BRAKING NEWS

রাবার বাগান থেকে আহরিত মধু বাজারজাতকরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সরকার : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৫ আগস্ট।। দেশ বিদেশে ত্রিপুরার পরিচিতিকে তুলে ধরতে বর্তমান রাজ্য সরকার সর্বোত্তম প্রয়াস নিয়েছে। রাবার বাগান থেকে আহরিত মধু সংগ্রহ করে রাজ্যে তৈরি বিখ্যাত বাঁশের বােতলে তা প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় খাদি ও গ্রামােদ্যোগ কমিশনের মাধ্যমে তা বাজারজাতকরণের জন্য প্রয়ােজনীয় প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর ফলে দেশ বিদেশের মানুষ এই বাঁশের বােতলের মধু দেখে অনায়াসেই বুঝতে পারবে তা ত্রিপুরার রাবার বাগান থেকে আহরিত মধু। আজ আগরতলার ধলেশ্বরে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গ্রামোেদ্যোগ কমিশন এবং ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামােদ্যোগ পর্ষদ যৌথ অফিস ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে এ অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। অনুষ্ঠানে ফলক উন্মােচন এবং একটি চারা গাছে জল সিঞ্চন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, ধূপকাঠির শলা বিদেশ থেকে আমদানির উপর শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে বিরাট সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে ধূপকাঠি শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ী এবং শিল্পীদের মধ্যে। তিনি বলেন, বর্তমানে রাজ্যে ধূপকাঠির শলা উৎপাদনের পরিমাণ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ধূপকাঠি উৎপাদন প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিকটনে পৌঁছানাের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পে ধূপকাঠির শলা উৎপাদনের জন্য ছােট ছােট মেশিন সরবরাহ সহ বিনিয়োগ করা হবে। পাশাপাশি ভর্তুকিতে ঋণদানের সুবিধাও থাকবে। এর ফলে রাজ্যে আরও বেশি কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী অভিমত ব্যক্ত করেন। মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আগর গাছের যেসব বিধিনিষেধগুলি আরােপিত ছিলাে বর্তমানে সেগুলি তুলে দেওয়া হয়েছে। আগর গাছ থেকে আগর সংগ্রহ করার জন্য প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সারুমে ফেণী নদীর উপর নির্মীয়মান সেতুর কাজ সম্পন্ন হলে চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে কম দূরত্ব অতিক্রম করে স্বল্প পরিবহণ খরচে ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে রাজ্যের উৎপাদিত ধূপকাঠি পৌছে দেওয়া সম্ভব হবে। তিনি বলেন, শিল্পের জন্য ত্রিপুরায় সিঙ্গল উইন্ডাে অ্যাপ্লভাল বাই অল গভর্নমেন্ট এজেন্সিস অব ত্রিপুরা (এস ডব্লিউ এ এ জি এ টি) চালু করা হয়েছে। এখন থেকে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন অনুমতি ও ছাড়পত্র এক জাগয়া থেকে অনলাইনে পাওয়া যাবে। শিল্প উদ্যোগীদের সহায়তায় শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর এবং ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগম থেকে বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হতাে। বর্তমানে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ ভর্তুকি দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ত্রিপুরায় যােগাযােগের ক্ষেত্রে হীরা অর্থাৎ হাইওয়েজ, আইওয়েজ, রেলওয়েজ এবং এয়ারওয়েজ মডেল কর্মসূচিতে এগিয়ে চলেছে।

বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়কালে হাইওয়েজ, ইন্টারনেট পরিষেবা, রেল পরিষেবা এবং এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বৃদ্ধি পেয়েছে জাতীয় সড়কের জন্য কেন্দ্রীয় অনুমােদিত অর্থ। ইন্টারনেট পরিষেবার উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনলাইন প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। রেলওয়েজের উন্নয়নের ফলে রাজ্যে রাজধানী সহ বিভিন্ন দূরপাল্লা এবং ডেমাে ট্রেন চলাচল করেছে। বিমান পরিষেবায়ও উন্নয়ন হয়েছে। প্রতিদিন ১৮টি বিমান রাজ্যে উঠানামা করেছে। তার সঙ্গে এখন জলপথে সংযােগ স্থাপিত হওয়ায় রাজ্য আরেক ধাপ অর্থাৎ হীরা প্লাস স্তরে এগিয়ে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় খাদি ও গ্রামােদ্যোগ কমিশনের চেয়ারম্যান বিনয় কুমার সাক্সেনা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘােষিত আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ক্ষেত্রে ত্রিপুরা বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে। এজন্য ত্রিপুরায় ধূপকাঠির শলা উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানাের কথা উল্লেখ করেন তিনি। ধূপকাঠির শলা উৎপাদন বাড়লে রাজ্যে কর্মসংস্থান যেমন সৃষ্টি হবে তেমনি বিদেশ থেকে ধূপকাঠি রপ্তানির পরিমাণ কমাতেও সহায়ক ভূমিকা নিতে পারবে ত্রিপুরা। তিনি রাবার বাগান থেকে মধু সংগ্রহ বা প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়টির উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন।

অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামােদ্যোগ পর্ষদের চেয়ারম্যান রাজীব ভট্টাচার্য বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত আত্মনির্ভর ভারতকে সামনে রেখে রাজ্য সরকারের সহায়তায় খাদি সামগ্রীর উন্নয়নের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে ত্রিপুরা খাদ্য ও গ্রামােদ্যোগ পর্ষদ। মৌমাছি প্রতিপালক সুবিধাভােগীদেরকে মধু উৎপাদনের জন্য প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি বিনামূল্যে সহায়ক সামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের উৎপাদিত মধু বহিরাজ্যে বাজারজাতকরণের উদ্যোগ নেবে খাদি পর্ষদ বলে চেয়ারম্যান শ্রী ভট্টাচার্য জানান।

এছাড়া অনুষ্ঠানে শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে এবং অধিকর্তা প্রশান্ত কুমার গােয়েল উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সিপিডব্লিউডি-র আগরতলা শাখার চিফ ইঞ্জিনিয়ার ব্রীজেন্দ্র সিংহ, খাদি ও গ্রামােদ্যোগ কমিশনের ত্রিপুরা শাখার ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা বিক্রম খান্ডেকর। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামােদ্যোগ পর্ষদের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক ইঞ্জিনিয়ার রাজেশ কুমার দাস।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মুখ্যমন্ত্রী জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানান। ত্রিপুরা খাদি ও গ্রামােদ্যোগ পরীদের বিভিন্ন কর্মসূচি সম্বলিত একটি প্রচার পুস্তিকার আবরণ উন্মােচন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে পর্ষদের সমস্ত কর্মচারীগণ তাদের একদিনের বেতন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে রাজ্যের উৎপাদিত মধু তুলে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য, ত্রিতল বিশিষ্ট এই ভবনটি ১২০৬.৮০ বর্গ কিলােমিটার জায়গায় নির্মিত হবে।

সি পি ডব্লিউ ডি এই ভবনটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে। এই ভবনটির নির্মাণ কাজ দেড় বছরের মধ্যে সম্পন্ন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ নির্মাণ কাজের জন্য ৭ কোটি ৭২ লক্ষ ১৫ হাজার ৫০০ টাকার অনুমােদন কেন্দ্রীয় খাদি ও গ্রামােদ্যোগ কমিশন থেকে দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *