নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ এপ্রিল৷৷ করোনা মহামারির প্রকোপে ত্রিপুরার ইতিহাসে এই প্রথম মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পুণ্যার্থীরা পূজা দিতে যেতে পারবেন না৷ হালখাতা যাত্রা করাতে পারবেন না কেউ৷ ব্যবসায় শ্রীবৃদ্ধির আশায় বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন পয়লা বৈশাখে ব্যবসায়ীরা হালখাতা যাত্রা করেন৷ যুগ যুগ ধরে এই প্রথা চলে আসছে ত্রিপুরায়৷ কিন্ত এবার শুধু মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির নয়, সমগ্র ত্রিপুরায় মন্দিরে পূজায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সরকার সমস্ত রাজ্যের ধর্মীয় স্থানে জনসমাগম বন্ধ সুনিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছে৷
১৫০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পূজা শুরু হয়েছেঊ লকডাউনের জন্য নিয়ম রক্ষায় পূজার্চনা হচ্ছে ঠিকই৷ কিন্ত, মানুষের প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ পয়লা বৈশাখে প্রতি বছর আগরতলায় লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরে বিরাট মেলার আয়োজন হয়৷ এছাড়াও দক্ষিণ জেলার জোলাইবাড়িতে বৌদ্ধধর্মের রীতি মেনে মহামুনি পাগোদা-য় পাঁচদিন ব্যাপী মেলার আয়োজন হতো প্রতি বছর৷ এ-বছর সেই মেলাও বন্ধ রাখা হয়েছেঊ এছাড়া, ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্তে পয়লা বৈশাখ পালিত হয়েছে মহা ধুমধামেই৷ জাতি-উপজাতি উভয় অংশের মানুষ সমানভাবে বাংলা নববর্ষে আনন্দে মেতে ওঠেন৷ কিন্ত, এ বছর করোনা আতঙ্কে সবকিছুতেই ভাটা পড়েছে৷
মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরের প্রধান পুরোহিত চন্দন চক্রবর্তী আক্ষেপ করে বলেন, আমার তিন পুরুষে আজ পর্যন্ত কখনও পয়লা বৈশাখে মায়ের মন্দিরে মানুষের উপস্থিতি হয়নি এমন দেখিনি৷ তাঁর কথায়, বংশ পরম্পরায় আমরা মায়ের সেবায় নিবেদিত৷ বাপ-ঠাকুর্দারা মায়ের পূজা করেছেন৷ ওই একই দায়িত্ব আমিও পালন করছি৷ তবে এবারই প্রথম পয়লা বৈশাখে মন্দিরে পুণ্যার্থীরা পূজা দিতে পারবেন না৷ হালখাতা যাত্রা করতে পারবেন না তাঁরা৷ একইভাবে বিষাদের সুর স্থানীয় ব্যবসায়ীদেরও৷ এমন-কি ত্রিপুরার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দিরে পসরা সাজিয়ে বসতেন প্রতি বছর৷ এবার সেই সুযোগ নেই৷
এ-বিষয়ে গোমতির জেলাশাসক টি কে দেবনাথ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী লকডাউন চলাকালীন সমস্ত ধর্মীয় স্থানে জনসমাগমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে৷ সে-ক্ষেত্রে বাংলা নববর্ষেও সেই আদেশের কোনও ব্যতিক্রম হবে নাঊ তাঁর কথায়, মাতা ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির আগামীকালও পুণ্যার্থীদের জন্য বন্ধ থাকবে৷ তবে জেলাবাসীর নানা চাহিদার কথা মাথায় রেখে নববর্ষ যাতে বিষাদময় না হয়ে ওঠে সে-দিকে সম্পূর্ণ খেয়াল রাখা হয়েছে৷ তিনি জানান, উদয়পুরে করোনা স্পর্শকাতর এলাকায় আগামীকাল ঠেলায় করে মাছ, মাংস, সবজি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ তাছাড়া, বিভিন্ন বাজার সচল রাখার ক্ষেত্রেও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ জেলাবাসীকে মাইকিং করে সমস্ত নিয়ম জানানো হবে৷