ডেয়ারি শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করতে রাজ্যে চালু গোধন প্রকল্পের

আগরতলা, ২৮ অক্টোবর (হি. স.)৷৷ দুগ্দ এবং দুগ্দ জাতীয় দ্রব্য উৎপাদনে ত্রিপুরাকে স্বয়ম্ভর করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার৷ কারণ, শুধুমাত্র দুগ্দ এবং দুগ্দজাতীয় দ্রব্যের আমদানিতে রাজ্যের বিপুলপরিমাণ অর্থ বহির্রাজ্যে চলে যাচ্ছে৷ দুগ্দ উৎপাদন বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে রাজ্যের মানুষের কাছে এই অর্থ ধরে রাখতে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করছে৷ আজ আগরতলার প্রজ্ঞাভবনে মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গোধন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে একথা বলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ উল্লেখ্য, এই প্রকল্পে গবাদি পশুর কৃত্রিম প্রজননে লিঙ্গ নির্ধারিত বীর্যের প্রয়োগ করা হবে৷


এদিন তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গােধন প্রকল্প রাজ্যের ৫টি জেলা যথাক্রমে পশ্চিম ত্রিপুরা, সিপাহীজলা, খােয়াই, গােমতী এবং ধলাই জেলায় রূপায়ণ করা হবে৷ ২০২০-২১, ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ এই তিনটি অর্থবছরে এই প্রকল্পটি রূপায়িত হবে৷ ১ লক্ষ ৫৬ হাজার গাভীর মধ্যে সেক্সড সিমেন টেকনােলজি প্রয়োগ করা হবে৷ এজন্য ৩ লক্ষ ১২ হাজার ডােজ প্রয়ােজন হবে৷ প্রতিটি ডােজের মূল্য ৫১৯ টাকা৷ তার মধ্যে সুবিধাভােগীদের মাত্র ৫০ টাকা দিতে হবে৷ বাকি টাকা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভর্তুকি দেবে৷ এই প্রকল্প বাবদ ব্যয় হবে ১৬ কোটি ১৯ লক্ষ ৪৩ হাজার টাকা৷ তিনি বলেন, কৃত্রিম প্রজননে লিঙ্গ নির্ধারিত বীর্যের ব্যবহারের দ্বারা স্ত্রী বাছুর উৎপাদনের হার ৯০ শতাংশের অধিক হতে পারে৷ তাঁর দাবি, এটি একটি অন্যতম যুগান্তকারী প্রকল্প৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে দুধের চাহিদা যেমন মেটানাে সম্ভব হবে অন্যদিকে উদ্বৃত্ত দুধ বিক্রি করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত হবে৷ একই সাথে রান্নার কাজেও গােবর গ্যাস ব্যবহার করা যাবে৷ পরবর্তীতে সেই গােবর মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে যা জৈব চাষাবাদের ক্ষেত্রে উপযােগী হয়ে উঠবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, এই প্রকল্প রূপায়ণের ফলে একদিকে রাজ্যের সাধারণ মানুষের জীবনমান উন্নত হবে অন্যদিকে ডেয়ারি শিল্পের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে৷ গ্রামীণ অর্থনীতিতে এই প্রকল্প আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদি লােকালের জন্য ভােকাল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন, যার অর্থ চারপাশে যা রয়েছে তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার দিকে এগিয়ে যাওয়া৷ বর্তমানে রাজ্য সরকারও সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে৷


তাঁর কথায়, কৃষি ক্ষেত্র হচ্ছে যে কোনও রাজ্যের অর্থনীতির মূল ভিত্তি৷ সরকার এই ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণ করছে৷ খুব কম সময়ে এই সেক্টর রােজগার দিতে পারে৷ তিনি বলেন, রাজ্যে ভুট্টা চাষাবাদের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সেইসঙ্গে অর্গানিক চাষাবাদের উপর জোর দিয়ে রাজ্যে ২ হাজার হেক্টর জমিতে অর্গানিক চাষ করা হচ্ছে৷ আরও ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে অর্গানিক চাষের পরিকল্পনা রয়েছে৷ মূলত প্রধানমন্ত্রীর ঘােষিত কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ত্রিপুরা সরকার৷
তিনি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পকে বাস্তবায়িত করাই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মুল কাজ৷ সপ্তাহে অন্তত পক্ষে একবার জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত করে প্রকল্পগুলির পর্যালােচনা অবশ্যই করা প্রয়ােজন৷ সরকারি সুযােগ সুবিধাগুলি সহজতরভাবে মানুষের কাছে পৌছে দিতে হবে৷ তবেই বিভিন্ন প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির সর্বশ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠনের স্বপ্ণপূরণ সম্ভব হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী সান্তনা চাকমা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী উন্নত গােধন প্রকল্পের মাধ্যমে গবাদি পশুর সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি দুগ্দ উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে৷ তিনি আরও জানান, রাজ্য শূকর প্রজনন খামার স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ইতিমধ্যে অনুমােদন দেওয়া হয়েছে৷ পাশাপাশি এডিসি এলাকায় মাংস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নর্থ ইস্ট কাউন্সিল থেকে ১৪৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে৷ প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের মাধ্যমে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে আগ্রহী প্রাণী পালকরা উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন৷ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন৷
এদিন অনুষ্ঠানে ৫টি জেলার দপ্তর আধিকারিকদের হাতে তরল নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ ক্রায়ােকেনে সংরক্ষিত লিঙ্গ নির্ধারিত সিমেন তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সহ অতিথিগণ৷ এছাড়াও ৩৯ জন প্রশিক্ষিত কৃত্রিম প্রজনন কর্মীদের মধ্যে কৃত্রিম প্রজনন সামগ্রী এবং বাইসাইকেলের রেপ্লিকা তুলে দেওয়া হয় অনুষ্ঠানে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *