আগরতলা, ১৬ জানুয়ারি (হি.স.) ৷৷ করোনা মহামারি আমাদের আত্মনির্ভর হতে শিখিয়েছে৷ কারণ, আজ ত্রিপুরায় মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভর হওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়েছে৷ শনিবার আগরতলা টাউন হল-এ করোনা-র টিকাকরণ অভিযানের সূচনা করে প্রত্যয়ের সুরে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, কখনও ভাবিনি এই সংকট থেকে মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া যাবে৷ কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃঢ় বাসনা সেই অসাধ্য সাধন করেছে৷ তাই গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়ে করোনা-র টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়েছে দেশে৷
প্রসঙ্গত, সমগ্র দেশের সাথে আজ ত্রিপুরায়ও কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে৷ এ উপলক্ষ্যে আগরতলা টাউন হল-এ কোভিড-১৯ টিকাকরণের রাজ্যভিত্তিক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ সেখানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যের ১৭টি স্বাস্থকেন্দ্রে টিকাকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ অনুষ্ঠানে তিনি রাজ্যবাসীর উদ্দেশ্যে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, আজ দেশের সাথে সাথে রাজ্যের জন্যও একটা ঐতিহাসিক দিন৷ কারণ রাজ্যে যেদিন প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল সেদিন জিবি হাসপাতাল সহ পুরো আগরতলা শহর অঘোষিত কার্ফুতে পরিণত হয়েছিল৷ রাজ্যের প্রত্যেকের মধ্যেই আতঙ্ক দেখা দিয়েছিল৷
তাঁর কথায়, এই আতঙ্কের পরিবেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কোনও রাস্তা পাওয়া যাচ্ছিল না৷ তখন দেশের প্রধানমন্ত্রীই আমাদের করোনা মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছিলেন৷ প্রধানমন্ত্রীর ভোকাল ফর লোকাল আহ্বানে আজ দেশের বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করেছেন৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় প্রথম পর্যায়ে কোভিড-১৯ টিকাকরণ করা হবে চিকিৎসক, নার্স সহ সকল স্বাস্থ্যকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের৷ তাঁদের ৪৫ হাজার ৪২০টি ডোজ দেওয়া হবে৷ এর জন্য স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে৷ দ্বিতীয় পর্যায়ে আরক্ষাকর্মী, রাজস্ব দফতরের কর্মী, পুরকর্মচারী এবং বিপর্যয় মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের টিকাকরণ করা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, করোনা সংক্রমণ মোকাবিলার সময় রাজ্যের জনগণের মধ্যে আত্মনির্ভরতা, স্বনির্ভর হওয়া, একে অপরকে সহযোগিতা করা এবং স্বাভিমানতার মানসিকতা তৈরি হয়েছে৷ এই গুণগুলি সব সময় নিজেদের মধ্যে ধরে রাখতে হবে৷ কারণ এগুলিই ত্রিপুরাকে শ্রেষ্ঠ ও সমৃদ্ধিশালী রাজ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে৷ তিনি বলেন, রাজ্যবাসী কঠোর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন৷
তাঁর দাবি, ত্রিপুরা সরকার লকডাউন চলাকালীন রাজ্যের জনগণকে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে স্বনির্ভর পরিবার যোজনা, মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর যোজনা ইত্যাদি চালু করেছে৷ তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, স্বনির্ভর পরিবার যোজনার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে আত্মনির্ভরতার মানসিকতা তৈরি হওয়ার ফলে করোনা সংকটের সময় রাজ্য আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়েনি৷ শহর ও নগর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী স্বনির্ভর যোজনা চালু হয়েছে৷ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিনামূল্যে ট্রেড লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে৷ তাঁদের বিমার আওতায় আনার পাশাপাশি ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে৷
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীও ত্রিপুরার উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে চলেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ত্রিপুরায় আধুনিকতম ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার ৯৩ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে৷ তাছাড়া মাতাবাড়ির উন্নয়নের জন্য ৩৭ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷