নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৮ সেপ্ঢেম্বর৷৷ লক্ষ্য মনে হচ্ছে রাজনীতি৷ তাই হয়তো ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে বিলম্বের অভিযোগ এনে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ত্রিপুরার রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎ কিশোর দেববর্মণ৷ অবশ্য আদালত ওই আবেদনের ভিত্তিতে এখনই হস্তক্ষেপে সম্মত হয়নি৷ এমন-কি কোনও নোটিশও জারি করেনি ত্রিপুরা হাইকোর্ট৷ তবে ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে নজর রাখবে আদালত৷ তাই আগামী ৭ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আকিল কুরেশি এবং বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ৷
দুই দশকের অধিক সময় ধরে ব্রু শরণার্থী সমস্যা জিইয়ে রয়েছে৷ উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুর এবং পানিসাগর মহকুমায় প্রায় ৪০ হাজার ব্রু শরণার্থী জীবনযাপন করছেন৷ এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ত্রিপুরা সরকার তাদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনের বদলে এ-রাজ্যেই পুনর্বাসনের সিদ্ধান্ত নেয়৷ কেন্দ্রীয় সরকারও কালবিলম্ব দেরি না করে ত্রিপুরা সরকারের ওই সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে৷ তার ভিত্তিতে চারস্তরীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে৷ চুক্তি মোতাবেক ব্রু শরণার্থীদের সারা ত্রিপুরায় বিভিন্ন স্থানে পুনর্বাসন দেওয়া হবে৷
কিন্তু, তাতেও জটিলতা দেখা দিয়েছে৷ ব্রু শরণার্থী নেতারা কাঞ্চনপুর এবং পানিসাগর মহকুমার বাইরে অন্যত্র পুনর্বাসনে এখন রাজি হচ্ছেন না৷ তাঁদের চাপে পরে ত্রিপুরা প্রশাসনও কাঞ্চনপুর মহকুমায় সাতটি স্থান চিহ্ণিত করেছে৷ সেখানে অন্তত ৪,৬০০ ব্রু শরণার্থী পরিবারকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা চলছে৷ ত্রিপুরা সরকারের এই পদক্ষেপকে ঘিরে খাঁচানপুর মহকুমায় বাঙালি জনগোষ্ঠী প্রতিবাদী হয়ে উঠেছে৷ তাদের সাথে চাকমা এবং স্থানীয় রিয়াং সম্প্রদায়ও যোগ দিয়েছে৷ জম্পুই পাহাড়ের ইয়ং মিজো সংগঠনও ব্রু শরণার্থীদের বড় অংশকে কাঞ্চনপুর মহকুমায় পুনর্বাসনের বিরোধিতায় শামিল হয়েছে৷
সম্প্রতি কাঞ্চনপুর যৌথ মঞ্চ ১২ ঘণ্টার বনধ পালন করেছে৷ এছাড়াও, ধর্মনগরে জমির জরিপ করতে গিয়ে প্রশাসনের আধিকারিকরা জনরোষের মুখে পড়েছিলেন৷ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল যে তাঁদের পালিয়ে আসতে হয়েছে৷ সবমিলিয়ে ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসনে উত্তর ত্রিপুরায় আপত্তি সর্বত্রই৷
ত্রিপুরার রাজপরিবারের সদস্য প্রদ্যুৎকিশোর দেববর্মণ এই সুযোগে ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসন নিয়ে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন৷ তিনি বলেন, গত জানুয়ারিতে চারস্তরীয় চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে৷ মাঝে করোনা-র প্রকোপ বৃদ্ধিতে চুক্তি মেনে ব্রু শরণার্থী পুনর্বাসনে বিলম্ব হয়েছে৷ কিন্তু, এখনও কোনও উদ্যোগ ত্রিপুরা প্রশাসনের তরফে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না৷ তাই, আদালতের দরজায় কড়া নাড়তে হয়েছে৷ তাঁর কথায়, ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া ভেস্তে দেওয়ার লক্ষ্যে কাঞ্চনপুরে আন্দোলন শুরু হয়েছে৷ তাঁর দাবি, বিচারাধীন মামলা নিয়ে আর বেশি কিছু বলতে চাইছি না৷
এদিকে, আজ ত্রিপুরা হাইকোর্টে ওই মামলার শুনানিতে অ্যাডভোকেট জেনারেল অরুণকান্তি ভৌমিক মামলার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ণ তুলেন৷ তিনি বলেন, প্রদ্যুৎ কিশোরের ওই মামলা কোনও ভাবেই জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট নয়৷ কিন্তু আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী অরুণ দেববর্মা মামলার গুরুত্ব আদালতে তুলে ধরার চেষ্টা করেন৷ ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আকিল কুরেশি এবং বিচারপতি শুভাশিস তলাপাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ ওই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ৭ ডিসেম্বর ধার্য করেছে৷
এদিন প্রধান বিচারপতি আকিল কুরেশি শুনানি পর্বে বলেন, ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসন সংক্রান্ত বিষয় সম্পূর্ণ সামাজিক এবং রাজনৈতিক৷ তাতে আদালতের কোনও ভূমিকা নেই৷ তবে ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসনে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে সঠিকভাবে কাজ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি৷ সেক্ষেত্রে আদালত ব্রু শরণার্থীদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়ায় নজর রাখবে, বলেন ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি৷ তিনি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে শরণার্থী সমস্যায় সমাধান না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেন৷
এদিকে, নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রঞ্জিত নাথ ওই মামলা নিয়ে প্রদ্যুৎ কিশোরের কঠোর সমালোচনা করেছেন৷ তিনি কটাক্ষ করে বলেন, প্রদ্যুৎ কিশোর ত্রিপুরায় ব্রু শরণার্থী ইস্যুতে দাঙ্গা বাঁধাতে চাইছেন৷ কারণ বাঙালিরা ব্রু শরণার্থীদের জন্য নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, ভিটেমাটি ছেড়েছেন, তাতে তিনি মোটেও চিন্তিত নন৷
রঞ্জিত নাথের কথায়, গত ২৩ বছর ধরে বহু জ্বালা সহ্য করেছি, এখন মুখ বুঝে থাকতে রাজি নই৷ তাই ব্রু শরণার্থীদের অধিকাংশকে কাঞ্চনপুর মহকুমায় পুনর্বাসন মেনে নেব না৷ তিনি বলেন, চুক্তি মেনে সারা ত্রিপুরায় তাঁদের পুনর্বাসন দেওয়া হোক৷ তাতে কোনও আপত্তি নেই৷ কাঞ্চনপুর মহকুমায় ৫০০ পরিবারকে পুনর্বাসনে আমরা সম্মতি জানাই৷ কিন্তু ব্রু নেতাদের দাবি মেনে ৪,৬০০ পরিবারকে কাঞ্চনপুর মহকুমায় পুনর্বাসনে আমাদের আপত্তি রয়েছে, সাফ জানিয়েছেন তিনি৷

