নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩ জুন৷৷ করোনা ভাইরাসের আতঙ্ক ত্রিপুরায় এক লজ্জাজনক অধ্যায়ের রচনা করেছে৷ গলায় ফাঁস জড়িয়ে আত্মঘাতী জনৈক করোনা-আক্রান্ত পঞ্চাশোর্ধ মহিলার মরদেহ শেষকৃত্যের জন্য বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল৷ তবে রাত দুটো নাগাদ তাঁর মৃতদেহ কবরস্থ করা সম্ভব হয়েছে৷ গতকাল বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকারে প্রশাসনের কালঘাম ছুটেছে৷ সাথে প্রমাণিত হয়েছে, করোনা আতঙ্ক মানুষকে অমানবিক করে তুলে৷ অবশ্য তাতে ত্রিপুরা সরকারেরও গাফিলতি রয়েছে, তা অস্বীকার করার অবকাশ নেই৷ কারণ, করোনায় আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু হলে শেষকৃত্যের জন্য নির্দিষ্ট স্থান চিহিণত করেনি রাজ্য প্রশাসন৷ ফলে, করোনায় আক্রান্ত আত্মঘাতী মহিলার মরদেহ নিয়ে প্রশাসনকে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে৷ একই সাথে মৃতের পরিবারও চরম বিড়ম্বনায় পড়েছিল৷ কিন্তু মৃতদেহ সৎকার নিয়ে মানুষের অমানবিক চরিত্র নোংরা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ আগরতলার জিবি হাসপাতালের ফ্লু ক্লিনিকের শৌচালয়ে পঞ্চাশোর্ধ এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল৷ তিনি গলায় ফাঁস জড়িয়ে আত্মহত্যা করেন৷ ওই মহিলা আমতলি থানাধীন মতিনগরের বাসিন্দা ছিলেন৷ সোমবার সন্ধ্যায় তিনি জ্বর, শ্বাসকষ্ট এবং কাশির সমস্যা নিয়ে ফ্লু ক্লিনিকে ভরতি হয়েছিলেন৷ ওইদিনই তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল৷ মঙ্গলবার সকাল ১১টায় তার কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজিটিভ আসে৷ হাসপাতাল সূত্রের খবর, ওই মহিলা মানসিক অবসাদ এবং কিডনি-র সমস্যায় ভুগছিলেন৷ তাঁর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় হাসপাতালে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল৷ অতিরিক্ত মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মহিলা আত্মহত্যা করেছেন৷ তাই তার মৃতদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে৷
কিন্তু, ময়না তদন্তের পর মৃতদেহ সৎকারের জন্য নিয়ে যাওয়া হলে বিপত্তি দেখা দেয়৷ রামনগরের রাজনগরে কবরখলায় ওই মৃতদেহ করোনা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে কবর দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়৷ জিবি হাসপাতালের মেডিক্যাল সুপারের অনুরোধে সদর মহকুমাশাসক মৃতদেহ সৎকারের জন্য ব্যবস্থা করেন৷ কিন্তু, কবরখলায় নিয়ে যাওয়ার পর স্থানীয় জনগণ আপত্তি জানান৷ করোনা আক্রান্তের মৃতদেহ সৎকারে ভীতির কারণেই তারা আপত্তি জানাচ্ছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে৷ এ ব্যাপারে প্রশাসনের তরফে স্থানীয়দের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তাতে ব্যর্থ হয়ে মৃতদেহ গভীর রাতে জিবি হাসপাতালের মর্গে ফিরিয়ে আনেন স্বাস্থ্য কর্মীরা৷
এদিকে, পুর কমিশনার এবং সদর মহকুমাশাসক মতিনগর ছুটে যান৷ সদর মহকুমাশাসক অসীম সাহা জানিয়েছেন, ওই মৃতদেহ হাসপাতালের কাছাকাছি সৎকারের চিন্তাভাবনা করা হয়েছিল৷ কিন্তু, রাজনগর কবরখলায় নিয়ে যাওয়া হলে স্থানীয় জনগণ আপত্তি জানান৷ তাই মহিলার মৃতদেহ মতিনগরে কবর দেওয়া হয়েছে৷ সেখানে সীমান্তের ওপাড়ে ভারতীয় অংশে কবরখলা অবস্থিত৷ ধর্মীয় নীতি মেনে মৃতদেহ সৎকার করা হয়৷ তিনি জানান, পুর কমিশনার এবং আমতলি থানার ওসি সীমান্তের ওপাড়ে গিয়ে সৎকার কার্য পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ পিপিই পরিধান করে স্বাস্থ্যকর্মীরাই মহিলার মৃতদেহ দাফন করেছেন৷