BRAKING NEWS

প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী অসম চুক্তি করেছিলেন বলেই বাঙালিরা সুরক্ষিত, দাবি করিমগঞ্জ কংগ্রেসের

করিমগঞ্জ (অসম), ২৬ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী অসম চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন বলেই আজ রাজ্যের বাঙালিরা সুরক্ষিত। তা না-হলে এনআরসি-র ভিত্তিবর্ষ ৭১ না হয়ে ৫১ সাল হত। এ রকম হলে অসমে বসবাসরত বাঙালিদেরকেই আজ বিপদের সম্মুখীন হতে হত। অসম চুক্তিকে বিকৃত করে এখন তার সব দায়ভার চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে কংগ্রেসের ঘাড়ে। বলা হচ্ছে, কংগ্রেসের পাপের বোঝা নাকি বাঙালিদের সইতে হচ্ছে। যা বাস্তবে ডাঁহা মিথ্যা অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়। স্থানীয় বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন করিমগঞ্জ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সতু রায়।

বুধবার ইন্দিরা ভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেন, অসম চুক্তি নিয়ে বিজেপি নেতারা বলছেন, কংগ্রেস আগে কেন এটা নিয়ে প্রতিবাদ করেনি। করেনি কারণ অসম চুক্তি নিয়ে কংগ্রেসের কোনও আপিত্তি এখনও নেই। আপত্তি রয়েছে চুক্তিকে বিকৃত করা নিয়ে। অসম চুক্তির ৬ নম্বর দফাকে পুরোপুরিভাবে বিকৃত করে অসমিয়াদের স্বার্থ রক্ষার কথা বলা হচ্ছে। যা মোটেও সত্য নয়। কারণ ৬ নম্বর দফায় পরিষ্কার বলা হয়েছে “অ্যাসামিজ পিপলস্” যার অর্থ অসমে বসবাসরত প্রত্যেকেই এখানে অ্যাসামিজ পিপলস্ বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে এই বিষয়টাকে পরিবর্তন করে বলা হচ্ছে অসমিয়া।

সতু রায় বলেন, চুক্তির দফা অনুযায়ী যে খিলঞ্জিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে সেখানেও আমাদের আপত্তি রয়েছে। কারণ কারা খিলঞ্জিয়া অর্থাৎ ভূমিপুত্র, এ নিয়ে যথেষ্ট যুক্তিতর্কের অবকাশ রয়েছে। অসমে বসবাসরত বাঙালিরা ব্রিটিশ আমলের বহু যুগ পূর্ব থেকেই এখানে বাস করে আসছেন। কোনও এক সময় অসমের সরকারি ভাষা ছিল বাংলা। বাঙালিদের বিরুদ্ধে অসম আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছিলেন তৎকালীন বিজেপি নেতা তথা প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, মুরলীমনোহর জোশি, লালকৃষ্ণ আদবাণীরা। সে সময়কার পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রেখেই রাজীব গান্ধী অসম চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন। যার ফলেই এনআরসি-র ভিত্তিবর্ষ ১৯৫১ ইংরেজি না হয়ে ১৯৭১ করা হয়ে হয়েছে। অন্যথায় অসমের বাঙালিদের এর জন্য চরম খেসারত দিতে হত।

জেলা কংগ্রেস সভাপতি বলেন, উগ্র অসমিয়াদের অসম আন্দোলনে সায় ছিল না বলেই প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছিল দেবব্রত শইকিয়া, অঞ্জন দত্তের মতো কংগ্রেসি নেতাদের। তখনকার দিনে গুয়াহাটি থেকে পালিয়ে এসে সন্তোষমোহন দেবের শিলচরের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা। বাঙালির বিরুদ্ধে সংগঠিত অসম আন্দোলনের সমর্থন জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী-সহ অন্যান্য নেতারা। জেলা কংগ্রেস সভাপতি সতু রায় বলেন, সেই সব চিঠির প্রতিলিপি আমার কাছে গচ্ছিত আছে।

আইএমডিটি আইন বাতিল নিয়েও বিজেপিকে দায়ী করেছেন সতুবাবু। তিনি বলেন, যেদিন আইএমডিটি আইনটি বাতিল হয়েছিল সেদিন অসমের সঙ্গে বরাকের বিজেপি নেতারা নিজেদের মধ্যে মিষ্টিমুখ করিয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন। আজকের দিনে এই আইন বাতিল হওয়ায় বাঙালিদের জীবনে চরম দুর্বিষহ যন্ত্রণা নিয়ে এসেছে। বিজেপি নেতারা সেদিন মিষ্টিমুখ করেননি, আসলে সেদিন তারা বাঙালির জাতিসত্ত্বাকে চিবিয়ে খেয়েছিলেন। প্রাক্তন বিধায়ক মিশনরঞ্জন দাস, জেলা বিজেপি সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্যের উদ্দেশ্যে সতুবাবু বলেন, এঁরা নিজেকে হিন্দু বাঙালির ত্রাতা বলে চিৎকার করে থাকেন। বাঙালির সুরক্ষার কথা বলেন। অথচ রাজ্য সরকারের ছুটি তালিকা থেকে জাতীয় কবির জন্মদিন, দুর্গাপূজার ছুটি কর্তন করা হয় তখন আমাদের স্থানীয় নেতারা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকেন। কংগ্রেস যখন বাঙালির কথা বলে তখন বিজেপি নেতারা কংগ্রেসকে “আমরা বাঙালি” দল বলে কটাক্ষ করেন। যাঁরা এভাবে বলেন আসলে তাঁরাই দেশ টুকরো টুকরো করার জন্য রাজনীতি করছেন।

ইন্দিরা ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক বৈঠকে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জেলা কংগ্রেসের উপ-সভাপতি উত্তম মজুমদার, প্রশাসনিক সাধারণ সম্পাদক সুব্রত দেব, জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র শাহদত আহমেদ চৌধুরী, পংকজ নাগ, শুভঙ্কর দাস প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *