বহিঃরাজ্য থেকে গৃহজেলা করিমগঞ্জে আসছেন ৩০ হাজারের বেশি নাগরিক, নেই পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা, উদ্বিগ্ন বিধায়ক

করিমগঞ্জ  (অসম), ১১ মে (হি.স.) : বহিঃরাজ্যে অবস্থানরত করিমগঞ্জ জেলার ৩০ হাজারের বেশি নাগরিক গৃহজেলায় ফিরে আসার জন্য আসাম কেয়ার-এ আবেদন করেছেন। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রোসেস (এস‌ওপি) অনুযায়ী, যাঁরা বহিঃরাজ্য থেকে আসবেন তাঁদের স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। এবং স্ক্রিনিঙে যদি করোনা ভাইরাসজনিত কোনও ধরনের লক্ষণ ধরা পড়ে, তবেই তাঁদের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করা হবে। জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগ সে মোতাবেক প্রস্তুতি কার্যের রূপরেখা তৈরি করছিল।

বহিঃরাজ্য থেকে করিমগঞ্জ জেলায় ৩০ হাজার লোক আসছেন। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই সমগ্র জেলার জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই আতঙ্কের আবহে আরেক বার্তা জেলা প্রশাসনকে রীতিমতো চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। এ সম্পর্কিত জেলাশাসকের কাছে অপর আরেকটি নির্দেশ আসতেই জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য বিভাগের কপালেও চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে। নির্দেশে বলা হয়ছে, যাঁরা বহিঃরাজ্য থেকে গৃহ জেলায় প্রবেশ করবেন তাঁদের সকলকেই প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখতে হবে।

এ নিয়ে বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ সোমবার দিনভর জেলাশাসক আনবামুথান এমপি, জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অনুপ কুমার দৈত্যারি, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ প্রথমেই এ নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে বিধায়ক কমলাক্ষ জেলাশাসকের কাছে জানতে চান, গৃহ জেলায় ফিরে আসার জন্য আসাম কেয়ার-এ যে ৩০ হাজারের অধিক লোক আবেদন করেছেন, এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ‌ অর্থাৎ ন্যূনতম ১০ হাজার লোক যদি এ জেলায় আসেন, তা হলে তাঁদের প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার জন্য জেলা প্রশাসন পর্যাপ্ত কী ব্যবস্থা নিয়েছে? এবং এই বিশাল সংখ্যক লোকের স্ক্রিনিঙের‌ও বা-কী ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন? শহরের জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠ, পাবলিক স্কুলের খেলার মাঠ, নীলমণি স্কুলের মাঠ সহ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে কোয়ারেন্টাইনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করার জন্য জেলাশাসককে পরামর্শ দেন বিধায়ক কমলাক্ষ। তিনি জেলার প্রতিটি প্রবেশপথে বহিঃরাজ্য থেকে আগতদের সঠিকভাবে স্ক্রিনিঙের জন্য প্রশিক্ষিত মেডিক্যাল টিম বসানোর‌ও অনুরোধ করেছেন।

জেলাশাসকের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা শেষ করে বিধায়ক কমলাক্ষ ছুটে যান কোভিড-১৯ হাসপাতাল অর্থাৎ করিমগঞ্জ অসামরিক হাসপাতালে। সেখানে জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অনুপ কুমার দৈত্যারিকে নিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠকে বসেন। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগের প্রস্তুতির খোঁজ খবর নিতে গিয়ে বিধায়কের চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায়। চিকিৎসকদের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় অসামরিক হাসপাতাল তথা বর্তমানে জেলার কোভিড-১৯ হাসপাতালের নগ্ন রূপ বেরিয়ে আসে। এই সংকটপূর্ণ সময়ে যখন বহিঃরাজ্য থেকে হাজার হাজার লোক গৃহজেলায় ফিরছেন, তখন জেলার একমাত্র কোভিড-১৯ হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ প্রস্তুতি শরীরে শিহরণ জাগানোর মতো।

হাসপাতালে আইসিইউ-এ ব্যবস্থা নেই, আইসোলেশন বেডের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই, ভেন্টিলেশনের সুবন্দোবস্ত নেই, ব্লাড ব্যাঙ্কে পর্যাপ্ত রক্ত নেই, একমাত্র এক্সেরে মেশিনটিও অনেকদিন থেকে বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। এমন-কি হাসপাতালে টেকনিক্যাল স্টাফের‌ও অভাব রয়েছে। এই সংকটপূর্ণ সময়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার মতো পর্যাপ্ত কোনও ব্যবস্থা নেই জেলার একমাত্র কোভিড-১৯ হাসপাতালে। বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় হাসপাতালের এমন বাস্তব চিত্র‌ প্রকাশ্যে ফুটে উঠেছে।

জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অনুপ কুমার দৈত্যারি ও করোনা যুদ্ধের প্রধান সৈনিক কর্তব্যরত চিকিৎকদের সঙ্গে আলোচনা প্রসঙ্গে এ সব ব্যাপারে অবগত হয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃরক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে তৎপর হবেন বলে চিকিৎসকদের আশ্বাস দেন বিধায়ক কমলাক্ষ দে পুরকায়স্থ।