নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ মে৷৷ বহিঃরাজ্য থেকে সংক্রমিত হয়ে রাজ্যে ফিরে আসার ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে৷ আজ রাজ্যে নতুন করে দশজন করোনা সংক্রমিতের সন্ধান মিলেছে৷ তাদের মধ্যে শুধু একজন রেলওয়ের পেন্ট্রি কর্মী৷ আজ মধ্যরাতে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ট্যুইট করে জানান, ১০২০টি নমুনা পরীক্ষায় দশজনের কোভিড-১৯ রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে৷ তাদের মধ্যে চেন্নাই ও বেঙ্গালুরু ফেরত পাঁচজন এবং মুম্বাই ফেরত চারজন রাজ্যের নাগরিক রয়েছেন৷ একজন রেলওয়ে পেন্ট্রি কর্মী, তিনি বর্তমানে রাজ্যের বাইরে অবস্থান করছেন৷ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যে ২৪২জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন৷ তাদের মধ্যে সক্রিয় ৭৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১৬৫ জন৷ তিনজন রাজ্যের বাইরে রয়েছেন৷
বহিঃরাজ্য ফেরত ত্রিপুরার নাগরিকদের গ্রামে বসবাসে সমস্যা হচ্ছে৷ তাই, চাহিদা অনুসারে গ্রামীণ এলাকায় প্রাতিষ্ঠানিক একান্তবাস কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ সে-মোতাবেক নির্দেশিকা জারি করেছে ত্রিপুরা সরকার৷
প্রসঙ্গত, বিভিন্ন স্থানে গ্রামীণ এলাকায় বাড়িতে একান্তবাসে থাকা ব্যক্তিদের পরিবার এবং গ্রামবাসীদের প্রতিরোধের মোকাবিলা করতে হচ্ছে৷ তাতে গ্রামে কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে৷ অবশ্য এ-কথা অস্বীকার করার কোনও সুযোগ নেই, গ্রামে ছোট বাড়িতে কিংবা যৌথ পরিবারের বাড়িতে একান্তবাসের সমস্ত বিধিনিষেধ মেনে চলা কঠিন৷
এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অনেক পঞ্চায়েত এবং গ্রামগুলি বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে রেখে সেখানে তাঁদের প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং সুযোগসুবিধা সরবরাহ করা হচ্ছে৷ এ-ধরনের গ্রামগুলিকে সমর্থন করার জন্য এবং অন্যদের উৎসাহ প্রদানে ত্রিপুরা সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রয়োজন বোধে সরকারি নির্দেশিকা অনুসরণ করে গ্রামগুলিতে ’’গ্রাম একান্তবাস’’ সুবিধা স্থাপন করা যাবে৷ ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য প্রশাসন আজ (বুধবার) এই নির্দেশিকা জারি করেছে৷
নির্দেশিকা অনুযায়ী, পঞ্চায়েত কিংবা গ্রামস্তরে করোনা-র তদারকি ও সচেতনতা কমিটি বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের পরিবারের সদস্যদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে গ্রামের নির্দিষ্ট কোনও কমিউনিটি ভবনে গ্রাম একান্তবাস কেন্দ্র স্থাপন করবে৷ ওই পরিবারের সদস্যদের তালিকা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পঞ্চায়েত কিংবা গ্রামস্তরের কমিটিগুলিকে তাঁদের বিশদ ঠিকানা মোবাইল নম্বর সহ প্রদান করতে হবে৷ গ্রামীণ একান্তবাস সুবিধা গ্রামবাসীরাই করবেন৷ এক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের পরিবারের অন্য সদস্য কিংবা সম্প্রদায়ের তরফে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে৷
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, এ-বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কমিটি সংশ্লিষ্ট বিডিও, ব্লকস্তরের কমিটি এবং মহকুমা শাসককে অবহিত করবে৷ তাতে, গ্রামীণ একান্তবাস কেন্দ্রগুলিতে স্যানিটাইজেশন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, পানীয় জল ও আলোর ব্যবস্থা করা সুনিশ্চিত হবে৷ প্রশাসন বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা ওই কেন্দ্রগুলিতে স্বাস্থ্য কর্মীদের পরিদর্শন সুনিশ্চিত করবে৷ ওই কেন্দ্রগুলির সুষ্ঠু পরিচালনায় মহকুমা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রতিদিন গ্রামীণ একান্তবাস কেন্দ্রে পরিদর্শনে যেতে হবে৷
নির্দেশিকায় জোর দেওয়া হয়েছে, কোভিড-১৯-এর কোনও লক্ষণ বা অন্য কোনও রোগের লক্ষণ গ্রামীণ একান্তবাসে বসবাসকারীদের মধ্যে দেখা গেলে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মহকুমাশাসক কিংবা জেলাশাসকের গোচরে বিষয়টি নিতে হবে৷ বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের ১৪ দিনের জন্য গ্রামীণ একান্তবাস কেন্দ্রে রাখা হবে এবং মেয়াদ সমাপ্ত হওয়ার পর তাদের যথাযথ তথ্য সংগ্রহ করে ছুটি দেওয়া যাবে৷ সাথে যোগ করা হয়েছে, কোনও উদ্ভূত সমস্যা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিকারের জন্য ব্লক কিংবা মহকুমা অথবা জেলা প্রশাসনের কাছে বিষয়টি অবহিত করতে হবে৷
জেলাশাসকের পরিচালনায় মহকুমাশাসক সংশ্লিষ্ট মহকুমার অধীনে সমস্ত ’’গ্রাম একান্তবাস সুবিধা’’-র সার্বিক দায়িত্বে থাকবেন এবং নিশ্চিত করবেন, ওই কেন্দ্রগুলি যথাযথভাবে পরিচালিত হবে এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়ম, মাস্ক পরা, ঘন ঘন স্যানিটাইজেশন ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা সংক্রান্ত সমস্ত নিয়ম কঠোরভাবে অনুসরণ করা হচ্ছে৷

