নয়াদিল্লি, ১৮ জুন (হি. স.): পূর্ব লাদাখে গালওয়ান উপত্যকায় চিনা আগ্রাসনের পরেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ বেড়ে গিয়েছে।বুধবার রাজধানীর দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিনা পণ্য বর্জন করার দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়।ভারতে করোনার মারণ দৌরাত্ম্যের পরই চিনা পণ্য বর্জন করার দাবি সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে উঠেছিল। কিন্তু সোমবার রাতে গলওয়ানে অতর্কিতে চিনা হামলায় ২০ জন ভারতীয় জওয়ানের মৃত্যুর পর এই দাবি আরও জোরালো আকার ধারণ করেছে। কিন্তু আদৌ কি চিনা পণ্য বর্জন করে চলা সম্ভব।এই বিষয়ে ভিন্ন মত পোষণ করছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা শ্রীরামপুর কলেজের অধ্যাপক দিব্যেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, মোবাইল ফোন, খেলনা এমন কি বাড়ির মধ্যে থাকা সুইচ বোর্ড, ওয়ারিং সব কিছুই চিনা পণ্য। এমন কি এই মুহূর্তে যা সব থেকে প্রয়োজনীয় সেই হ্যান্ড সেনিটাইজারে যে অ্যালকোহলের উপাদান। তাও চিন থেকে আসছে। কোনও পণ্য ভারতে তৈরি হলেও তার কাচামালের জন্য চিনের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। যে সকল বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ভারতে তৈরি হচ্ছে তার কয়েকটি যন্ত্রাংশও চিন থেকে আসে। ভারতের ওষুধ নির্মাণ সংস্থাগুলো ওষুধ তৈরিতে যে সকল উপাদান লাগে তার জন্য চিনের মুখাপেক্ষী থাকতে হয়। ফলে বর্তমান সময়ে চিনা পণ্য বর্জন করা সম্ভবপর নয়। কারণ তা ভারতীয়দের জীবনযাপনে অঙ্গ হবে দাঁড়িয়েছে।
শুধু গৃহস্থালী নয় দিব্যেন্দু বাবুর কথায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বয়লারও চিন থেকে আসে। ফলে ভারী শিল্পের জন্যও চীনের প্রতি নির্ভরশীল ভারত। চিনা পণ্য বর্জন করলে তারা ভারতের পণ্যের বিরোধ করবে। ফলে ধাক্কা খাবে ভারতের অর্থনীতি।দেশের বাণিজ্যিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। বিশ্বায়নের এই বিশ্বে একটা পণ্যের প্রডাকশন চেইনের সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জড়িত থাকে সেখানে একেবারে চিনকে বর্জন করা সম্ভব নয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান অজিতাভ রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, চিনা পণ্য বর্জন করতে গেলে তার বিকল্প কি সেটা ভাবতে হবে। আজ চিনা পণ্য বড় শহর ছাড়িয়ে ভারতের গ্রামগুলিতেও ঢুকে পড়েছে। ফলে বিকল্প পণ্য উৎপাদনের জন্য দেশের বড় বড় শিল্প উদ্যোগগুলোর সঙ্গে বসে পরিকল্পনা করতে হবে।এতে মাঝারি ও ছোট শিল্পকেও যুক্ত করতে হবে। তবে গোটা প্রক্রিয়াটাই দীর্ঘ মেয়াদি। চটজলদি নয়। এই বিষয়ে চিরস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা কার্যকর করার জন্য দেড় বছর সময় লেগে যাবে। পাশাপাশি এটাও ভাবতে হবে কেন ও কি ভাবে চিন ভারতীয় বাজার দখল করল। মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাড়ানোর দিকটিও দেখতে হবে। বর্তমানে চিন থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পণ্য আমদানি করে ভারত। চিনা পণ্য বর্জন করতে গেলে আরও একটি বিকল্প পথের কথা বলেন অজিতাভবাবু। তার কথায়, ভারতীয়দের জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হবে। চিনা পণ্য বা বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ছাড়া কি করে জীবন বাঁচা যায় সেই কথা ভাবতে হবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে, চিনের বুলেট পাওয়ার বনাম ভারতের ওয়ালেট পাওয়ারের প্রচারের সরগরম সোশ্যাল মিডিয়া। মনে করা হচ্ছে চিনের পণ্য বর্জন করলেই বেজিংকে আর্থিক দিক দিয়ে দুর্বল করে দেওয়া যাবে। আবার এও সামনে এসেছে যে চিনের এক্সপোর্ট শেয়ারে ভারতের অবদান মাত্র ৩ শতাংশ।অর্থাৎ ১৩০ কোটি ভারতীয় যদি চিনা পণ্য বর্জনও করে তবে বেজিংয়ের কোনও বড় আর্থিক ক্ষতি হবে না। ভারত যে সকল দেশগুলিতে সব থেকে বেশি পণ্য রফতানি করে সেই তালিকায় চিনের স্থান তিন নম্বরে। ভারত থেকে ১৬ বিলিয়ন ডলারের পণ্য চিন আমদানি করে। এমন কি ভারতের মধ্যে থাকা স্টার্টআপগুলিতেও চীন বিনিয়োগ করে বসে আছে। ফলে চিনা পণ্য বর্জন করতে গেলে অনেক প্রস্তুতির দরকার ভারতের।

