গুয়াহাটি, ২২ আগস্ট (হি.স.) : রাজধানী গুয়াহাটির মালিগাঁও এলাকায় গোশালার আদিংগিরি পাহাড়ে শুক্রবার রাতে একটি শিশু চিতাবাঘের হামলায় প্রাণ হারিয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় শিবম কুমার (৬) নামে ওই শিশুটি ঘরের বাইরে খেলছিল। হঠাৎ বাড়ির পেছনের জঙ্গল থেকে একটি প্রকাণ্ড চিতা বেরিয়ে এসে শিবমের ঘাড়ে কামড়ে ধরে তাকে জঙ্গলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সে সময়ে বাচ্চাটির মা সামনে দাঁড়িয়ে অন্য মহিলাদের সাথে গল্প করছিলেন। ছেলেকে চোখের সামনে বাঘ টেনে নিয়ে যাচ্ছে দেখে কিছুক্ষণের জন্য বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেও চিৎকার করে ওঠেন তিনি। সাথে সাথে অন্য মহিলা ও আশপাশের মানুষ বেরিয়ে আসেন। চিৎকার শুনে বাঘটি শিবমকে ছেড়ে জঙ্গলে চলে যায়।
মাথায় ও ঘাড়ে চিতার কামড়ে গুরুতরভাবে আহত শিবমের রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সঙ্গে সঙ্গে তাকে মালিগাঁওয়ের বেসরকারি সঞ্জীবনী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ডাক্তাররা বলেন, বাঘের কামড়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয়েছিল শিবমের।
শিবমের মৃত্যুর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকা মায় গোটা গুয়াহাটিতে শোকগ্রস্ত হয়ে গেছে। এর আগে আরও কয়েকবার এই এলাকার মানুষের ওপর হামলা করেছে বাঘ। কিন্তু এভাবে কাউকে টেনে নিয়ে যায়নি। অনেকে মনে করছেন, বাঘের মুখে মানুষের রক্ত লাগায় বাঘটি নরখাদকে পরিণত হয়ে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, আদিংগিরি পাহাড়ে বেশ কয়েকটি চিতা বাঘ রয়েছে। সময় সময় তারা বেরিয়ে জনবসতি এলাকা থেকে মুরগি, কুকুর, হাঁস ধরে নিয়ে যায়। কিন্তু মানুষের ওপর এভাবে আক্রমণের ঘটনা এই প্রথম।
এদিকে ঘটনার পর জালুকবাড়ি থানার পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে ছয় বছর বয়সের শিশু শিবমের মৃতদেহটিকে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে থানায় একটি ডায়েরি করেছে।
শুক্রবার রাতে বাঘের আক্রমণে শিশুমৃত্যুর পর আজ শনিবার সকালেই বন বিভাগের আধিকারিক কর্মচারীরা এসে ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করে একটি বিশাল খাঁচা বসিয়েছে বাঘটিকে ধরার জন্য। এলাকার বাসিন্দারা এ ঘটনায় তাদের বাড়িঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ক্রমাগত পাহাড়, বন ধ্বংস করে মানুষ পাহাড়ে বসতবাড়ি বানানোর ফলে বন্য জীবজন্তুর বাসস্থান ও খাদ্য সংকটে পড়েছে। বাঘেরা তাই খাবারের সন্ধানে লোকালয়ে চলে আসে। কেবল বাঘই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বুনো হাতির দলও লোকালয়ে এসে হামলা তাণ্ডব চালায়। মানুষ মারে, বাড়িঘর ভেঙে তছনছ করে, খেতের ফসল নষ্ট করে।