BRAKING NEWS

রাজ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভার থাকায় শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ ফেব্রুয়ারি৷৷ শিল্পায়নের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ, জল এবং জমির প্রয়োজন হয়৷ ত্রিপুরায় বিদ্যুৎ, জল, জমি-সহ অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদের সম্ভার থাকায় শিল্প বিকাশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে৷ বৃহস্পতিবার ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিং অডিটরিয়ামে বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রথম আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধন করে দৃঢ়তার সাথে এ কথা বলেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরা সরকারও রাজ্যে শিল্পের বিকাশ এবং প্রসারের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজ করছে৷ প্রসঙ্গত, এই সম্মেলন আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে৷ সম্মেলনের থিম উত্তর পূর্বাঞ্চলে শিল্পের বিকাশ : চ্যালেঞ্জেস এবং সুযোগ৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ব্যবসার জন্য উদ্যোগীদের কোন অঞ্চল উৎকৃষ্ট, সেই অঞ্চলে কোন সামগ্রী উৎপাদন করা সম্ভব এবং কতটা উৎপাদন প্রয়োজন, পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই ব্যবসায় কতটা সাফল্য আসতে পারে সেই বিষয়গুলি সঠিক বিবেচনা করে বিনিয়োগ করলে সফলতা আসবে৷ পাশাপাশি কাঁচামাল উৎপাদন অঞ্চল থেকে উৎপাদন ইউনিট এবং সেখান থেকে বাজারের কতটা দূরত্ব রয়েছে সেই বিষয়ও বিবেচনায় রাখতে হবে৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সামগ্রিক অবস্থানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্প বিকাশের সম্ভাবনা প্রবল৷


তাঁর দাবি, দেশের প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে চাইছেন৷ এজন্য লুক-ইস্ট পলিসিকে অ্যাক্ট-ইস্ট পলিসিতে রূপান্তরিত করেছেন৷ অষ্টলক্মীপল নামেও আখ্যায়িত করেছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে৷ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ইন্দ্রধনুষ গ্যাস গ্রিড প্রকল্পে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে৷ তাঁর আরও দাবি, প্রচুর পরিমাণ গ্যাস উৎপন্ন হওয়ায় এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে ত্রিপুরা৷


মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, দেশের প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরাকে হীরা বানাতে চাইছেন৷ হীরা মানে হাইওয়েজ, আইওয়েজ, রেলওয়েজ এবং এয়ারওয়েজ৷ তিনি বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকারের সময়ে রাজস্ব সংগ্রহ বেড়ে ২৬ শতাংশ হয়েছে যা বিগত সরকারের সময় ৯.৮ শতাংশ ছিল৷ তাঁর দাবি, রাজ্যে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার সময় জিএসডিপি ছিল ১০ থেকে ১১ শতাংশ যা বেড়ে এখন ১৩.০৯ শতাংশ হয়েছে৷
একই সঙ্গে মানুষের বার্ষিক গড় আয়ও (নেট) বেড়েছে৷ তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক বছরের জন্য জাতীয় সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ১,২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে এবং আগামী ৩ বছরের জন্য ৮,০০০ কোটি টাকার অধিক মঞ্জুর করেছে কেন্দ্রীয় সরকার৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে জোর দেওয়া হয়েছে৷ ত্রিপুরায় এখন আকাশপথ, সড়কপথ এবং রেলপথের প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে৷ অনেকগুলি এক্সপ্রেস ট্রেন এখন বহিঃরাজ্যের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে৷


প্রসঙ্গত, আকাশপথেও প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রাজ্যে বিমান উঠা-নামা করছে৷ আগামী এপ্রিল-মে মাসে রাজ্যের নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির প্রবেশদ্বার হওয়ার পাশাপাশি ত্রিপুরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া দেশগুলির জন্যও করিডোর হবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরা সরকার ডিজিটালাইজেশনের ওপরও গুরুত্ব দিয়ে ইপিডিএস, ই-টেন্ডার, ই-ক্লাসরুম, ই-চালান, ই-স্ট্যাম্পিং, ই-ড্যাশবোর্ড, ই-ডিস্ট্রিক্ট ইত্যাদি চালু করেছে৷


তিনি বলেন, রাজ্যে পর্যটন একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র৷ খুব স্বল্প সময়ে মানুষকে রোজগার দিতে পারে৷ তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার হেলথ ট্যুরিজম, ধর্মীয় পর্যটনের বিকাশে গুরুত্ব দিয়েছে৷ রাজ্যে ত্রিপুরাসুুন্দরী মন্দির, নীরমহল, ছবিমুড়া, ঊনকোটি প্রভৃতি দর্শনীয় পর্যটনস্থল রয়েছে৷ আগের তুলনায় উদয়পুরের ত্রিপুরাসুুন্দরী মন্দিরে দর্শণার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে৷ ইকো ট্যুরিজমকে উন্নত করার লক্ষ্যে রাজ্যের ৫৪টি চা বাগানকে পর্যটনের ক্ষেত্র হিসাবে উন্নয়ন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে৷
তিনি বলেন, ওয়াইল্ডলাইফ ট্যুরিজমকে উন্নত করার লক্ষ্যে রাজ্যে বাইসন পয়েন্ট, ভালচার পয়েন্ট, হর্ণবিল পয়েন্ট, বাটারফ্লাই পয়েন্টগুলির পরিকাঠামো আরও উন্নত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ একই সঙ্গে কালচার্যাল ট্যুরিজমের ওপর সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে৷ এজন্য রাজ্যে ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করে কালচার্যাল হাব তৈরি করা হবে৷ কারণ সংসৃকতিই যে কোন দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে শক্তিশালী করে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে রবার রফতানি থেকে বড় পরিমাণ অর্থ আসে৷ রবার শিটের গুণমান বৃদ্ধি করতে রাজ্য সরকার মোক হাউস স্থাপনের জন্য উদ্যোগী হয়েছে৷ এর ফলে রবারের ভ্যালু অ্যাডিশন হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন৷


বিপ্লব দেব বলেন, ত্রিপুরায় এতদিন ত্রিপুরায় উৎপাদিত চায়ের কোন লোগো ছিলনা৷ এই সরকার আসার পর ত্রিপুরা চায়ের ব্র্যান্ড নাম দেওয়া হয়েছে৷ এই ব্র্যান্ডটি মার্কেটিং করার পর কলকাতার বাজারে ত্রিপুরার যে চা প্রতি কিলোর দাম ১৩৫ টাকা ছিল তা বেড়ে হয়েছে ২২৫ টাকা৷ ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগম এখন লাভের মুখ দেখছে৷ মুখ্যমন্রীরা বলেন, ফুলের একটা বড় বাজার রয়েছে রাজ্যে৷ অর্থনীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ফুলচাষ৷


অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত অশোক সজ্জনহার বলেন, ত্রিপুরায় শিল্পায়নের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে৷ তিনি বলেন, ত্রিপুরায় যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন রেল, বিমান, সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্যভাবে ঘটেছে যা শিল্প স্থাপনের জন্য সহায়ক৷ অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মহেশ কুমার সিং বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পসারণের মাধ্যমে রাজ্যের ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটবে৷


অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য পেশ করেন ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার অনুপ কুমার মুদগল, বার্লিনের সয়েন্ট সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর পুরণচন্দ্র পাণ্ডে, ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস অ্যান্ড কমার্সের ডিন অধ্যাপক চন্দ্রিকা বসু মজমদার৷ এছাড়া উপস্থিত ছিলন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক সুকান্ত বণিক৷ স্বাগত বক্তব্য পেশ করেন ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট বিভাগের প্রধান অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ড় দেবর্ষী মুখোপাধ্যায়৷


অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডিজিটাল কনফারেন্স প্রসিডিংসের একটি সিডি-র উন্মোচন করেন৷ মুখ্যমন্ত্রী আজ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং কুটিরশিল্পের প্রদর্শনী স্টলগুলি পরিদর্শন করেছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *