নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২১ ফেব্রুয়ারী৷৷ ভারতবর্ষের সার্বিক বিকাশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মাতৃভাষার সম্মানে ও প্রসারে গুরুত্বারোপ করেছেন ৷ প্রধানমন্ত্রী চান দেশের প্রতিটি জনগোষ্ঠীর মানুষ নিজ নিজ মাত’ভাষায় কথা বলুক৷ তবেই দেশের সার্বিক বিকাশ সম্ভব ৷ শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের ১নং সভাকক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত রাজ্যভিত্তিক কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথাগুলো বলেন৷ তাঁর দাবি, মনের ভাব প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল মাতৃভাষা৷ এ বছর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মূল ভাবনা ছিল ‘‘ভাষা হোক সীমানা হীন৷’’
এদিন প্রদীপ জ্বেলে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সর্বপ্রথমে ভাষা আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন৷ তিনি বলেন, ১৯৫২ সালের এই দিনেই মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য পূর্ব পাকিস্তানের বর্তমান বাংলাদেশের সালাম, বরকত, রফিক, জববার সহ কয়েকজন শহীদ হয়েছিলেন৷ তারপর শাসক পাকিস্তান সরকার বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়৷ ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো একুশে ফেবয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়৷ তিনি বলেন, প্রয়াত বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করার সময়েই মাতৃভাষার জন্য আন্দোলন করেছিলেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ধন দৌলতের চাইতেও মাতৃভাষা বেশি শক্তিশালী ৷ কেননা নিজের মনের কথা, দুঃখ, বেদনা, ভাব প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হল মাতৃভাষা৷
তাঁর কথায়, যে ব্যক্তি মাতৃভাষা ছেড়ে ইংরেজী, হিন্দি, স্পেনিস ভাষায় কথা বলেন তার মনের অভিপ্রায় ১০০ শতাংশ পূর্ণ হতে পারে না৷ তাই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর উচিত নিদর্িধায় মাতৃভাষায় কথা বলা, অন্যের মাতৃভাষাকে সম্মান করা ৷
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পরাধীন ভারতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি চেষ্টা করেছিল বিদেশী ভাষা আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে৷ লর্ড মাউন্টব্যাটনের শাসনকালে লর্ড ম্যাকলে ভারতের স্বকীয় ভাষাকে চিরতরে বিদায় দিতে চেয়েছিলেন৷ যাতে ভারতের সার্বিক উন্নয়ন না হয়৷ তাঁর কথায়, ১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী ছাড়া কোন রাষ্ট্রনেতা স্বদেশী ভাষায় (হিন্দি) রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে ভাষণ দেননি৷ অথচ চিন, জাপান, ফ্রান্স-এর রাষ্ট্রপ্রধানরা রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে নিজ নিজ ভাষায় ভাষণ দেন ৷ তাঁর দাবি, আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বদেশীয় ভাষার উন্নয়নে ও বিকাশে স্বামী বিবেকানন্দ, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের পথ ধরেই এগিয়ে চলেছেন ৷ প্রধানমন্ত্রী মোদী ত্রিপুরা, মণিপুর, অসম, তামিলনাডু যেখানেই যান সেখানকার মাতৃভাষায় দু’চার কথা বলেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চান সবকা সাথ, সবকা বিকাশ৷ আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক সুুন্দর ও সম্মিলিত প্রয়াস দু’দেশের উন্নয়নে নতুন দিশা দিয়েছে৷
এদিকে, ভাষা হোক সীমানা হীন৷ ভাষা দিবসে এই অনুপ্রেরণায় এগিয়ে যেতে চাইছে ত্রিপুরা৷ তাই, আন্তর্জাতিক ভাষা দিবসের উদযাপনে কোন কার্পণ্য করেনি ত্রিপুরা৷ প্রভাত ফেরি থেকে শুরু করে সাংসৃকতিক অনুষ্ঠান, বাংলা ভাষার সম্মানে আজ পথে নেমেছেন আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা৷ এদিন সকালে প্রভাত ফেরিতে ত্রিপুরার শিক্ষা মন্ত্রী ও বাংলাদেশের সাংসদ মহম্মদ আব্দুস সাহিদ সহ সুকল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা পা মিলিয়েছেন৷ এদিন ভাষা দিবসের কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান আগরতলায় ত্রিপুরা সরকার ও বাংলাদেশ সহকারী হাই কমিশনের যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে উদযাপিত হয়েছে৷ এদিন ত্রিপুরার শিক্ষা মন্ত্রী রতন লাল নাথ বলেন, প্রত্যেক ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই আজ আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস উদযাপিত হচ্ছে৷ ত্রিপুরা সরকারের মূল লক্ষ্য একটি ভাষা যেন বিলুপ না হয়ে যায়৷
তিনি বলেন, তিনটি ভাষার সমন্বয়ে সায়মা ভাষার জন্য লাল রিম সেন হালামকে আজ আমরা সম্বর্ধনা দেব৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরা সরকার চেয়েছে, তাই বাংলার সঙ্গে ককবরক ভাষাকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে৷ ওই ভাষা যেন হারিয়ে না যায় সেই চেষ্টা করা হচ্ছে৷ তাঁর দাবি, ককবরক ভাষার পাশাপাশি চাকমা, রিয়াং ও অন্যান্য ভাষা গুলিকেও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা চলছে৷ তাই, ভাষা কল্যাণ দফতরের মাধ্যমে ওই ভাষাগুলিকে উজ্জীবিত এবং আরও সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ দৃঢ়তার সঙ্গে তিনি বলেন বলেন, আজকের এই দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, ভাষা মানুষের জন্মগত অধিকার৷ তাই সব ভাষাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই৷ তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশের আন্দোলনের জন্যই বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে৷ তিনি বলেন, মাতৃভাষা মাতৃ দুগ্দের সমান৷ যারা মাতৃ ভাষাকে সন্মান জানাতে পারেন না তারা মা ও মাতৃভূমিকেও সন্মান করেন না৷
এদিকে বাংলাদেশের সাংসদ মহম্মদ আব্দুস সাহিদ বলেন, রক্ত দিয়ে আমরা ভাঙল ভাষাকে রক্ষা করেছি৷ তিনি বলেন, বাংলা স্বীকৃতির জন্য বাংলাদেশের সংসদ থেকে জাতিসংঘে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম৷ সেই প্রস্তাবের ভিত্তিতেই বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে৷ তাঁর দাবী, আমরা প্রত্যেক ভাষাকে রক্ষায় বদ্ধ পরিকর৷ ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা ভাষার মর্যাদা পেয়েছি৷ তিনি আজ আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীকে প্রমান করেছেন কারোর ভাষা ছোট নয়৷