রাজ্যে তিনদিনের সম্পূর্ণ লকডাউন শুরু ২৭ জুলাই , বাড়ি বাড়ি সাতদিন হবে করোনা সমীক্ষা

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ জুলাই৷৷অবশেষে করোনা মোকাবিলায় পুনরায় লকডাউনের পথে হাঁটল ত্রিপুরা সরকার৷ টানা তিনদিন সম্পূর্ণ লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে৷ আগামী সোমবার ২৭ জুলাই সকাল ৫টা থেকে ৩০ জুলাই সকাল ৫টা পর্যন্ত ত্রিপুরায় সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে৷ একই সাথে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সমীক্ষার কাজ এবং অ্যান্টিজেন টেস্টের কাজ শুরু হবে৷ শনিবার এক ভিডিও বার্তায় এই ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ এছাড়া আজ সন্ধ্যায় সচিবালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে এ-বিষয়ে সবিস্তারে জানিয়েছেন শিক্ষা ও আইনমন্ত্রী রতনলাল নাথ৷ তাঁর দাবি, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে ত্রিপুরা সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ সম্পূর্ণ লকডাউনকে সার্বিকভাবে সফল করতে তিনি রাজ্যের জনগণের কাছে আহ্বান জানান৷


শিক্ষামন্ত্রীর কথায়, সম্পূর্ণ লকডাউন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তিনি এই লকডাউনের আওতায় এবং এর বাইরে কী কী থাকবে তা-ও তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, আগামী সোমবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সমীক্ষা ও নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু হচ্ছে৷ এই সমীক্ষায় মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসকষ্ট, কোভিডের লক্ষণ যাদের রয়েছে এবং গত ১০ দিনে এই সমস্ত রোগের লক্ষণ যাদের ছিল তাদের বিবরণ লিপিবদ্ধ করবে এবং প্রয়োজন অনুসারে নমুনা সংগ্রহ করা হবে৷ সে সমস্ত সংগৃহীত নমুনা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মহকুমা ও জেলা হাসপাতাল এবং রাজ্য হাসপাতালে সুবিধা অনুযায়ী পরীক্ষা করা হবে৷ প্রয়োজনে সাবসেন্টার যেমন পঞ্চায়েত অফিস বা সুকলেও পরীক্ষা করা যেতে পারে৷

শিক্ষামন্ত্রী জানান, প্রতি টিমে ২ জন সদস্য থাকবেন যারা অঙ্গনওয়াড়ি, আশাকর্মী বা এএনএম স্টাফ পর্যায়ের হবেন এবং তাদের সাথে প্রশাসনিক স্তরের একজন থাকবেন৷ প্রতিটি দল প্রতিদিন ৩০/৪০টি বাড়ি পরিদর্শন করবেন৷ সমীক্ষা প্রক্রিয়া তদারকি করার জন্য পঞ্চায়েত সচিব, ওয়ার্ড অফিসার, শিক্ষক প্রমুখরা নিযুক্ত থাকবেন৷ সাথে তিনি যোগ করেন, সাব-সেন্টারগুলিতে যেখানে পরীক্ষা হবে সেখানে একজন মেডিক্যাল অফিসার পুরো প্রক্রিয়াটির তত্ত্বাবধান করবেন৷ বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে যারা রয়েছেন তাদের শারীরিক অবস্থা এবং টিএসআর সহ আধাসামরিক বাহিনীরর জওয়ানদেরও এই সমীক্ষার আওতায় আনা হবে৷


তাঁর দাবি, সমীক্ষার কাজ চালানোর জন্য ১০ থেকে ১২ হাজার কর্মী নিযুক্ত হচ্ছেন৷ তাদের প্রত্যেককে ত্রিপুরা সরকারের পক্ষ থেকে এককালীন ১,০০০ টাকা সাম্মানিক ভাতা প্রদান করা হবে৷ লকডাউনের ক্ষেত্রে সরকার আরোপিত বিধিনিষেধ এবং কিছু কিছু ছাড়ের বিষয়টিও শিক্ষামন্ত্রী সাংবাদিকদের অবহিত করেন৷ তিনি জানান, তিনদিনের এই সম্পূর্ণ লকডাউনে যে কোনও ব্যক্তির অপ্রয়োজনীয় কারণে বাইরে চলাচল সম্পূর্ণ নিষেধ৷ দোকানপাট, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি যান চলাচল বন্ধ থাকবে৷ তবে গ্রোসারি দোকানের ক্ষেত্রে বাজার কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিদিন এক তৃতীয়াংশ দোকান খোলা রাখা হবে৷ সেক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক থাকবে৷ তিনি বলেন, সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কোচিং সেন্টার, রেস্তোরাঁ, হোটেল, প্রাইভেট যানবাহন বন্ধ থাকবে৷

এদিকে, কোনও ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজন করা যাবে না, জানান তিনি৷ সাথে তিনি যোগ করেন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ২০ জন এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না এই লকডাউনের সময়কালে৷ শিক্ষামন্ত্রী জানান, সমস্ত সরকারি অফিস এক তৃতীয়াংশ কর্মচারী দিয়ে চালাতে হবে৷ তবে অত্যাবশ্যক পরিষেবা যেমন চিকিৎসা, ওষুধের দোকান, চশমার দোকান, সংবাদপত্র, মিডিয়া, পেট্রোল পাম্প, পুলিশ, ট্রাফিক ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, আরক্ষা কর্মী, অগ্ণি নির্বাপক কর্মী, শ্মশান, বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী সহ সংশ্লিষ্টরা এই লকডাউনের বিধিনিষেধের আওতার বাইরে থাকবেন৷


এদিন শিক্ষামন্ত্রী রাজ্যের কোভিড-১৯জনিত পরিস্থিতির সামগ্রিক অবস্থা তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, এ পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৩ হাজার ৯৫৩ জনের নমুনা সংগৃহীত হয়েছে৷ এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৫৮২ জনের৷ গতকাল পর্যন্ত পজিটিভ রয়েছেন ৩,৭৭৮ জন৷ এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২,২১০ জন৷ বর্তমানে কোভিড-১৯ পজিটিভ রয়েছেন ১,৫৩৮ জন৷ মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের৷ গতকাল ছাড়া পেয়েছেন ৮৫ জন৷
এদিকে, ভগৎ সিং যুব আবাসে করোনা আক্রান্ত এক রোগীর কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথে দুর্ব্যবহার অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং লজ্জাজনক বলে তিনি উষ্মা প্রকাশ করেছেন৷ তিনি বলেন, চিকিৎসক এবং চিকিৎসাকর্মীদের সাথে রোগী ও আত্মীয় পরিজন সহ সকলের ভালো ব্যবহার আবশ্যক৷ কারণ তারাই প্রথমসারির যোদ্ধা হিসেবে সুস্থ করে তোলার প্রধান শক্তি৷

এদিন শিক্ষামন্ত্রী তথ্য সহকারে করোনা মোকাবিলায় রাজ্যে স্বাস্থ্য উপকরণ এবং লকডাউনের সময়কালে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর যথেষ্ট মজুত রয়েছে বলে দাবি করেন৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় বর্তমানে ৭১,২৫৬টি পিপিই কিট মজুত রয়েছে৷ সমস্ত জেলা হাসপাতালেও যথেষ্ট পিপিই কিট রয়েছে৷ রাজ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর মজুত যথেষ্ট সন্তোষজনক৷ তিনি জানান, শুধু সরকারিভাবেই বর্তমানে ৯১ দিনের চাল, ৮৫ দিনের গম, ৪১ দিনের চিনি, ৪৭ দিনের মসুর ডাল মজুত রয়েছে৷ বেসরকারিভাবে খাদ্যের মজুতও পর্যাপ্ত৷ আরও খাদ্য সামগ্রী বোঝাই যানবাহন চোরাইবাড়ি দিয়ে রাজ্যে আসছে৷ তিনি লকডাউনের সময় নিজেদের স্বার্থে, পরিবার ও সমাজের স্বার্থে বিধিনিষেধগুলি মেনে চলার জন্য এবং সমীক্ষার কাজে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানান৷