গোটা বিশ্ব জুড়ে যখন চিকিৎসক, বৈজ্ঞানিক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী করোনার মতো বিপদজনক ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। পাশাপাশি প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য দিনরাত এক করে দিচ্ছে। তখন আমাদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ডাক্তাররা কোথায় গেল। তাদের কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। সংকটের এই মুহূর্তে তাঁরা কোথায়? রোগীরা এদের মোটা টাকার ফিস দিয়ে থাকে। কিন্তু যখন দেশ ও সমাজের সব থেকে বেশি প্রয়োজন তখন এরা ঘরে গিয়ে লুকিয়ে থাকে। লকডাউন-এর জেরে এদেরও কি ক্লিনিক বন্ধ রাখতে বলা হয়েছিল? বর্তমান সময় সবথেকে বেশি প্রয়োজন চিকিৎসকদের। প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা চিকিৎসকরা আজকের সমাজে সব থেকে বেশি জনপ্রিয় ও তারা বেশি আর্থিকভাবে স্বচ্ছলও। কিন্তু প্রথমেই এরা রণক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়েছে। শহর হোক কিংবা গ্রাম সব জায়গায় একই চিত্র।এই সকল প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা চিকিৎসকেরা নিজেদের ক্লিনিক বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের কি এই কাজটা করা উচিত হয়েছে? সংকটের এই সময় কাজ করে চলেছে সরকারি চিকিৎসকেরা। কিন্তু তাদের বদনাম করার লোক আমাদের এখানে আছে। কিন্তু করোনায় আক্রান্ত এই সকল রোগীদের চিকিৎসা করে চলেছে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
জানতে চাই এই সময় প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা চিকিৎসকদের কতজন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা করছে?
কি করে প্রসূতিদের ডেলিভারি পিছোবে
আসলে মানুষ কিছু রোগ ও যন্ত্রণাকে সহ্য করতে পারে। এমনকি পাত্তাও না দিতে পারে। কিন্তু কিছু রোগ এমন থাকে যা পাত্তা দিতে হয়। প্রসূতিদের ডেলিভারির ব্যাপারটা কি পিছিয়ে দেওয়া যেতে পারে? ডায়ালাইসিস কি কিভাবে পেছানো হতে পারে? হার্ট অ্যাটাক ও ব্রেন হেমারেজের মত বিষয়গুলিকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যাওয়া কি যায়?
শিশুরা যন্ত্রনা কিভাবে সহ্য করবে? এই সব কথাগুলো প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ও মোটা টাকা কামানো চিকিৎসকেরা কি ভাবে না। এদের হৃদয়টা পাথরের মতো হয়ে গেল কেন? যখন পৃথিবী ও মানব জাতি সংকটে পড়েছে তখন এরা যেন ভুলে না যায় যে মায়ের পেটে থেকে বেরিয়েই এরা চিকিৎসক হয়নি। তাদেরকে ডাক্তার বানাতে দেশের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। সেই অর্থ দেশের জনতার। আমার ও আপনার।
চিকিৎসক হয়ে তারা উপার্জন করেছে প্রচুর
ডাক্তার হওয়ার পর তারা সাধারণ মানুষ থেকে প্রচুর অর্থ উপার্জন করে বিলাসিতায় ভরা জীবনযাপন ভোগ করছেন। আর যখন সংকটের মুহূর্ত তখন এরা পিঠ দেখিয়ে পালিয়েছে। তৎপরতার সাথে সরকারি ডাক্তাররা চিকিৎসা করে চলেছে। ইমার্জেন্সিতে আসা রোগীদের চিকিৎসা করে চলেছে। এখন সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররা দিনে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা কাজ করে চলেছে। তাদের সঙ্গে থাকা নার্সিং স্টাফ কাজ করে চলেছে।
প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ডাক্তাররা কি নিজেদের ক্লিনিক ও হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়ে ঘরে বসে আছে । তারা কি রাস্তায় কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের ও দেখছে না। পুলিশকর্মীরা নিজেদের কর্তব্যে অবিচল রয়েছে। যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা তারা করছে। প্রকৃত অর্থে লকডাউনকে এরাই সার্থক করে তুলেছে। নয়তো যেকোনো সময় মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে পারতো। এই সকল পুলিশকর্মীদের অনেকে আবার শহীদ হন। কারণ তাদের এই কাজের জন্যই বেছে নেওয়া হয়েছে। একইভাবে চিকিৎসকদেরও বিশেষ একটি কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। সেই ভাবে তাদের তৈরিও করা হয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতিতে তারা সেবা সরবরাহ করতে দায়বদ্ধ।
এইসময় জনতা রোগ এবং যন্ত্রণায় কষ্ট ভোগ করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে ব্যাংক কর্মীরা নিজেদের কর্তব্য পালন করে চলেছেন। মুদির দোকানদার, সবজি বিক্রেতা, দুধওয়ালা সকলে নিজেদের কাজ করে চলেছে। কিন্তু এই সকল ডাক্তাররা কেন নিজের কর্তব্য থেকে মুখ ঘুরিয়ে রয়েছেন। বিবৃতি জারি করে এই সকল চিকিৎসকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিক সরকার। নিকটতম হাসপাতলে এইসকল চিকিৎসকদের মোতায়ন করুক সরকার। যাতে করে তারা হাসপাতালে চিকিৎসকদের সহায়তা করতে পারে। যেই চিকিৎসক এই সরকারি নির্দেশিকা মানবে না। তার লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া। জনতা যন্ত্রণায় কাতরাতে। আর চিকিৎসক বাড়িতে বসে থাকবে এটা চলতে দেওয়া যায় না।
নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার সুযোগ হারাল
নিজেদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার একটা সুবর্ণ সুযোগ প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা চিকিৎসকরা বর্তমান পরিস্থিতিতে পেয়েছিল। নিজেদের কালিমালিপ্ত ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করার অবকাশ তারা পেয়েছিল। কিন্তু ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা তো পরের কথা এই পরিস্থিতিতেও নিজেদের আরো কুৎসিত করে তুলেছেন। তো কি মনে করা হবে রোগীদের কাছ থেকে এরা যে টাকা হাতায় সেটাই কি সঠিক? সেই কারণে কি রোগীরা এদের সাথে দুর্ব্যবহার করে? সব প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা ডাক্তারি খারাপ না। কিন্তু টাকার লোভে রোগীদের রক্ত চুষে খাওয়া ডাক্তারদের সংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। এরা রোগীদেরকে খরিদ্দার হিসেবে দেখে। এই ভাবনার জন্য রোগী ও সমাজ থেকে এরা দূরে সরে গিয়েছে।
আজ লকডাউন এর দু সপ্তাহ অতিক্রান্ত। হাসপাতালে পরিসংখ্যান বলে দিচ্ছে রোগীদের সংখ্যা কমছে। পরীক্ষা করার নাম করে এরা রোগীদের বোকা বানিয়ে চলেছে।
মনে রাখবেন যে চিকিত্সকেরা এখনো রোগীদের মনেপ্রাণে চিকিৎসা করে থাকেন। তাদেরকে সমাজ ভগবানের মতন সমীহ করে চলে। দিল্লির এইমস হোক বা দেশের যেকোনো সরকারি হাসপাতাল সেখানকার রোগীরা চিকিৎসকদের ভগবানের নজরে দেখে কারণ সেই সকল চিকিৎসক রোগীদের জন্য দিনরাত কাজ করে যায়। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে নিজেদের কর্তব্য পালন করে চলে। এদের মাইনেও বেসরকারি হাসপাতালে তুলনায় অনেক কম। আর এখন এরাই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে। করোনা কে ধুলিস্যাৎ এরাই করবে। নিজেদের শহরের দাঙ্গা বা অন্য কোনো পরিস্থিতিতেই এই সকল চিকিৎসকরা পিছু হটে যাননি। প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে যাওয়া চিকিৎসকদের মত এরা শুধু টাকা র পেছনে ছুটে না। দেশ ও গোটা বিশ্ব চিরকালের মতো এদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।
(লেখক বরিষ্ঠ সম্পাদক ও কলম্নিস্ট)