গুয়াহাটি, ২৮ আগস্ট (হি.স.) : ছাত্ৰবৃত্তির নামে অসম সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের মঞ্জুরিকৃত ৫০১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকায় কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছে। সম্প্রতি বৃহৎ পরিমাণের এই অর্থ আত্মসাৎ করার অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালের কাছে উত্থাপিত করে এ ব্যাপারে তদন্ত দাবি করেছিলেন পর্ষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুমিনুল আওয়াল গরিয়া। আওয়ালের অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্ৰী বিপুল পরিমাণের ছাত্রবৃত্তি কেলেঙ্কারির সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। মুখমন্ত্ৰীর নিৰ্দেশে গতকাল থেকে সিআইডি শুরু করেছে এর প্রাথমিক তদন্ত প্রক্রিয়া।
ছাত্ৰবৃত্তির নামে বিগতদিনে বৃহৎ কেলেঙ্কারি সংঘটিত হওয়ার বিষয়ে আজ শুক্রবার গুয়াহাটিতে সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদের কাৰ্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যান মমিনুল আওয়াল জানান, বিশাল অঙ্কের এই দুৰ্নীতির প্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত সিআইডি এবং বিভিন্ন জেলার পুলিশ সুপারের কাছে বোর্ডের তরফে ১৭টি অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে কয়েকজনকে ইতিমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজন আদালত থেকে আইনের গ্যাঁড়াকলের ফাঁক গলিয়ে জামিন পেয়েছেন। ছাত্ৰবৃত্তির টাকা আত্মসাতের বৃহৎ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কিছুসংখ্যক স্কুলের প্ৰধানশিক্ষকও জড়িত।
সংখ্যালঘু ছাত্রবৃত্তির টাকায় সংঘটিত এই কেলেঙ্কারিকে সৰ্বকালের বৃহৎ কেলেঙ্কারি আখ্যা দিয়ে মমিনুল আওয়াল বলেন, ছাত্ৰবৃত্তির জন্য অসমের এক হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যালঘু ছাত্ৰছাত্ৰীরা আবেদন করেছিল। ছাত্ৰবৃত্তির নামে ৫০১ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করা হয়েছিল। কিন্তু বরাদ্দকৃত অর্থের অধিকাংশ টাকাই দালালচক্র ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানশিক্ষকরা মিলে আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সর্বত্র। এই বৃহৎ কেলেঙ্কারির তদন্ত করতে একটি কমিটি গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে ২৬ জুলাই মুখ্যমন্ত্ৰী সৰ্বানন্দ সনোয়ালের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন মমিনুল। তাঁর আবেদনে সাড়া দিয়ে মুখ্যমন্ত্ৰী গোটা ছাত্রবৃত্তি কেলেঙ্কারির বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সিআইডি-র হাতে দায়িত্ব সমঝে দেওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে গতকাল থেকে সিআইডি কর্তারা প্ৰাথমিক তদন্ত আরম্ভ করে দুর্নীতেতে জড়িত দুজনকে গ্ৰেফতার করেছে।
আজ সংখ্যালঘু উন্নয়ন বোর্ডের দুই কৰ্মচারীকে তথ্য সংগ্রহের জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে। মমিনুল বলেন, ছাত্ৰবৃত্তি কেলেঙ্কারির সঙ্গে নগাঁওয়ের ৫১টি ব্যাঙ্ক সেবা কেন্দ্ৰ (সিএসপি) জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ সম্পৰ্কিত তথ্য-সংবলিত কাগজপত্র পুলিশের কাছে জমা পড়েছে। হামি একে রসুল কলেজ নামের এক প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহজনক ৩২২ জন শিক্ষাৰ্থীর প্রত্যেককে ৩০ হাজার করে মোট ৯৬ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা ব্যাঙ্ক থেকে তুলে আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জড়িত রয়েছেন এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বত্বাধিকারীদের গ্ৰেফতার করা হয়েছে। বকো বিধানসভা এলাকার বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ৰবৃত্তির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই দুৰ্নীতিতে একাংশ রাজনৈতিক ব্যক্তিও জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। বলেন, বরাক উপত্যকায় সংঘটিত এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বলে কংগ্ৰেস এবং এআইইউডিএফ-এর কতিপয় নেতা-উপনেতার নামও প্রকাশ্যে এসেছে। বিজেপির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিও এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে লিপ্ত রয়েছেন বলে বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন মমিনুল আওয়াল। তাঁর আশা, তদন্তে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে সামনে চলে আসবে।
অন্যদিকে বিধানসভায় তিনজন সংখ্যালঘু বিধায়ক তাঁর বিরুদ্ধে বহুবার মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করে লম্ফঝম্ফ করার প্ৰসঙ্গ উল্লেখ করে আওয়াল বলেন, সেই সব সংখ্যালঘু বিধায়কদের ছাত্ৰবৃত্তি কেলেঙ্কারিতে জড়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নিজের স্থিতি প্ৰকাশ করা বাঞ্ছনীয়। বৰ্তমানে এই বৃহৎ কেলেঙ্কারির বিষয়ে তাঁরা রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করছেন। বরাকের একজন সংখ্যালঘু বিধায়কও কতবার কাল্পনিক অভিযোগ উত্থাপন করেছেন তাঁর বিরুদ্ধে। ছাত্ৰবৃত্তি দুৰ্নীতির সঙ্গে কংগ্ৰেস এবং এআইইউডিএফ-এর একাংশ বিধায়ক জড়িত বলে সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। এ ব্যাপারে তাঁরা মৌনতা অবলম্বন করছেন। বলেন, রুপহি¸ সামাগুড়ি সহ কয়েকজন সংখ্যালঘু বিধায়ক বিশাল এই কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে ছাত্ৰবৃত্তি কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের অধিকাংশই কংগ্ৰেস বা এআইইউডিএফ দলের সঙ্গে জড়িত, দাবি মমিনুলের।
ছাত্ৰবৃত্তি কেলেঙ্কারির কোনও অভিযোগ থাকলে তাৎক্ষণিকভাবে সংখ্যালঘু উন্নয়ন পর্ষদে জানানোর আহ্বানও জানান মমিনুল আওয়াল গরিয়া। পাশাপাশি এ ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতাও চেয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে অনেকেই এই দুৰ্নীতি সম্পৰ্কিত অভিযোগ পর্ষদে পাঠিয়েছেন। সিআইডি তদন্তে দুৰ্নীতির সব তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেফতার করতে তদন্তকারী সংস্থা সক্ষম হবে বলে আশা ব্যক্ত করেছেন মমিনুল আওয়াল।
তিনি বলেন, জাতি-মাটি-ভিটে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যতিক্ৰমী পদক্ষেপ গ্ৰহণ করেছে সৰ্বানন্দ সনোয়াল সরকার। সর্বানন্দকে সৰ্বকালের শ্ৰেষ্ঠ মুখ্যমন্ত্ৰী বলে অভিহিত করে মমিনুল বলেন, দুৰ্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন কঠোর স্থিতি গ্ৰহণ করে সনোয়াল ব্যতিক্ৰম মুখ্যমন্ত্ৰী হিসেবে জনগণের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তাঁর কঠোর স্থিতির জন্যই এপিএসসি কেলেঙ্কারিতে জড়িত প্রত্যেকেই গ্রেফতার হয়েছেন। অনুরূপভাবে ছাত্ৰবৃত্তি কেলেঙ্কারির সিআইডি তদন্ত প্রক্রিয়া চালানো এই মুখ্যমন্ত্ৰীর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে। তিনি অসমের ঐতিহ্যবাহী সত্ৰসমূহের জমি বেদখলমুক্ত করে উন্নয়নের জন্য অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। ভাষা-সংস্কৃতি রক্ষার স্বাৰ্থে অসম সাহিত্য সভাকে অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। জাতি-মাটি-ভিটে রক্ষার স্বাৰ্থে মুখ্যমন্ত্ৰী এ ধরনের বহু ব্যতিক্ৰমী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন মমিনুল আওয়াল গরিয়া।