইয়া তখন বলেছিলেন, দেশের সংবিধানে কী এমন কোনও বিধি রয়েছে যা রাজ্যকে নিজস্ব পতাকা রাখতে বাধা দেয়?

তেরঙা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক
ভারত একটি দেশ, কোনও দেশের দু’টি পতাকা থাকতে পারে না। যদিও ফ্ল্যাগ কোড কোনও রাজ্যকে পৃথক পতাকা রাখার অধিকার দেয় না। তেরঙা দেশের ঐক্য, অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক। তেরঙা গোটা দেশকে আবেগের সঙ্গে আবদ্ধ করে। যারা তেরঙাকে অপমান করেন তারা মনে রাখবেন ভারত কখনই এই সব মেনে নেবে না। ভারতের ১৩৫ কোটি জনগণ দেশের ঐক্য ও অখণ্ডতার বিষয়ে সর্বদা একসঙ্গে। একটু পিছনের দিকে ফিরে দেখা যাক। ১৯৫৩ সালের ২৮ মে পর্বতারোহী তেনজিং নোরগে এবং নিউজিল্যান্ডের স্যার এডমন্ড হিলারি বিশ্বের সর্বোচ্চ মাউন্ট এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছিলেন। এভারেস্টে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তেনজিং নোরগে তেরঙা উত্তোলন করেছিলেন।


 সেই ছবি দেখে ভারতের বহু প্রজন্ম রোমাঞ্চিত হয়েছে। তেনজিং নোরগে নেপালে জন্মেছিলেন, তবে তিনি ছোট থেকেই দার্জিলিংয়ে বসবাস শুরু করেছিলেন। ভারত কী সেই সব ভুলতে পারে? একসময় ভারতের দুর্দান্ত টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ বলেছিলেন, যখন তিনি খেলতে গিয়ে দর্শকদের হাতে তেরঙা দেখেন, তখন তাঁর জয় বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ১৯৪৭ সালের ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত ভারতীয় গণপরিষদের বৈঠকে দেশের তেরঙা বর্তমান স্বরূপে গৃহীত হয়েছিল। দেশবাসীর আবেগ তেরঙার অবমাননায় গোটা দেশ ক্ষুব্ধ। এখন সকলেই দোষীদের কঠোর শাস্তি চাইছেন। বিষয়টি শুধুমাত্র তেরঙা অপমানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। জাতীয় সংগীত সম্পর্কেও আমাদের দেশে ভিন্নমত পোষণ করা হয়। কিছু অস্বচ্ছল মানুষ এর আগে সংশোধন করারও চেষ্টা করেছে। জাতীয় সংগীত কী সংশোধন করা সম্ভব? জাতীয় সংগীতে অধিনায়কের স্থানে কী মঙ্গল শব্দ হওয়া উচিত? সিন্ধু শব্দের স্থানে জাতীয় সংগীতে আর কোনও শব্দ যুক্ত করা যায়? সিন্ধু শব্দটি এই কারণে অপসারণের দাবি উঠেছিল যেহেতু সিন্ধু এখন ভারতের অংশ নয়। ২০০৫ সালে সঞ্জীব ভাটনগর নামে এক ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন, সিন্ধুকে ভারতীয় রাজ্য না হওয়ার কারণে জাতীয় সংগীত থেকে অপসারণের দাবি জানান।


সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আর সি লাহোতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ সেই আর্জি শুধুমাত্র প্রত্যাখ্যানই করেনি, বরং “শিশুসুলভ মামলা” হিসাবে বিবেচনা করেন এবং সঞ্জীব ভাটনগরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছিলেন। আরও একটি উদাহরণ হল, কয়েক বছর আগে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগ শহরের একটি স্কুলে জাতীয় সংগীত নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই ঘটনায় ওই স্কুলের ব্যবস্থাপক জিয়া-উল-হককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। হকের যুক্তি ছিল, স্কুলে জাতীয় সংগীত নিষিদ্ধ হওয়ার নেপথ্যে কারণ হল জাতীয় সংগীতে “ভারত ভাগ্য বিধাতা” শব্দটি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়নি। যাইহোক এই মুহূর্তে গোটা দেশ চাইছে তেরঙা অবমাননাকারীদের কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি হোক।

 (লেখক প্রাক্তন সাংসদ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *