নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ জুলাই৷৷ সাতটি জীবনরেখায় সমৃদ্ধ হচ্ছে ত্রিপুরা৷ ঐতিহাসিক ট্রানজিট কার্গো রাজ্যে পৌঁছতেই খুশি জাহির করে এ-কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর কথায়, ১৯৬৫ সাল থেকে দাবি জানানো হচ্ছে৷ আজ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আসা শুরু হয়েছে৷ তার জন্য তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার আগরতলা ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে প্রবেশ করেছে ইন্দো-বাংলা কোস্টাল চুক্তি অনুযায়ী কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে আসা প্রথম ট্রানজিট কাগর্ো৷ ১৯৬৫ সাল থেকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করার জন্য ভারতের এই দাবি ছিল৷ যা আজ বাস্তবের রূপ দেখেছে বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাতে ত্রিপুরার পাশাপাশি গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল উপকৃত হবে৷ এদিন সবুজ পতাকা দেখিয়ে এই ট্রানজিট কাগর্োকে স্বাগত জানান মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তিনি বলেন, বিজেপি-আইপিএফটি সরকারের নেতৃত্বে ত্রিপুরা উন্নয়নের শীর্ষে পৌঁছাবে৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাম আমলে ত্রিপুরায় একটিমাত্র জীবনরেখা ছিল৷ আজ ত্রিপুরা সাতটি জীবনরেখায় যুক্ত হচ্ছে৷ স্থল, জল এবং আকাশ, সবক্ষেত্রেই ত্রিপুরা ক্রমশ যোগাযোগ-বান্ধব হয়ে উঠছে৷ এই ট্রানজিট কাগর্োকে স্বাগত জানানোর পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ উভয়ই লাভান্বিত হবে৷ তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ত্রিপুরার সঙ্গে সংযোগ রক্ষায় একটি জীবনরেখা ছিল৷ তাও চোরাইবাড়ি থেকে দীর্ঘ সড়ক বর্ষাকালে হয়ে থাকতো যাতায়াতের অনুপযুক্ত৷ ফলে পণ্যবাহী লরি ত্রিপুরায় প্রবেশ করার ক্ষেত্রে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতো৷ এর সরাসরি প্রভাব পড়ত রাজ্যের বাজারগুলিতে৷
তাঁর দাবি, পণ্য আমদানিতে বিঘ্ন ঘটায় আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ফলে জনজীবন হয়ে উঠত বিপর্যস্ত৷ এই অবস্থায় ত্রিপুরায় নতুন করে অসম-আগরতলা জাতীয় সড়কের সংস্কার কাজ অনেকাংশে সম্পন্ন হয়ে গেছে৷ মুখ্যমন্ত্রী দেব বলেন, রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এই সময়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে রাজ্যে উন্নতি লক্ষ্য করা গেছে৷ দীর্ঘদিন কুমারঘাট পর্যন্ত ছিল রেল এবং তা ছিল মিটারগেজ৷ আজ মিটারগেজ রূপান্তরিত হয়েছে ব্রডগেজে৷ রেল সাব্রুম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে৷ শুধু তা-ই নয়, আগরতলা-আখাউড়া রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রেও কাজ চলছে দ্রুতগতিতে৷ সাথে জলপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরা যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছে আজ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ইতিপূর্বে হলদিয়া থেকে ১,৬০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ত্রিপুরায় পণ্য সামগ্রী আসত৷ কিন্তু, আজ হলদিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে মাত্র ৬০০ কিলোমিটারের দূরত্ব অতিক্রম করেই রাজ্যে ট্রানজিট কাগর্ো পৌঁছে গেছে৷ এর মধ্যে ৪০০ কিলোমিটার চট্টগ্রাম পর্যন্ত জলপথ এবং বাকি ২০০ কিলোমিটার স্থলপথ৷ তাঁর দাবি, আগামী ডিসেম্বরে ফেনি নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে ২০০ কিলোমিটারের দূরত্ব আরও কমে ৬০ কিলোমিটার হয়ে যাবে৷ এছাড়া সোনামুড়া দাউদকান্দি আন্তর্জাতিক প্রটোকল রুট চালু হবে শীঘ্রই, আশা প্রকাশ করে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
তাঁর কথায়, সাম্প্রতিক বৃষ্টিপাতে নদীর জল বেড়ে যাওয়ায়, কুমিল্লায় কিছু সেতু অতিক্রম করা অসম্ভব হওয়ার ফলে এই প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে৷ মুখ্যমন্ত্রী এদিন মহারাজা বীরবিক্রম বিমানবন্দর-এর বিষয়েও উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দ্বিতীয় ব্যস্ততম এই বিমানবন্দরে ১৮টি বিমান যাতায়াত করে৷ যা দেশের বেশ কিছু বড় শহরের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত৷ সবমিলিয়ে রাজ্য সাতটি মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সম্পর্কযুক্ত, দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি৷ এই সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় উপলব্ধি, বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷
তাঁর কথায়, আজ স্থলপথে হলদিয়া বন্দর থেকে যে ট্রানজিট কাগর্ো এসেছে, তাতে সাশ্রয় হয়েছে ৫০ হাজার টাকা৷ ইতিপূর্বে ১,৬০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে আসা পণ্যে মেট্রিকটন প্রতি খরচ হত ৬ হাজার ৩০০ টাকা৷ তা কমে হয়েছে ৫,৮০০ টাকা৷ ফলে প্রতি মেট্রিকটনে সঞ্চয় হচ্ছে ৫০০ টাকা করে৷ ফেনি নদীর উপর দিয়ে পণ্য পরিবহণ হলে সেই সঞ্চয় মেট্রিকটন প্রতি ৮০০ টাকা গিয়ে পৌঁছাবে৷ এই সঞ্চয় রাজ্যের একদিকে যেমন দ্রব্যমূল্য হ্রাস করবে, তেমনি রোজগারের সুযোগও বৃদ্ধি করবে, দাবি করেন তিনি৷
মুখ্যমন্ত্রী এদিন তাঁর ভাষণে উল্লেখ করেন, বর্তমান সময়ে ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশে রফতনি হয় ৩০ কোটি টাকা মূল্যের সামগ্রী৷ কিন্তু, বাংলাদেশ থেকে আমদানি হচ্ছে ৬৪৫ কোটি টাকা মূল্যের সামগ্রী৷ নতুন সম্ভাবনা উন্মোচিত হওয়ার ফলে আগামী ১ বছরে রফতানি ৪০০ কোটি টাকা এবং আমদানি ২,০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি৷ রফতানির ক্ষেত্রে ৫ বছরে তা গিয়ে দাঁড়াবে ১,২০০ কোটি টাকা এবং আমদানির ক্ষেত্রে ৪,২০০ কোটি টাকা৷ রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ রাজ্যের উন্নয়নে ‘হীরা’ সম্পন্ন হয়ে এখন হীরা প্লাসে উন্নতি চলছে বলে দাবি করেন তিনি৷ সাথে যোগ করেন, এভাবে রোজগার বৃদ্ধির পাশাপাশি আর্থিকভাবে লাভবান হবে ত্রিপুরা৷