চিকিৎসককে থুতু মামলায় চার অভিযুক্ত সহ ছয়জনের অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর

আগরতলা, ৪ আগস্ট (হিঃসঃ)৷৷ করোনা-র সাথে যুদ্ধে সামনের সারির সৈনিককে থুতু দেওয়ার অভিযোগে রুজু মামলায় ধৃত চারজনকে আজ পুলিশ গ্রেফতার করেছে৷ তাদের আদালতে সোপর্দ করে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজত এবং টিআই প্যারেডের আবেদন জানিয়েছিল৷ কিন্তু আদালত ধৃত চারজনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছে৷ সাথে পুলিশের টিআই প্যারেডের আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে আদালত৷


প্রসঙ্গত, শিশু সহ করোনা আক্রান্ত পাঁচ জন্মদাত্রী এবং এক গর্ভবতী মহিলাকে ত্রিপুরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ভগৎ সিং কোভিড কেয়ার সেন্টারে ভরতির জন্য নেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু সেখানে ভরতি অন্য করোনা আক্রান্তরা তাতে আপত্তি জানান৷ খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন পশ্চিম জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. সংগীতা চক্রবর্তী৷ কিন্তু, রোগীরা তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল দেন৷ এ-বিষয়ে ডা. সংগীতা জানিয়েছিলেন, সদ্যজাত সন্তান নিয়ে জন্মদাত্রীরা এবং পিপিই কিট পরে স্বাস্থ্য কর্মীরা ৫ ঘণ্টা ধরে বাইরে অপেক্ষা করছিলেন৷ কিন্তু তাদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না৷ এমন-কি, তাঁকে লক্ষ্য করে থুতু ফেলা হয়েছে এবং এক যুবক উপর থেকে জল ফেলেছে৷ তিনি বলেন, অবশেষে কোনও উপায় না পেয়ে ওই করোনা আক্রান্তদের জিবি-র কোভিড হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে৷
তিনি জানান, সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিকর্তা এবং পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন৷ কর্তব্যরত অবস্থায় লাঞ্ছনার শিকার হওয়ায় সে-বিষয়ে রিপোর্টে করেছিলেন তিনি৷ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক পুলিশ সুপারের সাথে আলোচনাও করেছেন ভুক্তভোগী ডাক্তার৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা বলেন, নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় ওই ঘটনায় মামলা করা হয়েছে৷ পশ্চিম জেলা পুলিশ সুপার মানিক দাস জানিয়েছেন, করোনা অতিমারির আইন সকলকে মেনে চলতে হবে৷ এক্ষেত্রে সরকারি কর্মচারী এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের উপর হামলাহুজ্জতি কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না৷

চিকিৎসককে লক্ষ্য করে থুতু দেওয়ার ঘটনায় প্রশাসনের তরফে করোনা আক্রান্তের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছিল৷ স্বাস্থ্য অধিকর্তা নিউ ক্যাপিটাল কমপ্লেক্স থানায় করোনা আক্রান্তের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিলেন৷ এফআইআরের ভিত্তিতে মামলা রুজু করেছেন থানা কর্তৃপক্ষ৷ পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে অভিযুক্তদের শনাক্ত করেছে এবং তাদের পৃথক রাখার ব্যবস্থা হয়েছে৷ ওই ঘটনায় সহকারী সরকারি আইনজীবী কর্ণজিত দে ত্রিপুরা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান৷ বিচারপতি অরিন্দম লোধের সিঙ্গল বেঞ্চে ওই মামলায় শুনানি হয়েছে৷ ত্রিপুরা হাইকোর্ট জামিন মঞ্জুর করেনি৷ কিন্তু আগামী ৫ আগস্ট পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে কেস ডায়েরি জমা এবং টিআই প্যারেডের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি লোধ৷
আজ ত্রিপুরা পুলিশ ওই মামলায় বিশ্বজিৎ দাস, মিলান দাস, সহকারী সরকারি আইনজীবী কর্ণজিৎ দে এবং রঞ্জিত সাহাকে গ্রেফতার করেছে৷ তাদের আজকেই আদালতে সোপর্দ করা হয়৷ এ-বিষয়ে পিপি বিদ্যুৎ সূত্রধর বলেন, অভিযুক্তদের টিআই প্যারেড এবং ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছিল৷


এদিকে, ধৃতদের পক্ষে আইনজীবী সম্রাট কর ভৌমিক বলেন, আদালতে জামিনের আবেদন জানানো হয়েছে৷ কারণ, তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়৷ তিনি বলেন, ঘটনার দিন তাঁর মক্কেল প্রতিবাদ করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু কুলকুচি করে জল ফেলা কিংবা থুতু দেওয়ার মতো জঘন্য কাজ করেননি৷ সিসিটিভি ফুটেজেও এমন কোনও প্রমাণ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন না৷ তাঁর বক্তব্য, সিসিটিভি ফুটেজে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কারণ আদালতে আজ পুলিশ তা পেশ করেনি৷
সম্রাটবাবুর কথায়, ওইদিন সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে জন্মদাত্রী মা ও তাঁদের আত্মীয়কে একই ঘরে থাকতে দেওয়া হলে তাঁর মক্কেল আপত্তি করেছিলেন৷ কারণ তাঁর মক্কেলের বক্তব্য ছিল, তাঁদেরই চিকিৎসা সঠিকভাবে হচ্ছে না, সেই জায়গায় সদ্যজাত সন্তানের সঠিক চিকিৎসার খুব প্রয়োজন রয়েছে৷ তাই, অন্যত্র যাওয়াই উচিত হবে বলে চিকিৎসক সংগীতা চক্রবর্তীর সাথে ওই বিষয়ে বাদানুবাদ হয়েছিল৷ সম্রাট কর ভৌমিক সাফ বলেন, মামলায় প্রচুর অসঙ্গতি রয়েছে৷
আজ পশ্চিম জেলা অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত উভয় পক্ষের সওয়াল শেষে ধৃত চারজনের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন মঞ্জুর করেছে৷ আগামী ২৯ আগস্ট পর্যন্ত তাঁদের জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে৷ সাথে টিআই প্যারেডের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে আদালত৷ কারণ ইতিমধ্যে অভিযুক্ত সহকারী সরকারি আইনজীবী কর্ণজিৎ দে-র সংবাদ প্রকাশ্যে এসেছে, জানালেন পিপি বিদ্যুৎ সূত্রধর৷ এদিকে, হাপানিয়া কোভিড কেয়ারে ধৃত দুজকে আদালতে তোলা হয়েছিল৷ তাদেরকেও আদালত জামিন মঞ্জর করেছে বলে জানা গিয়েছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *