গুয়াহাটি, ২১ ডিসেম্বর (হি.স.) : মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সংবরণ করে মূলস্রোতে ফিরে এসেছে চারটি জঙ্গি সংগঠনের ৬৪ জন সক্রিয় সশস্ত্র ক্যাডার। সোমবার শ্রীমন্ত শংকরদেব কলাক্ষেত্র চত্বরে আয়োজিত অস্ত্রসংবরণ করে আত্মসমর্পণ করেছে ইউনাইডেট লিবারেশন ফ্রন্ট অব অসম স্বাধীন (আলফা-স্বা)-এর স্বঘোষিত উপ-সেনাধ্যক্ষ মনোজ রাভা ওরফে দৃষ্টি রাজখোয়া, তার পত্নী লীলা ডি মারাক, বিজয় দাস ওরফে মণ্টু শইকিয়া সহ আলফা (স্বা)-এর ১৮ জন সক্রিয় সদস্য, পিপলস ডেমোক্র্যাটিক কাউন্সিল অব কারবি-লাংপি (পিডিসিকে)-র স্বঘোষিত প্রধান সেনাধ্যক্ষ অইন তেরন ওরফে লখন তেরন, ইউনাইটেড পিপলস রিভলিউশনারি ফ্রন্ট (ইউপিআরএফ)-এর স্বঘোষিত সচিব-প্রধান লালমিনথাং গুইতে ওরফে ফ্র্যাংকি ও স্বঘোষিত প্রতিরক্ষা সচিব সিনখামশেম গুইতে ওরফে জভি সহ এই সংগঠনের ৩২ জন সক্রিয় ক্যাডার এবং ডিমাসা ন্যাশনাল লিবারেশেন আর্মি (ডিএনএলএ)-র স্বঘোষিত প্রচার সচিব রিপেন্স গারলোসা ওরফে হাদাইচাক সহ ১৩ জন সক্রিয় সদস্য।
এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসমুক্ত অসম গড়ে রাজ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আজকের দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। হিংসার পথ ছেড়ে শান্তির পথ গ্রহণকারী উগ্রপন্থীদের স্বাভাবিক জীবনে উষ্ণ স্বাগত জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সনোয়াল। তিনি বলেন, শান্তি ছাড়া প্রগতি কখনও সম্ভব নয়, সে যত চেষ্টাই করা হোক না-কেন। মূলস্রোতে ফিরে আগত যুবক-যুবতীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদেরকে ধ্বংসের জন্য নয়, নতুন করে দেশ গড়ার কাজে যত্নশীল হতে হবে। এক পরিবারভুক্ত মানসিকতায় প্রেম-প্রীতি, সহানুভূতিশীলতার মাধ্যমে বন্ধুত্ব এবং সৌভ্রাতৃত্ববোধের আদর্শে রাষ্ট্র নির্মাণ প্রক্রিয়ায় সকলকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এদিন তিনি এখনও যে সকল উগ্রপন্থী আত্মগোপন করে রয়েছেন তাদের যত শীঘ্র সম্ভব মূলস্রোতে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন মু্খ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশে গড়ে ওঠা আস্থা ও বিশ্বাসের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে। তাই এই অঞ্চলের প্রায় সব উগ্রপন্থী সংগঠন শান্তির পথে প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি বলেন, আত্মসমর্পণকারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ছাড়াও রাজ্য সরকার ‘স্বাবলম্বন’ প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের এক মর্যাদাপূর্ণ জীবন উপহার দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন স্ব-নিয়োজন প্রকল্পগুলিতে এই সকল যুবক-যুবতীদের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়ে আজ আগ্নেয়াস্ত্র সংবরণকারী উগ্রপন্থী সদস্যদের এই সব প্রকল্পের সুবিধা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ।
আজকের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রাসঙ্গিক ভাষণ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব জিষ্ণু বরুয়া। উগ্রপন্থীদের মূলস্রোতে ফিরেয়ে আনার ক্ষেত্রে তিনি মুখ্যমন্ত্রী সহ রাজ্য পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ, ভারতীয় সেনাবাহিনী, অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়াল এবং রাজ্যের পুলিশপ্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্তের নির্দেশনায় তৈরি ‘শান্তির দিশত আন এক পদক্ষেপ’ (শান্তির ক্ষেত্রে অন্য এক পদক্ষেপ) শীর্ষক ভিডিও প্রদর্শন করা হয়েছে।
অসম পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের মহাপরিদর্শক হীরেন নাথের স্বাগত ভাষণের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বহুজনের সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টা হৃষিকেশ গোস্বামী, মুখ্যমন্ত্রীর আইনি উপদেষ্টা শান্তনু ভরালি, পুলিশপ্রধান ভাস্করজ্যোতি মহন্ত, মুখ্যমন্ত্রীর অতিরিক্ত মুখ্যসচিব পবনকুমার বরঠাকুর, গৃহ দফতরের প্রধান সচিব নীরজ বার্মা, অতিরিক্ত পুলিশপ্রধান হরমিত সিং, গৃহ দফতরের কমিশনার-সচিব জ্ঞানেন্দ্রদেও ত্রিপাঠী, সেনাবাহিনীর ২১ মাউন্টেন ডিভিশনের জিওসি এসপি সিং, সিআরপিএফ-এর নর্থ-ইস্ট জোনের অতিরিক্ত সঞ্চালকপ্রধান সঞ্জীবরঞ্জন ওঝা, এসআইবি-র যুগ্ম অধিকর্তা রশ্মি সিনহা প্রমুখ ভারতীয় সেনা বাহিনী, এসএসবি, বিএসএফ, আইটিবিপি এবং রাজ্য পুলিশের বহু পদস্থ ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। এছাড়া আত্মসমর্পণকারী উগ্রপন্থী সদস্যদের পরিবারবর্গের পাশাপাশি কারবি আংলং এবং ডিমা হাসাও জেলার বেশ কয়েকজন গ্রামপ্রধান আজকের অনুষ্ঠানে ছিলেন।