৷৷ অভিজিৎ রায় চৌধুরী৷৷ নয়াদিল্লি, ০২ এপ্রিল৷৷ লকডাউন পর্ব শেষ হলে সাধারণ মানুষকে আটকে পড়ার মতো বর্তমান অবস্থা থেকে বের করে আনার ব্যাপারে এক অভিন্ন কৌশল রচনা করার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি রাজ্যগুলিকে চিন্তাভাবনা করার এবং প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দেন৷ কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্বের কথা শ্রী মোদী আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেন৷
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোভিড-১৯ মোকাবিলার বিভিন্ন পন্থাপদ্ধতি নিয়ে আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেন৷
লকডাউনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানানোর জন্য রাজ্যগুলিকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে কোভিড-১৯ সংক্রমণ সীমাবদ্ধ রাখতে কিছুটা সাফল্য পাওয়া গেছে৷ রাজ্যগুলি ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে যেভাবে একজোট হয়ে কাজ করেছে, তিনি তারও প্রশংসা করেন৷শ্রী মোদী অবশ্য সতর্ক করে দিয়ে বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি এখনও সন্তোষজনক অবস্থায় পৌঁছয়নি৷ কয়েকটি দেশে ভাইরাসের দ্বিতীয়বার সংক্রমণের সম্ভাবনা প্রসঙ্গ তিনি উত্থাপন করেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কাছে এখন অভিন্ন উদ্দেশ্য হ’ল — যতটা সম্ভব জীবনহানি প্রতিরোধ করা৷ আগামী কয়েক সপ্তাহে ভাইরাস নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্ণিতকরণ, তাঁদের আইসোলেশন ও কোয়ারান্টাইনে রাখার ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে৷ অত্যাবশ্যক চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ অব্যাহত রাখার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী উৎপাদনের জন্য কাঁচামালের যোগান নিরবচ্ছিন্ন রাখার কথাও বলেন৷ তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য পৃথক হাসপাতাল পরিষেবার সুবিধা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি৷ চিকিৎসকদের সংখ্যা আরও বাড়াতে রাজ্যগুলিকে তিনি আয়ুষ চিকিৎসকদের কাজে লাগানোর সম্ভাবনার কথা বলেন৷
সমন্বয়মূলক প্রয়াস গ্রহণের গুরুত্ব এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষের ভূমিকাগ্রহনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জেলাস্তরে সংকট মোকাবিলা গোষ্ঠী গঠন এবং নজরদারি আধিকারিক নিয়োগের কথা উল্লেখ করেন৷ তিনি বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য স্বীকৃত ল্যাবগুলি থেকে সংগ্রহ করতে হবে৷ এর ফলে, জেলা, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরে তথ্যের সমন্বয় ও বিন্যাস আরও ভাল হবে৷ ব্যাঙ্কগুলিতে মানুষের ভিড় এড়াতে প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ যোজনার আওতায় সুফলভোগীদের দ্রুত প্রাপ্য অর্থ মিটিয়ে দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সময় বিভিন্ন ধরনের শস্য উৎপাদনের উপযুক্ত — এই বিষয়টিকে বিবেচনায় রেখে সরকার লকডাউন চলাকালীন সময়ে কিছু ছাড় দিয়েছে৷ তবে, এটাও মনে রাখতে হবে যে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও তার ওপর নজরদারিও সমান প্রয়োজন৷ শ্রী মোদী রাজ্যগুলিকে খাদ্য শস্য সংগ্রহের জন্য এপিএমসি বাদে অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম কাজে লাগানোর কথা চিন্তাভাবনা করতে বলেন৷
জটিল এই পরিস্থিতিতে তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্ব, নিরন্তর দিশা-নির্দেশ এবং সহায়তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন৷ লকডাউনের সাহসী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করে মুখ্যমন্ত্রীরা বলেন, এই প্রয়াস দেশে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে৷ মুখ্যমন্ত্রীরা সামাজিক দূরত্ব, সন্দেহজনক ব্যক্তিকে চিহ্ণিতকরণ, তাঁদের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপগুলির কথা উল্লেখ করে নিজামুদ্দিন ধর্মীয় সভায় উপস্থিত ব্যক্তিদের চিহ্ণিত করে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর কথা বলেন৷ এই পদক্ষেপ কার্যকর করা গেলে সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিহত করা যাবে৷ প্রবাসী শ্রমিকদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রীরা জানান, এদের সুবিধার্থে খাদ্য ও অন্যান্য অত্যাবশ্যক সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে৷ রাজ্যগুলির পক্ষ থেকে বর্তমান সঙ্কট মোকাবিলায় সম্পদ ও অর্থের যোগান সহ চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করা হয়৷
মুখ্যমন্ত্রীদের বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাইরাস যাতে আরও ছড়িয়ে না পড়তে পারে, তার জন্য সকলকেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করতে হবে, ভাইরাস সংক্রমণের উৎস-স্থলগুলিকে চিহ্ণিত করে এগুলিকে আবদ্ধ করে রাখতে হবে৷ তিনি আরও বলেন, এখন প্রয়োজন দেশের সর্বত্র শান্তি ও আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা৷ কোভিড-১৯ আমাদের আস্থা ও বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই ভাইরাস জীবনের গতিপথেও ভীতির সঞ্চার করেছে৷ প্রধানমন্ত্রী করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সকলের সমবেত প্রয়াস গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করে সমস্ত নেতৃবৃন্দকে রাজ্য, জেলা, শহর ও ব্লক স্তরের সমাজ কল্যাণ সংগঠন এবং ধর্মীয় নেতা-নেত্রীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার আবেদন জানান৷
প্রধানমন্ত্রী বলেন, লকডাউন পর্ব শেষ হলে সাধারণ মানুষকে আটকে পড়ার মতো বর্তমান অবস্থা থেকে বের করে আনার ব্যাপারে এক অভিন্ন কৌশল রচনা করার বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি রাজ্যগুলিকে চিন্তাভাবনা করার এবং প্রস্তাব পাঠানোর পরামর্শ দেন৷ কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্বের কথা শ্রী মোদী আরও একবার স্মরণ করিয়ে দেন৷ মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এই আলোচনায় যোগ দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কয়েকটি রাজ্যে আরও কঠোরভাবে লকডাউন সম্পর্কিত নীতি-নির্দেশিকা কার্যকর করার কথা বলেন৷
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব নিজামুদ্দিন ধর্মীয় সভা থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া এবং আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীদের অবহিত করেন৷ তিনি রাজ্যগুলিকে যে সমস্ত জেলায় ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেখানে সংক্রমণ শৃঙ্খল ভেঙে ফেলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন৷মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে এই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রী, মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব ও স্বাস্থ্য সচিবরা ছাড়াও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, ক্যাবিনেট সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন৷