করিমগঞ্জ (অসম), ১৮ জুন (হি.স.) : করোনা সংকট কাটিয়ে দেশ আর্থিক স্বচ্ছলতার দিকে এগোতে চাইছে। কিন্তু সুতারকান্দি ল্যান্ডপোর্ট অথরিটি এবং করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের দড়ি টানাটানির জেরে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে আমদানি-রফতানির প্রক্রিয়া। সুতারকান্দি আন্তর্জাতিক শুল্ক বন্দর দিয়ে আমদানি-রফতানি ব্যবসার ক্ষেত্রে করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের জারিকৃত উদ্ভট সিদ্ধান্তে অতিষ্ঠ হয়ে বাংলাদেশের সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, সিলেট জেলা আমদানি-রফতানি সংস্থা এবং কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এজেন্সি, এই তিন সংগঠন যৌথভাবে আজ বৃহস্পতিবার থেকে সুতারকান্দি শুল্ক বন্দর দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য সবরকমের আমদানি-রফতানির ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
করিমগঞ্জ আমদানি-রফতানি সংস্থাকে পৃথক পৃথক পত্র মারফত তাঁদের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে বলে সংস্থার সভাপতি অমরেশ রায় জানিয়েছেন। কোভিড-১৯-এর জেরে দেশে টানা লকডাউনের ফলে চরম আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির গ্রাফ ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। দেশের এই চরম সংকটকালে করিমগঞ্জের সুতারকান্দি ট্রেড সেন্টারে আমদানি-রফতানি ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার পথে। এর ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ট্রেড সেন্টারে কর্মরত অনেক কর্মচারীর কর্মসংস্থান হারানোর আশঙ্কা প্রবল হয়ে উঠেছে।
অমরেশ জানান, করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ফরমান জারি করার ফলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির করিমগঞ্জ শাখার অধিকর্তা অবিনাশ আকাশি। এতে জেলার আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও বেকায়দায় পড়েছেন।
সুতারকান্দি ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকর্তা অবিনাশ আকাশি এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে কোনও ধরনের নির্দেশিকা জারি করার আগে জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। কোনও আলোচনা না করেই একতরফা নতুন নতুন নির্দেশিকা জারি করে চলেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসন এবং ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির মধ্যে সমন্বয় না থাকায় এক উদ্ভট পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের মতে, উভয় দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে সুতারকান্দি ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি কোভিড-১৯-এর কোনও নিয়মনীতি মানছে না। কিন্তু ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি জেলা প্রশাসনের সকল অভিযোগ খণ্ডন করে বলেছে, কোভিড-১৯ নিয়ে ভারত সরকারের জারিকৃত প্রতিটি নির্দেশাবলী পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মেনে চলেই আমদানি-রফতানির কাজ চলছে। কিন্তু এর পরও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিদিন নয়া নির্দেশিকা জারির ফলে কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসন কর্তৃক জারিকৃত এক নয়া নির্দেশিকা নিয়ে সুতারকান্দি ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি বেকায়দায় পড়েছে বলে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিকর্তা অবিনাশ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারিকৃত নতুন ফরমানে বলা হয়েছে, এখন থেকে উভয় দেশের একটি করে পণ্যবাহী লরি ভারত-বাংলা উভয় দেশের জিরো পয়েন্টে থাকবে। এর পর বাংলাদেশের লরিতে পণ্য বোঝাই করা হবে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকে আগত পণ্যবাহী লরি থেকে এ দেশের লরিতে পণ্য বোঝাই করা হবে। এই নিয়মের ফলে প্রতিদিন এক দুটি পণ্যবাহী লরির বেশি আমদানি-রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে আমদানি-রফতানি ব্যবসায় ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।
জেলা আমদানি-রফতানি সংস্থার সভাপতি অমরেশ রায় বলেন, জেলা প্রশাসন কর্তৃক জারিকৃত নতুন নির্দেশিকার ফলে ভারত সরকারের প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব মার খাওয়ার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। করিমগঞ্জ জেলা প্রশাসনের এক তরফা সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি ব্যবসায়ীদের মধ্যেও বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের সিলেট জেলা আমদানি-রফতানি সংস্থা সুতারকান্দি শুল্ক বন্দর দিয়ে ব্যবসায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু তাহের এ ব্যাপারে চলতি মাসের ১১ এবং ১৪ তারিখ সিলেটে অবস্থিত ভারতীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনার আই কৃষ্ণমূর্তির কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সিলেটে অবস্থিত ভারতীয় অ্যাসিস্ট্যান্ট হাইকমিশনারের কাছ থেকে কোনও সদর্থক জবাব না পেয়ে আজ থেকে সুতারকান্দি আন্তর্জাতিক শুল্ক কেন্দ্র দিয়ে সব ধরনের আমদানি-রফতানি ব্যবসা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশের উল্লিখিত তিনটি বণিক সংস্থা।
করিমগঞ্জ জেলা আমদানি-রফতানি সংস্থার সভাপতি অমরেশ বলেন, জেলা প্রশাসনের অসহযোগিতার দরুন ল্যান্ড পোর্ট অথরিটির জন্য বরাদ্দ ১৮ বিঘা জমি আজ পর্যন্ত সমঝে দেওয়া হয়নি। ল্যান্ড পোর্ট অথরিটি করিমগঞ্জের সুতারকান্দি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বন্দর উন্নতিকরণের জন্য ২০০ কোটি মঞ্জুর করেছিল। কিন্তু জেলা প্রশাসনের চরম উদাসীনতা ও অসহযোগিতার দরুন ২০০ কোটি টাকা ফিরে যাওয়ার পথে। আগামী ২০ দিনের মধ্যে যদি জেলা প্রশাসন ১৮ বিঘা জমি সুতারকান্দি ল্যান্ড পোর্ট অথরিটিকে সমঝে না দেয়, তা হলে মঞ্জুরকৃত ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প ফিরে যাবে বলে জানান জেলা আমদানি-রফতানি সংস্থার সভাপতি।
এদিকে দুই দেশের আমদানি-রফতানি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা জিরো পয়েন্টে এসে পণ্য সামগ্রী লোডিং-আনলোডিঙে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। যার ফলে সুতারকান্দি আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রে শ্মশানের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।