ওম প্রকাশ সিং
কলকাতা, ২৫ জুলাই (হি.স.): ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ রুখতে সর্বদা সজাগ রয়েছে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ), কিন্তু বিএসএফ-এর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য দুই দেশের সীমান্তে কাঁটাতার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গের আইজি অশ্বিনী কুমার সিং এমনই মনে করেন। বহুভাষী সংবাদ সংস্থা হিন্দুস্থান সমাচার-কে দেওয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গের আইজি অশ্বিনী কুমার সিং বলেছেন, ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ, তবে এই সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে সীমান্তে অনুপ্রবেশ রুখতেই হবে। এজন্য কাঁটাতারের বেড়াজাল খুব সহায়ক হবে। ভারত-বাংলাদেশের বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেছেন, বিএসএফ-এর পাশাপাশি বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসও ভারতে অনুপ্রবেশ রুখতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছে।
আইজি জানিয়েছেন, অনেক সময় পশু ও মাদক পাচারকারীরা বিএসএফ জওয়ানদের উপর হামলা চালায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসকে একটি আপত্তি চিঠি দেওয়া হয়েছে, ওই চিঠিতে ভারতে অনুপ্রবেশ রুখতে তাঁদের দিক থেকে প্রচেষ্টার জন্য অনুরোধ করা হয়। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডসও সম্মতি জানিয়েছে। বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস প্রধান একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন, ওই নির্দেশিকা অনুযায়ী অনুপ্রবেশ রুখতে আরও সজাগ হবেন বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডস জওয়ানরা।
বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে অবাঞ্ছনীয় তত্ত্ব
বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গের আইজি জানিয়েছেন, সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে বিএসএফ-এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। অভিযোগ করা হচ্ছে, সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করা হচ্ছে। কিন্তু, বিএসএফ সর্বদাই মানব জীবনের মূল্যবোধকে প্রাধান্য দেয়। বিএসএফ জওয়ানরা আক্রান্ত হলেই পাচারকারীদের প্রহার করা হয়। আসলে পশু, মাদক ও অস্ত্র কারবারিরা বিএসএফ জওয়ানদের ঘিরে তাঁদের হত্যা করার চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার জন্য গুলি চালান বিএসএফ জওয়ানরা। সর্বপ্রথম শুন্যে গুলি চালানো হয়। তারপরও যদি পাচারকারীরা হামলা চালাতে থাকে, তখন নিজেদের প্রাণ বাঁচাতে ছড়রা গুলি চালানো হয়। যদিও এমন সম্ভাবনা অনেক কম। এরফলে পাচারকারীরা ভয়ে পালিয়ে যায়, চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জওয়ানদের প্রাণ বেঁচে যায়। আইজি জানান, বাংলাদেশ হোক অথবা ভারত-প্রত্যেকের জীবনের মূল্য রয়েছে, বিএসএফ তা ভালো করেই বোঝে। এজন্য কারও উপর নির্মম আচরণ করা হয় না।
রাজ্য সরকারের সহযোগিতা পাওয়া যায়
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে আইজি অশ্বিনী কুমার সিং জানিয়েছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলে যখনই রাজ্য সরকারের প্রয়োজন লাগে, তখনই সমর্থন পাওয়া যায়। তিনি বলেছেন, কখনও কখনও পাচারকারীদের পাকড়াও করতে অথবা অপরাধ রুখতে বিএসএফকে পদক্ষেপ নিতে হয়। সর্বদাই স্থানীয় পুলিশের সমর্থন মিলেছে।
সীমান্তে অপরাধ রুখতে সচেতনতা প্রচার
আসলে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের মধ্যে অনেকেই মাদক অথবা অন্য কিছু পাচারের সঙ্গে যুক্ত। অনেকের তো প্রধান পেশা পাচার করা। তারা গবাদি পশু, মাদক, অস্ত্র প্রভৃতি পাচার করে বিপুল অর্থ উপার্জন করে, কিন্তু বিএসএফ এসব রুখতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনকে সতর্ক করতে শিবিরের আয়োজন করে চলেছে। এই অপরাধ জীবনে কী প্রভাব ফেলবে, সে সম্পর্কে মানুষজনকে বোঝানো হয়। কোনও যুবক যদি এই অপরাধমূলক কাজকর্মে জড়িয়ে পড়ে তাহলে জীবনে অন্য কোনও কাজ সে করতে পারবে না। এমনকি পড়াশোনাও শেষ হয়ে যায় এবং জীবন দিশাহীন হয়ে পড়ে। আইজি দাবি করেছেন, এই ধরনের সচেতনতামূলক প্রচারের ইতিবাচক ফলাফল মিলেছে। অনেকেই পাচার সংক্রান্ত অপরাধ করা থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।
পড়ুয়াদের জন্য চালানো হয় কেরিয়ার গাইড
আইজি বলেছেন, সীমান্তবর্তী অঞ্চলের পড়ুয়ারা প্রায়শই কেরিয়ার গাইডের জন্য বিএসএফ জওয়ান অথবা আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আর তাই বিভিন্ন স্থানে শিবিরের আয়োজন করে পড়ুয়াদের কেরিয়ারের গাইড দেওয়া হয়। বিএসএফ-এ ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে অন্য সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন প্রভৃতি বিষয়ে গাইড করা হয়।
বিপর্যয়ের সময় স্থানীয়দের মানুষদের কাছে ভগবান হয়ে ওঠেন বিএসএফ জওয়ানরা
অশ্বিনী কুমার সিং বলেছেন, জরুরি পরিস্থিতি যেমন ঘূর্ণিঝড় অথবা অন্য কোনও পরিস্থিতিতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন বিএসএফ জওয়ানরা। জীবনযাপন, খাওয়া, চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়। পরিবারের সদস্যদের মতো তাঁদের দেখভাল করা হয়।
সীমান্তে শুন্য অপরাধের লক্ষ্য
হিন্দুস্থান সমাচার-এর সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে আইজি জানিয়েছেন, সীমান্তে শুন্য অপরাধের লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছে বিএসএফ। এর মধ্যে রয়েছে চোরাকারবারি বন্ধও। এই লক্ষ্যে স্থানীয় পুলিশ, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড এবং স্থানীয় মানুষজনের অংশগ্রহণ অতিব গুরুত্বপূর্ণ। জওয়ানদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতেও বলা হয়েছে। বিএসএফ টিমের আধিকারিকদেরও অপরাধ রুখতে অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। শুধুমাত্র কঠোরতা নয়, মানুষকে অপরাধ থেকে দূরে রাখতে নৈতিক ও মামসিকভাবেও চেষ্টা করা হচ্ছে।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের জন্য অনুপ্রবেশ কমেছে
ভারতে এনআরসি লাগু হওয়ার ভয় অথবা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন লাগু হওয়ার জন্য সীমান্তে অনুপ্রবেশ কমেছে? এই প্রশ্নের উত্তরে পরোক্ষভাবে আইজি বলেছেন, হ্যাঁ, এই কারণে কমেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্তে অনুপ্রবেশ কিছুটা কমেছে। জওয়ানরা সজাগ থাকায় প্রশংসাও করেছেন আইজি।
উদ্ধার হওয়া গবাদি পশু দেখভালের ব্যবস্থা
অশ্বিনী কুমার সিং বলেছেন, সীমান্তে প্রচুর পরিমাণে পশুপাচার রুখে দেওয়া হয়েছে, তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল উদ্ধার হওয়া পশুদের দেখভাল করা। এখন কিছু এনজিও বিএসএফ-এর সঙ্গে কাজ করছে। তাঁরা উদ্ধার হওয়া পশুগুলিকে গোশালায় নিয়ে যান এবং ভালোভাবে দেখভাল করেন। আইজি আরও বলেছেন, সীমান্তে উদ্ধার হওয়া পশুগুলিকে দেখভাল করার জন্য আরও কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।উল্লেখ্য, পাকিস্তান সীমান্তের তুলনায় বাংলাদেশ সীমান্ত অনেকটাই শান্ত। কিন্তু, বাংলাদেশ সীমান্তে চোরাকারবারি খুব বেশি হয়। এজন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ-এর চ্যালেঞ্জ বেশি। চোরাকারবারি বন্ধ করা সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ। আইজি বলেছেন, বিএসএফ জওয়ানদের সতর্কতা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব। সীমান্তে আলারমিং সিস্টেম, কাঁটাতার এবং সিসিটিভি ব্যাবহার করে বিএসএফ-এর শক্তি বাড়ানো যেতে পারে। প্রধান বিষয় হল-ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়াজাল নিয়ে বহু আলোচনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত নজরদারি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যদিও অভিযোগ রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেড়া এবং অন্যান্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার উন্নয়নের জন্য জমি দিচ্ছে না।