নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ১ এপ্রিল : রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন সত্ত্বেও লকডাউন এর অজুহাতে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে চা বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ, দেখা মিলছে না প্রশাসনিক সাহায্যের৷ তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে কৈলাসহর মহকুমার লক্ষ্মী টি গ্রুপের মনুভ্যালী চা বাগান সহ লক্ষ্মী টি গ্রুপের অন্যান্য চা বাগান এলাকাগুলিতে৷ খাবার পৌঁছে দিয়ে প্রাণ বাঁচানোর আকুল আবেদন শ্রমিকদের৷ লকডাউন এর ফলে সব থেকে সমস্যায় পড়েছে গ্রামীণ এলকায় বসবাসকারী শ্রমিক ও দিন -আনি দিন-খাই পরিবারের লোকেরা৷ চা বাগান এলাকাগুলিতে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট মজুরির পাশাপাশি রেশন সামগ্রী প্রদানের কথা থাকলেও লকডাউন ঘোষণার সাথে সাথেই বাগান গুলিতে কাজ বন্ধ হয়ে যায় সেই সাথে তাদের রেশন সামগ্রী ও বন্ধ করে দেয় বাগান কর্তৃপক্ষ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বাগান মালিক কর্তৃপক্ষকে রেশন সামগ্রী প্রদানের অনুরোধ করেছিলেন সেই আবেদন সাড়া দেয়নি লক্সমি টি গ্রুপের বাগান মালিকরা৷
পাশাপাশি গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে এখনো পৌঁছায়নি সরকারি ন্যায্য মূল্যের রেশন সামগ্রী৷ লক্সমি পি গ্রুপ কোম্পানির মনুব্যলি চা বাগান রাজ্যের প্রথম সারির চা বাগান এই বাগানে কাঁচা পাতা থেকে একেবারে স্বয়ংক্রিয় মেশিন চা পাতা প্যাকেটজাত হয়ে রাজ্যের পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রপ্তানি করা হয় এই মনুভ্যালী চা৷ প্রথম সারির বাগানে এভাবে শ্রমিকদের অসহায় চিত্র প্রকাশ এতে সহজেই অনুমেয় রাজ্যের অন্যান্য বাগানগুলোর কি অবস্থা৷ চা বাগান শ্রমিকদের অনেকেরই রেসন কার্ড নেই কাগজপত্রের জটিলতার কারণে অনেকেরই আবার আধার কার্ডের সাথে রেশন কার্ড লিঙ্ক করা হয়নি তাই সরকারি সাহায্য থেকেও বঞ্জিত এই বাগানের শ্রমিকরা৷ অন্যান্য সময় চা বাগান বন্ধ হয়ে গেলে শহরের বিভিন্ন বাড়িতে কাজ করে কিংবা ইট ভেঙে টাকা রোজগার করে পরিবার চালাতো শ্রমিকরা বর্তমানে লকডাউন এর কারণে একদিকে যেমন শহরের কাজ নেই তেমনি ইট ভাঙতে গেলে কিংবা কাজের সন্ধ্যানে বের হলে পুলিশ লাঠি দিয়ে মারতে শুরু করে৷ শ্রমিকদের বক্তব্য ভাইরাসের সংক্রমনে নয় খাদ্যের অভাবে মৃত্যু হবে তাদের৷
যারা প্রাপ্ত বয়স্ক রয়েছেন তারা হয়তো জল খেয়েও কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিতে পারবে কিন্তু ঘরে যারা শিশুরা রয়েছে তাদের কি হবে৷ বাগানে কাজ নেই রেশন বন্ধ মজুরি বন্ধ ঘর থেকে বের হলে পুলিশ লাঠি দিয়ে মারছে দুশ্চিন্তায় খাবার না পেয়ে মৃত্যু হবে শ্রমিকদের এমনটাই আশঙ্কা অসহায় শ্রমিক পরিবারগুলির৷ প্রথম দু-তিনদিন যা কিছু ছিল সব দিয়ে স্থানীয় বাজার থেকে সামগ্রী কিনে কেটে গেছে কিন্তু আরও ১৪ দিন এভাবে থাকতে হবে হাতে কোনো টাকা পয়সা নেই৷ তাই সরকারি সাহায্য না পেলে জল খেয়ে থাকতে হবে৷ মনুভ্যালি চা বাগান কর্তৃপক্ষের শ্রমিকদের প্রতি এই অনাবিক আচরণে হতবাক শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ৷
তবে মনুভ্যালী চা বাগানের এই অমানবিক মুখ কিংবা শ্রমিক নির্যাতন শুধুমাত্র এই লকডাউন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে নয় পূর্বে এধরনের বহু ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে৷ শ্রমিক নির্যাতনের বিরুদেধ বছর দেড়েক আগে রাস্তা রোখা হয়েছিল শ্রমিকদের পক্ষ থেকে৷ যদিও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটমাট করা হয়৷ শ্রমিক পরিবারের পক্ষ থেকে অতি দ্রুত সরকারি সাহায্য প্রদানের অনুরোধ করা হয়েছে৷

