নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২০ মার্চ৷৷ ত্রিপুরায় ১০৩২৩ এডহক শিক্ষক ইস্যুতে আজ বিধানসভায় বিরোধীরা লেজেগোবরে হলেন৷ কারণ, ত্রিপুরা সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে নিজেরাই ট্রেজারী বেঞ্চের তোপের মুখে পরেন৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে অধ্যক্ষ অধিবেশন মুলতুবি করে দেন৷
আজ বিধানসভার বাজেট অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে বিরোধী দল সিপিএম ১০৩২৩ এডহক শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনার জন্য অধ্যক্ষ রেবতী দাস-র কাছে মুলতুবি প্রস্তাব জমা দেন৷ কিন্তু, বিধানসভার নিয়ম অনুযায়ী হয়নি, এই কারণ দেখিয়ে অধ্যক্ষ বিরোধীদের আনা মুলতুবি প্রস্তাব খারিজ করে দেন৷ এ-নিয়ে বিধানসভায় অর্থমন্ত্রীর বাজেট পেশ হওয়ার পর বিরোধীরা ১০৩২৩ এডহক শিক্ষক ইস্যুতে আলোচনার জন্য সরব হন৷ ১০৩২৩ এডহক শিক্ষক ইস্যু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই যুক্তিতে তাঁরা বারবার অধ্যক্ষের কাছে আলোচনায় সম্মতি দেওয়ার আবেদন জানান৷ কিন্তু অধ্যক্ষ তাতে রাজি না হওয়ায় বিরোধীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে শুরু করেন এবং বিক্ষোভ দেখান৷
বিরোধীদের হই হট্টগোলে বিধানসভা উত্তপ্ত হয়ে উঠে৷ কারণ, ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্যদেরও ক্রমশ ধৈযর্ে্যর বাঁধ ভাঙছিল৷ একসময় বিরোধীরা ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে শুরু করেন৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য অধ্যক্ষ প্রশ্ণোত্তর পর্ব সমাপ্ত হওয়ার পর তাঁদের আলোচনার সুযোগ দেওয়া হবে এই আশ্বাস দিয়ে বিরোধীদের আসনে ফিরে যেতে অনুরোধ করেন৷ কিন্তু, বিরোধীরা সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে ১০৩২৩ এডহক শিক্ষক ইস্যুতে আলোচনার দাবিতে অনড় থাকেন৷ পরিস্থিতি ক্রমশ আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল দেখে ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্য প্রাক্তন স্বাস্থ্য মন্ত্রী সুদীপ রায় বর্মন বিরোধীদের উদ্দেশ্যে প্রস্তাব দেন, প্রশ্ণোত্তর পর্ব শেষে শিক্ষামন্ত্রী ওই ইস্যুতে বিবৃতি দিন৷ কিন্তু, তাতেও বিরোধীরা নিজেদের দাবি থেকে এক চুলও নড়েননি৷
এদিকে, বিরোধী সদস্যদের সরকার বিরোধী স্লোগানে ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্যরাও নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন৷ এদিন তারা নজিরবিহীনভাবে ওয়েলে নেমে বিরোধীদের লক্ষ্য করে পাল্টা স্লোগান দিয়ে বলেন, আপনাদের ভুলের কারণে ১০৩২৩ শিক্ষকের চাকরী বাতিল হয়েছে৷ তাঁর জবাব দিন, কেন তাঁদের চাকরী বাতিল হয়েছিল৷ একসময় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে উঠে মার্শালরা বিরোধীদের চারিদিক দিয়ে ঘেরাও করে নেন৷ কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্যই ওই পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে৷ কারণ, ট্রেজারী কয়েকজন সদস্য ভীষণ মারমুখী ভঙ্গিমায় ছিলেন৷ পরিবহন মন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রী ও বিধায়ক সুশান্ত চৌধুরী ট্রেজারী বেঞ্চের সদস্যদের সামাল দেন এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন৷
বিধানসভায় উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে অধ্যক্ষ দুপুর ২টা পর্যন্ত অধিবেশন মুলতুবি করে দেন৷ এরপর বিরোধীরা এদিনের মত বিধানসভা থেকে বেরিয়ে যান৷ দ্বিতীয়ার্ধে বিরোধীদের একজন সদস্যও অধিবেশনে অংশ নেননি৷ এদিন স্পষ্ট দেখা গেছে, ১০৩২৩ এডহক শিক্ষক ইস্যুতে ত্রিপুরা সরকারকে চাপে ফেলতে গিয়ে উল্টো বিরোধীরাই ল্যাজেগোবরে হলেন৷ কারণ, ওই শিক্ষকদের চাকরী বাতিল হওয়ার জন্য অনেকাংশে পূর্বতন সরকার তথা বর্তমান বিরোধীরা দায়ী৷ বিশেষ করে বর্তমান বিরোধী দলনেতা তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকেই ওই শিক্ষকদের চাকরী বাতিলের জন্য দায়ী করা হচ্ছে৷