নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১১ সেপ্ঢেম্বর৷৷ অদূর ভবিষ্যতে সাব্রুম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির বাণিজ্যিক রাজধানী হয়ে উঠবে৷ সেই সাথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে৷ আজ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাবম মহকুমার পশ্চিম জলেফায় ’বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের’ ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় এই আশা ব্যক্ত করেন৷ এখানে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে আগামীদিনে সাবমবাসী শুধু ত্রিপুরা নয় সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্নদাা হয়ে উঠবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে উঠলে ত্রিপুরা আত্মনির্ভরতার পথে বহুদূর এগিয়ে যাবে৷ উল্লেখ্য, ১৬.৩৫ হেক্টর জায়গা জড়ে সাবমের পশ্চিম জলেফায় তৈরি হচ্ছে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এতে ব্যয় হবে ৬৩৫ কোটি টাকা৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এই শব্দের সঙ্গে ত্রিপুরা যুক্ত হবে এ রাজ্যের কোনও নওজোয়ান স্বপেও কল্পনা করতে পারেনি৷ ত্রিপুরার আর্থিক উন্নয়ন হোক, ত্রিপুরায় কর্মসংস্থানের সুুযোগ তৈরি হোক, আত্মনির্ভর ত্রিপুরা গড়ে উঠুক এমন কোনও ব্যবস্থাই ছিলো না৷ কর্মসংস্থানের জন্য নওজোয়ানদের সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো৷ কোনওদিন কোনও যুবক-যুবতীদের বলা হয়নি স্বনির্ভর হতে৷ তাকে সেই দিশা দেখানো হয়নি৷ কৃষককে বলা হয়নি আপনি নতুন কিছু করে দেখান৷ কৃষকদের জৈব পদ্ধতিতে চাষে উৎসাহিত করা হয়নি৷ বেকার যুবককে কোনও স্বনির্ভরতার উৎসাহ দেওয়া হয়নি৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কৃষকদের স্বনির্ভরতার দিশা ধরিয়ে দেওয়ার মানসিকতাই তৈরি করা হয়নি৷ এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে কম করে হলেও ৬৩৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে৷ এতে প্রায় ৫ হাজার লোকের কাজের সুুযোগ তৈরি হবে৷ মানুষ রোজগার পাবে৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গত আড়াই বছরে ত্রিপুরার নওজোয়ানদের মধ্যে একটা প্রত্যয় তৈরি হয়েছে৷ মানুষের কর্মসংস্থানের সুুযোগ তৈরি হচ্ছে৷ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার কিছু কিছু সুুবিধা বাতিল করে দিয়েছিলো৷ কিন্তু ত্রিপুরা সরকার টিআইডিসির মাধ্যমে সেই ভর্তকিগুলি জারি রাখবে৷ বিদ্যতে ৫০ শতাংশ সাবসিডি সহ তার সঙ্গে অন্যান্য খাতে আরও ৩০ শতাংশ সাবসিডি দেওয়া হবে৷ প্রথম ৫ বছর জিএসটি ফ্রি থাকবে৷ তার পরের ৫ বছর ৫০ শতাংশ জিএসটি৷ তিনি বলেন, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল সমস্ত সুুযোগগুলিই পাবে যারা এখানে ছোট বড় শিল্প স্থাপন করতে আসবেন৷ শিল্পগুলি হবে কৃষিভিত্তিক, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বস্ত্রশিল্প, রাবার ভিত্তিক শিল্প, হস্তকারু, ছোট ছোট কুটির শিল্প৷ তার সাথে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য বাড়বে৷ ফেণী নদীর উপর সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সাবমের বাণিজ্যিক দুয়ার খুলে যাবে৷ ইতিমধ্যেই ত্রিপুরা থেকে ১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি বেড়ে ৩০ কোটি টাকা হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দেরিতে হলেও ধীরে ধীরে সাবমের উন্নয়ন হচ্ছে৷ বিগত দিনে রাজ্যের এই প্রান্তিক মহকুমা সাবমের উন্নয়নে নজরই দেওয়া হয়নি৷ বর্তমান সরকার ভৌগোলিক কারণেই রাজ্যের এই প্রান্তিক মহকুমার উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে৷ সাব্রুমে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট হবে৷
এর অনুমোদন পাওয়া গেছে৷ শীঘই কাজ শুরু হবে৷ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় করে এই সুুসংহত চেকপোস্ট নির্মাণ করা হবে৷ চেকপোস্ট তৈরি হলে শত শত গাড়ি কন্টেইনার এখানে আসবে৷ বড় বড় ট্রলার দাঁড়িয়ে থাকবে৷ জাতীয় সড়ক ধরে উত্তর-পূর্বা’লের বিভিন্ন রাজ্যে চলে যাবে পণ্য৷ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরকে ব্যবহার করে সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের উন্নয়ন ঘটবে৷ আর্থিকভাবে নতুন দিগন্ত খুলে যাবে৷ শুধু বিশেষ অর্থনৈতিক নয়, সুুসংহত চেকপোস্ট নয় সাবমের উন্নয়নে তৈরি হবে লজিস্টিক হাব৷ এই হাবে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হতে পারে৷ সেই সাথে ফেণী নদী থেকে জল তুলে মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সাবমবাসীর পানীয় জলের অভাব দূর হতে চলেছে৷ সাবমের মানুষ পরিশ্রত পানীয় জল পাবেন৷ ত্রিপুরা সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের হাইকমিশনের সাথে চিঠিতে যোগাযোগ শুরু হয়েছে এই প্রকল্পের কাজ দ্রত শুরু করার জন্য৷ মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন ফেণী নদীর উপর সেতু তৈরি হলে ত্রিপুরায় পর্যটন শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হবে৷ আগে শুধুমাত্র আসাম-আগরতলা জাতীয় সড়কই ছিলো এই রাজ্যের জীবন রেখা৷ এখন জলপথে, স্থলপথে, রেলপথে এবং আকাশপথে ত্রিপুরার সঙ্গে বহির্রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটানো হয়েছে৷ বিকল্প জাতীয় সড়ক ও নতুন রেলপথ স্থাপন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জেলা হাসপাতালগুলিকে শক্তিশালী করা হচ্ছে৷ মুখে মাস্ক পরিধান ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী আজ সাবমের ভূরাতলিস্থিত একলব্য কোভিড কেয়ার সেন্টার পরিদর্শন করেন৷ করোনা রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে খোঁজখবর নেন৷ এই কোভিড কেয়ার সেন্টারে বর্তমানে ৯৭ জন করোনা রোগী রয়েছেন৷
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল৷ শ্রী গোয়েল তার ভাষণে বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার উত্তর-পূর্বা’লের রাজ্যগুলির উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে৷ উত্তর-পূর্বা’ঞ্চল এখন উন্নয়নের স্বর্ণালী ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবকা সাথ, সবকা বিকাশের দিশায় এগিয়ে যাচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের কৌশলী নেতৃত্বে ত্রিপুরা হয়ে উঠবে বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র৷ তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অনেক প্রাক’তিক সম্পদ রয়েছে৷ বিশেষত চা, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, বাঁশ শিল্প, রাবার শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান তৈরি করা হচ্ছে৷ ক’ষকদের আয় দ্বিগুণ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা থেকে ১ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি বেড়ে ৩০ কোটি টাকা হয়েছে৷ বিশেষ অর্থনৈতিক অ’লের মাধ্যমে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷ তিনি বলেন, ভারতীয় রেল এবং কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার মিলে ত্রিপুরায় ত্রিপল ইঞ্জিনের সরকার কাজ করছে৷ আত্মনির্ভর ভারত গঠনে ত্রিপুরা এক বিশেষ ভূমিকা নেবে৷ আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্য কোনও রাজ্যের কোনও ১টি উৎপাদিত পণ্যকে দেশ ও বিদেশে তুলে ধরা৷ ত্রিপুরাও সে পথে হাঁটবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন৷
অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক শংকর রায়, টিআইডিসির চেয়ারম্যান টিংকু রায়৷ এছাড়াও বক্তব্য রাখেন শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের অধিকর্তা ড. পি কে গোয়েল৷