আগরতলা, ২৭ অক্টোবর (হি.স.)৷৷ ত্রিপুরায় করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত স্বেচ্ছায় পরিষেবা প্রদানে ইচ্ছুক ৬০ জন চিকিৎসক এবং ১০০ জন নার্সকে নিযুক্তি দেওয়া হয়েছে৷ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকারের চিঠির জবাবে এ-কথা জানিয়েছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷
প্রসঙ্গত, গত ২২ অক্টোবর ত্রিপুরার দুটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে উত্তীর্ণ এমবিবিএস বেকার ডাক্তারদের নিয়োগ, তাঁদের সাথে সাক্ষাৎকার ও কোভিড পরিস্থিতিতে পরিষেবা প্রদান সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দেন বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার৷
সেই চিঠির জবাবে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব জানান, ত্রিপুরা সরকার চিকিৎসা পরিষেবার উন্নয়নে দায়বদ্ধ এবং তাকে জনমুখি করতে সর্বদা প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে৷ গত ৩১ মাসে রাজ্যের জনগণ তা উপলব্ধি করতে পারছেন৷ বেকার চিকিৎসকদের বিষয়ে সরকারের ভাবনাচিন্তা রয়েছে৷ এ বিষয়ে অহেতুক উৎকণ্ঠার কোনও কারণ নেই৷ পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুসারে ত্রিপুরা সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিয়োগের প্রক্রিয়া যে জারি রেখেছে তা সংশ্লিষ্টদের অজানা নয়, বলেন তিনি৷
তাঁর দাবি, ত্রিপুরা সরকার কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথেষ্ট আন্তরিক এবং প্রতিনিয়ত পরিস্থিতির উপর নজর রেখে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলেই অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থায় আসা সম্ভব হয়েছে৷ এক্ষেত্রে চিকিৎসক সহ স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত সকলস্তরের কর্মীদের ভূমিকা অপরিসীম৷ পাশাপাশি জনগণের সচেতনতাই এই সময়ের মুখ্য বিষয়৷
মুখ্যমন্ত্রী কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে বিরোধী দলনেতাকে বলেন, ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ থেকে উত্তীর্ণ এমবিবিএস বেকার চিকিৎসকগণ স্মারকলিপি প্রেরণের আগেই গত মে মাস থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতরের পক্ষে স্বেচ্ছায় পরিষেবা প্রদানে ইচ্ছুক চিকিৎসক এবং সেই সঙ্গে নার্সদের কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কাজে যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ সে অনুসারে ২০ মে থেকে ১২১ জন অ্যালোপ্যাথ, আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথ ও ডেন্টাল সার্জনকে স্বেচ্ছা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যুক্ত করা হয়েছে৷ কিন্তু তখন এমবিবিএস উত্তীর্ণরা সব স্বেচ্ছা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে যুক্ত হতে চাননি৷
তিনি জানান, দু-দফায় ইচ্ছুক ৬১ জন এমবিবিএস উত্তীর্ণদেরকে যুক্ত করা হয়েছে৷ পাশাপাশি আয়ুর্বেদ, হোমিওপ্যাথ ও ডেন্টাল সার্জনদের যুক্ত করা হয়েছে৷ তাঁর দাবি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনেই এই নিযুক্তি হয়েছে৷ সেই সঙ্গে ১০০ জন নার্সকেও যুক্ত করা হয়েছিল৷ তাঁর আরও দাবি, অন্যান্য রাজ্যেও এভাবে স্বেচ্ছায় পরিষেবা প্রদানে ইচ্ছুক চিকিৎসক এবং সেই সঙ্গে নার্সদের কোভিড আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার কাজে যুক্ত করার পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে৷
তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী চিকিৎসকদের প্রত্যেককেই সাতদিনের জন্য ৫০,০০০ টাকা এবং নার্সদের ২০,০০০ টাকা সাম্মানিক প্রদান করা হয়েছে৷ ইতিমধ্যেই তাঁদের প্রাপ্য সাম্মানিক মিটিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু দেখা গেছে, স্বেচ্ছায় চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সরাসরি সুযোগ থাকলেও অধিকাংশ চিকিৎসকই সেই সুযোগ গ্রহণ করেননি৷ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার চেয়ে বরং জনস্বার্থে কোভিড চিকিৎসায় এগিয়ে আসা জরুরি, বলেন তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা লোকসেবা আয়োগের মাধ্যমে যখন চিকিৎসক নিয়োগ করা হবে তখন আপৎকালীন পরিস্থিতিতে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদানকারী চিকিৎসকদের ১০ শতাংশ নম্বর বরাদ্দ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তাতে স্পষ্ট, ত্রিপুরার মেডিক্যাল কলেজ থেকে উত্তীর্ণ চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সদর্থক চিন্তা-ভাবনা রয়েছে৷ যথাসময়ে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷
তিনি জানান, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের (ত্রিপুরা) পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ২৭৪ জন চুক্তিবদ্ধ চিকিৎসক নিযুক্ত করা হয়েছে৷ ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে ত্রিপুরা লোকসেবা আয়োগের মাধ্যমে ১৪৯ জন এমবিবিএস অ্যাডহকভুক্তকে নিয়মিত এবং ১৩৯ জন নতুন এমবিবিএস উত্তীর্ণদের নিযুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং তা বাস্তবায়ন হয়েছে৷ তাঁর দাবি, ২০১৮ সালের আগে থেকেই এমবিবিএস উত্তীর্ণ ও নিযুক্তির মধ্যে ফারাক চলে আসছে৷ এটি নতুন কোনও বিষয় নয়৷ সুতরাং এ নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্ত হওয়া উচিত হবে না৷