BRAKING NEWS

বিজেপির কার্যকারিনী বৈঠকে নেতৃত্ব নির্মান ও জন সংযোগের উপর গুরুত্ব

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ আগস্ট৷৷ বিজেপির কার্যকারিনী বৈঠকে নেতৃত্ব নির্মান ও জন সংযোগের উপর গুরত্বারোপ করেছেন নেতৃত্বরা৷ তাছাড়া দেশের ও রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে৷


ভারতীয় জনতা পার্টি ত্রিপুরা প্রদেশ কার্যালয়ের ডাঃ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জীর সভাগৃহে আজ ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপি সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ মানিক সাহার পৌরহিত্যে করোনা মহামারীর পরিস্থিতিতে সেমি ভার্চায়েল প্রক্রিয়ায় রাজ্য কার্য্যাকারিণী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়৷ এই বৈঠকে প্রদেশ পদাধিকারীরা, জেলা সভাপতিরা, প্রদেশ মোর্চার সভাপতিরা সহ রাজ্য মন্ত্রিসভার সকল সদস্য সদস্যারা এবং সাংসদদ্বয় সরাসরি অংশ গ্রহন করেন৷ অন্যান্যরা ত্রিপুরার বিভিন্ন স্থান থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশ গ্রহন করেন৷ এছাড়া ভার্চায়েলের মাধ্যমে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অরুন সিং ও রাম মাধব এবং সর্বভারতীয় মহিলা মোর্চার সভানেত্রী বিজয় রাহাতকর অংশ গ্রহন করেন৷

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, বিজেপি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাংগঠনিক মহামন্ত্রী অজয় জানুয়াল এবং ত্রিপুরা সংগঠন মুখ্যমন্ত্রী ফনিন্দ্র নাথ শর্মার উপস্থিতিতে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে এই কার্য্যাকারিণী বৈঠকের সুচনা করেন রাজ্যের বিজেপি সভাপতি ডাঃ মানিক সাহা৷ এরপর প্রধানমন্ত্রী মোদির মন কি বাত অনুষ্ঠানে সকলে অংশ গ্রহন করেন৷ সভার কার্য বিবরণীর শুরুতেই গত কার্য্যকারিণী বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় স্তরে এবং প্রদেশ স্তরে যে সমস্ত নিষ্ঠাবান কার্যকর্তারা প্রয়াত হয়েছেন তাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এবং অরুনাচল-চীন সীমান্তে, জন্ম-কাশ্মীরের গালোয়ান প্রদেশে চীনের ঘাতক বাহিনীর হাতে নিহত বীর জওয়ানদের উদ্দেশ্যে শোক জ্ঞাপন করা হয় এবং নীরবতা পালন করা হয়৷


এই সভার শুরুতেই দলের রাজ্য সভাপতি উপস্থিত সবাইকে স্বাগত জানান এবং বর্তমান করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ এবং কার্যকর্তাদের ভূমিকা উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন৷ প্রথম পর্যায়ে রাষ্ট্রীয় মহামন্ত্রী অরুন সিংএই ভার্চুয়েল কার্য্যকারিণীতে উপস্থিত সকলকে সম্বোধন করতে গিয়ে বলেন যে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের সদিচ্ছা এবং কর্মতৎপরতায় ত্রিপুরা বিকাশের অন্য ধারায় এগিয়ে চলেছে৷ এমনকি বর্তমান অতিমারীর সময়ের সময়োাপযোগি সিদ্ধান্ত গ্রহনের ফলে রাজ্যের মানুষ সুরক্ষিত রয়েছে৷ কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন যে, ২০১৮ সালে এই রাজ্য থেকে কমিউনিস্টদের বিতরণ করে রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠায় নিষ্ঠাবান কর্মীদের ভুমিকা গোটা দেশে এক অনন্য নজির৷


এই সভায় রাজনৈতিক প্রস্তাব উত্থাপন করেন ত্রিপুরা প্রদেশ বিজেপির মুখ্য প্রবক্তা সুব্রত চক্রবর্তী৷ এই প্রস্তাবে বিশ্ব অতিমারী করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবায় অত্যন্ত পারদর্শিতার সঙ্গে তার নিয়ন্ত্রনে গৃহীত ব্যবস্থাদিসহ প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা, আত্মনির্ভর ভারত এবং অন্যান্য দৃঢ় ও ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহনের জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷ রাজ্যের ক্ষেত্রে হীরার বাস্তবায়ন ও হীরা প্লাস, মুখ্যমন্ত্রী স্ব-নির্ভর যোজনা, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পানীয় জল, জনজাতি কল্যাণ সহ সরকারের সুদূর প্রসারী সদর্থক উদ্যোগের উল্লেখ করেন ও বিরোধীদের নেতিবাচক জনস্বার্থ বিরোধী ও বিভ্রান্তিমূলক প্রয়াসের নিন্দা জানান৷ এই প্রস্তাবের সমর্থনে আলোচনায় অংশ গ্রহন করেন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক এবং রাজীব ভট্টাচার্য৷ এরপর অর্থনৈতিক প্রস্তাব পেশ করেন ত্রিপুরা প্রদেশ সম্পাদক যাদব লাল নাথ৷ এই প্রস্তাবে রাজ্যের উন্নয়নে কৃষি, বিপনন, উৎপাদন ক্ষেত্র এবং এমএসএমই-র দুর্বলতা দূর করে তাকে স্বয়ংম্ভরতার ভিত্তিতে রূপান্তরিত করার প্রস্তাব করেন৷ তার সমর্থনে আলােচনায় অংশ গ্রহন করেন উপ-মুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মন এবং রাজ্যের সহ-সভাপতি ডাঃ অশোক সিনহা৷


বিস্তৃত আলোচনার পর প্রস্তাব দুটি সর্বসম্মতিভাবে গৃহিত হয়৷ এরপর রাজ্য সহ-সভাপতি তথা বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন৷ এতে সাংগঠনিক সর্বশেষ অবস্থা, কার্যকর্তাদের সমস্যা ও কার্যকর্তা নির্মান, দলীয় শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন৷ এরপর আসাম এবং ত্রিপুরার সংগঠন মহামন্ত্রী ফনীনাথ শর্মা আগামীদিনের কর্মসূচী নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন৷ যার মধ্যে উল্লেখ্য আগামী ১৭ই সেপ্ঢেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ৭০তম জন্মদিন৷ তাই ১৪-২০সেপ্ঢেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে সেবা সপ্তাহ রূপে দিনটি উদ্যাপিত করা হবে৷ এছাড়া, ৫ই সেপ্ঢেম্বর শিক্ষক দিবস৷ তাই ৫ এবং ৬ সেপ্ঢেম্বর দুইদিনব্যাপী বুদ্ধিজীবি সেলের উদ্যোগে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি প্রসঙ্গে জেলা ও মন্ডল স্তরে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করা হবে৷ এছাড়া আগামী দিনে দলের প্রশিক্ষণ শিবির করা সহ অন্যান্য সাংগঠনিক বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে বিস্তৃত পথ নির্দেশিকা নিয়ে আলোচনা করেন৷ উত্তর পূর্বাঞ্চলের সাংগঠনিক মহামন্ত্রীজয় জাম্বুয়াল বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন ক্ষমতা বিজেপির মূল লক্ষ্য নয়৷
কিন্তু সমাজের কল্যাণ ও সমাজ পরিবর্তনের জন্য ক্ষমতা একটি মাধ্যম মাত্র৷ এই লক্ষ্য পূরণে বিজেপির বিচার ধারায় কার্যকর্তা নির্মানের জন্য তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন৷ অপরদিকে, বিজেপি মহিলা মোচ’ার রাষ্ট্রীয় সভানেত্রী বিজয়া রাহাতকরজী স্মার্ট সিটি প্রকল্পে ত্রিপুরার অবস্থান ৭৪তম স্থান থেকে ৫৬তম স্থানে আসা ত্রিপুরার অপরাধ প্রবনতা বিশেষ করে মহিলা সংক্রান্ত অপরাধ হ্রাস পাওয়ায় এবং ত্রিপুরাকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের লজেস্টিক হাব হিসাবে গড়ে তােলার জন্য রাজ্য সরকারের ঐকান্তিক প্রয়াসে সন্তোষ ব্যক্ত করেন এবং রাজ্য সরকার তথা মুখ্যমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান৷ বিজেপি সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব রাজ্য বিজেপি সরকার এবং দলের কাজে সন্তোষ ব্যক্ত করেন এবং দল-মতের উর্দ্ধে উঠে দেশ গঠনের নিয়োজিত থাকার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন৷
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতৃত্ব নির্মান এবং জন সংযোগের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন৷ তিনি বলেন সরকার ও সংগঠনের সমন্বয়ের মাধ্যমে মানুষের কল্যাণই হচ্ছে প্রধান লক্ষ্য৷ রাজ্যের বর্তমান অগ্রগতির ধারাকে অব্যাহত রেখে ত্রিপুরাকে আর্থিক সমৃদ্ধি প্রদানের মাধ্যমে অষ্টলক্ষ্মী অন্যতম কেন্দ্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করাই সরকারের মূল লক্ষ্য৷
পরিশেষে রাজ্য সভাপতির সমাপ্তি ভাষণ ও ধন্যবাদ জ্ঞাপনের পর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে এই কার্যকারিণী বৈঠক সমাপ্তি ঘটে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *