বেআইনি কয়লা পাচার প্রক্রিয়ায় অসমে এক হাজার কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি, সিন্ডিকেটের সর্বেসর্বা এবার শিলচরের সাংসদ, অভিযোগ প্রদীপের

শিলচর (অসম), ৩ অক্টোবর (হি.স.) : অসমে সাড়ে চার বছরের বিজেপি শাসনে বেআইনি কয়লা পাচার প্রক্রিয়ায় কম করেও এক হাজার কোটি টাকার সরকারি রাজস্ব মার খেয়েছে। সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বরাক উপত্যকায় অবৈধ পদ্ধতিতে চলমান কয়লা সিন্ডিকেটের দায়িত্বেও এবার হাত বদল হয়েছে। কাছাড় জেলা বিজেপি সভাপতি কৌশিক রাইকে সরিয়ে এবার শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়ই কয়লার কালা বাণিজ্য সিন্ডিকেটের সর্বেসর্বা। এভাবেই কয়লা সিন্ডিকেট-নেতার কেবল নাম ও হাত পরিবর্তন হয়েছে। গুরুতর বিস্ফোরণ করেছেন সারা কাছাড় করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি ছাত্র সংস্থার (আকসা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা গৌহাটি হাইকোর্টের আইনজীবী প্রদীপ দত্তরায়।

তিনি বলেন, এতদিন ধরে কাছাড় জেলা বিজেপি সভাপতি কৌশিক রাই কয়লা সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে ছিলেন। এবার কেবল নেতার পরিবর্তন ঘটেছে। সম্প্রতি অসমের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী বরাকে আসার পর থেকেই কয়লা সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব পরিবর্তন করে শিলচরের সাংসদ রাজদীপ রায়ের হাতে দায়িত্ব অর্পণ করে গেছেন। মন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পর শুধু রাতে নয় এখন দিন-দুপুরে অবাধে পাচার হচ্ছে কয়লা। প্রতি রাতে কয়লাবাহী ৬০-৭০ ট্রাক পাচার হচ্ছে। প্রত্যেক ট্রাক থেকে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। এতে সাংসদের সঙ্গে কয়েক জন বিধায়কও সিন্ডিকেটে জড়িত রয়েছেন এবং প্রশাসনের কয়েকজন উচ্চপদস্থ আধিকারিক সহ পুলিশের বেশ কিছু কর্মকর্তাও রয়েছেন। যাঁরা মিলে এই সিন্ডিকেটকে পরিচালিত করছেন। সাংসদ রাজদীপ রায়ের নেতৃত্বে মেঘালয় থেকে কয়লাবাহী ট্রাক বরাকে প্রবেশ করে ত্রিপুরা ও বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে। কয়লা সিন্ডিকেটের ব্যবসা বরাকে আর কোনওদিন বন্ধ হবে না, আক্ষেপ করে বলেন বক্তা প্রদীপ দত্তরায়।

তিনি বলেন, কংগ্রেস আমল থেকেই এ সব বেআইনি   কার্যকলাপ চলছে। কংগ্রেস আমলের সিন্ডিকেটে ট্রাক থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হত। এখন তার দর বেড়ে উঠেছে ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায়। বিগত সাড়ে চার বছরে বিজেপির আমলে কয়লা থেকে কমপক্ষে এক হাজার কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব মার খেয়েছে। সরকারের এমনিতে টাকার অভাব, অতিমারি করোনার প্রকোপে আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে রাজ্য সরকার। টাকা দিতে হিমশিম খাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারও। অথচ কয়লা সিন্ডিকেটের নামে শাসক দলের নেতাদের পকেট ভারী হচ্ছে আর সরকারের রাজস্ব কামাই হচ্ছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়।

প্রদীপ দত্তরায় ক্ষোভ ব্যক্ত করে বলেন, শিলচরের সাংসদ দলীয় কার্যালয়ে বসে জোর গলায় বলতে পারেন, এখন থেকে সিন্ডিকেটের কোনও ধরনের খবর সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবে না। কেননা তিনি নাকি সব সংবাদপত্র কিনে ফেলেছেন। কয়লা সিন্ডিকেট নিয়ে বেশিরভাগ বিজেপি কর্মী ক্ষুব্ধ। এর আগে ওইসব সিন্ডিকেট নিয়ে প্রায় ১ হাজার বিজেপি কর্মী দিশপুর গিয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন। শিলচরে এসে ওইসব বিজেপি কর্মীরা প্রকাশ্যে সাংবাদিক সম্মেলন করে সিন্ডিকেটের বেআইনি কাজের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। বিজেপি কর্মীরা যেখানে সিন্ডিকেট নিয়ে কথা বলেন তার পরও কি বিশ্বাস করতে কোনও অসুবিধা আছে?  প্রশ্ন তুলেছেন দত্তরায়।

উদ্বেগ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়, সাংসদের কাছে বরাকের মানুষ অনেক প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু সাংসদ রাজদীপ ব্যক্তিগত ভাবমূর্তির বিষয় ভুলে গিয়ে নিজে কয়লা সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বেন সেটা মানুষ ভাবতেই পারেনি। একজন পুলিশ আধিকারিক কিছুদিন আগে বলেছিলেন, বরাকে একটিও কয়লা সিন্ডিকেটের গাড়ি ঢুকে না। এটা ডাঁহা মিথ্যা কথা। আসলে ওই পুলিশ আধিকারিক নিজেই জড়িয়ে রয়েছেন কয়লা সিন্ডিকেটে। বাইরে থেকে এক নেতা এসে এই সিন্ডিকেটে যোগদান করেছেন। কয়লা সিন্ডিকেটের বাজার এখন পুরোপুরি সরগরম। কাছাড় থেকে যখন করিমগঞ্জে কয়লার গাড়ি ঢুকে তখন আরও অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। কৌশিক রাই কয়লা সিন্ডিকেট চালিয়ে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা রোজগার করেছেন। এখন আর তাঁর টাকার প্রয়োজন নেই। তাই হাত বদল করে দেওয়া হয়েছে।

কৌশিকের বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ বেড়ে গিয়েছিল তার জন্য রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী হাত বদল করে সাংসদের হাতে দায়িত্ব দিয়েছেন কয়লা সিন্ডিকেটের। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক মামলা ঝুলছে। সিবিআই দফায় দফায় তদন্ত প্রক্রিয়া অগ্রসর করতে একাধিকবার বরাক উপত্যকায় অভিযান চালিয়েছে। তার পরও রাজ্যে সিন্ডিকেটরাজের মাধ্যমে কয়লা, বার্মিজ সুপারি, পোস্ত পাচার প্রক্রিয়া জোরকদমে চলছে। এ সমস্ত বেআইনি সিন্ডিকেটের অবাধ গতিবিধি বন্ধ করতে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালও বারংবার ব্যর্থ হচ্ছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বিষয় বলে মন্তব্য করেন প্রদীপ দত্তরায়।