ঢাকা, ১৮ সেপ্টেম্বর (হি.স.): ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা বেড়ে চলায় চলতি বছরের ৭ জুলাই ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনকে লিখিতভাবে জানিয়ে উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছিল বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। বিএসএফ-এর গুলিতে সীমান্তে বাংলাদেশিরা ঠিক কী কারণে মারা যাচ্ছেন, তার সঠিক তথ্য জানতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। প্রকৃত সত্য প্রকাশ্যে আনছে না বাংলাদেশের গণমাধ্যমও। ফলে বাংলাদেশের মানুষ ভারত ও বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছেন।
বাংলাদেশি জনপ্রতিনিধিরা মনে করছেন, এই সুযোগই নিচ্ছে বিএনপি-জামাত-সহ পাকিস্তানপন্থীরা। যদিও, বাংলাদেশের সীমান্ত শহর বেনাপোল পৌর মেয়র জনপ্রনিধি আশরাফুল আলম লিটন জানালেন, বাংলাদেশি চোরাকারবারীরা ভারতে গিয়ে চোরাই পণ্য নিয়ে আসে। বিএসএফ বাধা দিলেই অনেক সময় তাদের উপর হামলা করে চোরাকারবারীরা। ফলে বাধ্য হয়েই বিএসএফ গুলি চালায়। অথচ বাংলাদেশের গণমাধ্যমে চোরাকারবারীদের ‘ব্যবসায়ী’ ও ‘ভুল করে সীমান্ত অতিক্রম করায়’ বিএসএফ গুলি চালিয়েছে বলে প্রচার করে। প্রকৃত সত্য সকলের জানা দরকার। কিন্তু, সত্যিটা গণমাধ্যমে না আসায় বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত-বিদ্বেষ বাড়ছে।
বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রের খবর, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফ ও ভারতীয় নাগরিকদের হাতে ২৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সেই সংখ্যা ছিল ১৮। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা-র বিজিবি সদর দফতরের সম্মেলন কক্ষে চলছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-র মধ্যে মহাপরিচালক পর্যায়ে সীমান্ত সম্মেলন। বিজিবি সূত্রের খবর, এই সম্মেলনে ইতিমধ্যেই বিএসএফ-এর সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের গুলি করা, মাদক দ্রব্যের চোরাচালান, আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলা-বারুদ পাচার-সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ইচ্ছা করে নয়, বিএসএফ ঠিক কী কারণে গুলি চালায় এ প্রসঙ্গে বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন জানান, আর আমরা যেহেতু জনপ্রতিনিধি তাই এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারি না। তবে ভারতে বাংলাদেশি নাগরিকদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হলে, বিজিবি-কে নিয়মিত টহল বাড়াতে হবে। তিনি দাবি করে বলেন, বিজিবি-র সঙ্গে চোরাকারবারীদের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বলেই বাংলাদেশ থেকে অবাধে তারা ভারতে যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভারত থেকে যেমন চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আদা-সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী আসে, তেমনই চোরাপথে অস্ত্র, ফেনসিডিল-সহ বিভিন্ন মাদক দ্রব্য আসে। আর এই মাদক যুব সমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে।
আবার চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রাক্তন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মঞ্জু বলেন, সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের মৃত্যু বন্ধ করতে হলে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি সীমান্তের মানুষের মধ্যে বৈধভাবে জিনিসপত্র ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বেশি সংখ্যক বর্ডার হাট বাড়াতে হবে। মাহফুজুর রহমান আরও জানান, বিজিবি অনেক চোরাচালানীকে বহুবার আটক করেছে। কিন্তু জামিনে মুক্ত হয়ে ফের সেই চোরাকারবারির কাজে যুক্ত হয়েছে। তাঁর কথায়, ভারতীয় নাগরিকরা বাংলাদেশে না আসলেও, বিএসএফ কোথায় আছে তা জানিয়ে জানিয়ে দেয়।