নয়াদিল্লি, ১৫ আগস্ট (হি.স.): এলওসি থেকে এলএসি, ভারতের সার্বভৌমত্বের দিকে যে কেউ নজর দিয়েছে, আমাদের দেশের সৈনিকরা যথাযোগ্য জবাব দিয়েছে। ভারত কী পারে তা লাদাখে দেখেছে বিশ্ব। শনিবার, ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসে ভারতীয় সৈনিকদের এভাবেই কুর্নিশ জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মবলিদান স্মরণ করার দিন আজ। স্বাধীনতা রক্ষায় বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, এই অবদান ভোলার নয়। আমাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং পুলিশ-সহ সুরক্ষা কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন আজই।
শনিবার সকালে সর্বপ্রথম টুইট করে দেশবাসীকে ৭৪ তম স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী। পরে রাজঘাটে গিয়ে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীকে প্রণাম জানান প্রধানমন্ত্রী। সেখান থেকে লালকেল্লা পৌঁছে যান প্রধানমন্ত্রী, লালকেল্লার লাহোরি গেটে মোদীকে স্বাগত জানান প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং। লালকেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পরই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন প্রায় ৪ হাজার অতিথি। তবে করোনা-সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ অন্যান্য বিধি কড়া ভাবেই মানা হয়েছে এ দিনের অনুষ্ঠানে। উপস্থিত ছিলেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা গুলাম নবী আজাদ এবং চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ বিপিন রাওয়াত প্রমুখ।
জাতির উদ্দেশে ভাষণের শুরুতেই সংগ্রামী ও শহিদদের প্রণাম জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত সবাইকে প্রণাম জানান প্রধানমন্ত্রী। এরপর তিনি বলেন, স্বাধীন ভারতে আজ আমরা নিঃশ্বাস নিচ্ছি। কিন্তু, এখন অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি আমরা, অন্যবারের মতো এবার ছোট বাচ্চাদের সামনে দেখতে পাচ্ছি না। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে করোনা সবাইকে আটকে দিয়েছে। এই কোভিড পরিস্থিতিতে করোনা-যোদ্ধারা দেশবাসীর সেবা করেছেন। করোনা যোদ্ধাদের আমি প্রণাম জানাই। স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রণাম জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মবলিদান স্মরণ করার দিন আজ। স্বাধীনতা রক্ষায় বহু মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, এই অবদান ভোলার নয়। আমাদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং পুলিশ-সহ সুরক্ষা কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর দিন আজই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ নতুন সংকল্প নেওয়ার দিন। করোনার বিরুদ্ধে দেশবাসীকে একজোট হতে হবে, সবাই মিলে করোনাকে হারাব।
করোনা-পরিস্থিতিতেই দেশকে আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার বার্তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যেই ১৩০ কোটি ভারতবাসী স্বাবলম্বী হওয়ার সঙ্কল্প নিয়েছিলেন এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’ দেশবাসীর মনে রয়েছে। এই স্বপ্ন অঙ্গীকারে পরিণত হচ্ছে। আত্মনির্ভর ভারত ১৩০ কোটি দেশবাসীর মন্ত্র হয়ে উঠেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভারত এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবেই। দেশের নাগরিকদের ক্ষমতা ও আত্মবিশ্বাস নিয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। আমরা কোনও কিছু করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললে, সেই লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রাম নিই না। জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সৃজনশীলতা ও কৌশল বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে দক্ষতা। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন দুনিয়ার কাছে প্রেরণা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে দরকার আত্মবিশ্বাস। কয়েক মাস আগে পর্যন্ত এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই কিট এবং ভেন্টিলেটর আমরা আমদানি করছিলাম, কিন্তু এখন ভারত নিজ দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি অন্য দেশগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ভোকাল ফর লোকালের বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্ত ভারতের মানসিকতা হওয়া উচিত ভোকাল ফর লোকাল। কাঁচামাল ও কৃষির দাম বহির্বিশ্বে বাড়াতে হবে। স্থানীয় জিনিসকে বিশ্বের দরবারে নিতে হবে। আমাদের দেশ কীভাবে আরও এগিয়ে যাবে, এটাই ভাবতে হবে। বহু বড় কোম্পানি ভারতের দিকে মুখিয়ে রয়েছে। মেক ফর ওয়ার্ল্ড-এর সঙ্গে মেক ইন ইন্ডিয়া মন্ত্র নিয়ে চলতে হবে আমাদের। প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় শিক্ষানীতিতে বদল ঘটেছে, সারা পৃথিবী তা দেখছে। ব্যাঙ্কিং সংযুক্তিতে প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও রেকর্ড হয়েছে এই সময়ে। দেশ এগিয়ে চলেছে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। গরিবদের জন্য জনধন অ্যাকাউন্টে লাখ লাখ টাকা আসবে, কেউ ভেবেছিলেন?
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, আত্মনির্ভর কৃষি ও আত্মনির্ভর কৃষকই দেশের আসল সত্যি। গত বছর প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগে রেকর্ড গড়েছে ভারত। কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নে এক লক্ষ কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে। এদিন প্রত্যেক নাগরিকের স্বাস্থ্য কার্ডের ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। মোদীর কথায়, জাতীয় ডিজিটাল হেলথ মিশন শুরু আজই। প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে থাকবে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কার্ড। এক পরিচয়পত্রে রোগ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য। করোনা-ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে তিনটি ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে, বৈজ্ঞানিকদের সবুজ সঙ্কেত পাওয়া মাত্রই গণ উৎপাদনে প্রস্তুত ভারত। করোনা ভ্যাকসিনে আত্মনির্ভরতার পথে ভারত। সবচেয়ে কম দামে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়ার পথও চূড়ান্ত। প্রতিবেশী শত্রুদেশগুলিকে কড়া বার্তা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এলওসি থেকে এলএসি, আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের দিকে যে কেউ নজর দিয়েছে, আমাদের সৈনিকরা যথাযোগ্য জবাব দিয়েছেন। ভারত কী পারে তা লাদাখে দেখেছে বিশ্ব। ভারতের প্রতিরক্ষা হবে আরও উন্নত, সীমান্ত ও উপকূলে আরও কড়া প্রহরা। তরুণ প্রজন্মকে প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ভারতের হাতে থাকা ১৩০০ দ্বীপে হবে বিশেষ উন্নয়ন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক সরঞ্জামেও আত্মনির্ভর হয়েছে ভারত। তেজস যুদ্ধবিমানকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। করোনা এমন কোনও বড় বিপত্তি নয়, যা ভারতকে আত্মনির্ভর হওয়ার পথে বাধা দেবে। মোদীর কথায়, আগামী ১০০০ দিনের মধ্যে লাক্ষাদ্বীপকেও সাবমেরিন অপটিক্যাল ফাইবার কেবলের মাধ্যমে সংযুক্ত করা হবে। ভাষণের শেষে রাম মন্দির প্রসঙ্গে মোদী বলেন, মাত্র ১০ দিন হল, অযোধ্যায় রাম মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, কয়েক শতাব্দীর রামজন্মভূমি ইস্যু শান্তিপূর্ণভাবেই সমাধান হয়েছে। দেশবাসীর আচরণ নজিরবিহীন ছিল এবং ভবিষ্যতের অনুপ্রেরণা।