নয়াদিল্লি, ৩ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : দিল্লির নির্বাচনী জনসভা থেকে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ)-এর বিরোধিতা কারীদের তীব্র আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী | সোমবার দিল্লির শাহদারা এলাকার জনসভায় নরেন্দ্র মোদী বলেন, রাজধানী দিল্লি এবং আরও কিছু জায়গায় সিএএ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নিছক কাকতালীয় ঘটনা নয়, এটি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। এই ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য হ’ল দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি দুর্বল করা এবং দেশকে খণ্ডিত করা।
নির্বাচনের ঘোষণার পর দিল্লিতে প্রথম জনসভা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী । সোমবার দিল্লির শাহদারা এলাকার করকরদুমার সিবিডি ময়দানে বিজেপির বিজয় সঙ্কল্প সমাবেশের ভাষণে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারের বিরুদ্ধে সীলমপুর জামিয়া মিলিয়া ও শাহিনবাগের বিক্ষোভকেই হাতিয়ার করলেন প্রধানমন্ত্রী। এদিনের জনসভা থেকে মোদীর দাবি, বিক্ষোভকারীরা দেশের পতাকা ও সংবিধানকে সামনে রেখেই একের পর এক আইনবিরুদ্ধ কাজ করে চলেছেন। এই বিক্ষোভের পিছনে আম আদমি পার্টি (আপ) ও কংগ্রেসের চক্রান্ত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি। তারা দেশকে ‘টুকরো-টুকরো’ করতে চাইছে বলে ফের এক বার অভিযোগ করেছেন তিনি ।
এদিন জামিয়া মিলিয়া ও শাহিনবাগে চলা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী বিক্ষোভের প্রসঙ্গে কেজরিওয়ালের নাম না করে মোদী বলেন, ‘‘কিছু লোক রাজনীতি বদলাতে এসেছিলেন, কিন্তু এখন তাঁদের মুখোশ খসে গিয়েছে। এঁরাই সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। সেনার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। তাঁদের অপমান করেছিলেন।’’ এর পর স্বভাবসিদ্ধ ভাবেই তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘‘এমন দিল্লি কি দিল্লিবাসী কখনও চেয়েছিলেন?’’ মোদী দাবি করেন, ‘‘একটা সময় ছিল, যখন দিল্লিতে প্রায়শই সন্ত্রাসবাদী হামলা হত। এই হামলায় জড়িতদেরই যখন বাটলা হাউসে পুলিশ মেরেছিল, তখন এঁরাই তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। এঁরাই ভারতকে টুকরে-টুকরে করতে চায়।’’
তিনি এও বলেন, ‘‘জামিয়া, শাহিনবাগ, গত কয়েকদিন ধরে সিএএ নিয়ে বিক্ষোভ চলছে। কিন্তু, এটা শুধুমাত্র বিক্ষোভ নয়। এটা আসলে ষড়যন্ত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগ চলছে। এর পিছনে আপ ও কংগ্রেসের রাজনৈতিক চক্রান্ত রয়েছে।’’
তাঁর মতে, ‘‘এটা শুধু মাত্র আইনের বিরোধিতা হলে তা সরকারের যাবতীয় আশ্বাসের পর মিটে যাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু দেশের পতাকা ও সংবিধানকে সামনে রেখে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে। বিক্ষোভে হিংসা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। কিন্তু, এঁরা আদালতের কথা মানেন না। এঁরা আদালতের কথা শোনেন না। অথচ গোটা দুনিয়াকে দেশের সংবিধান দেখাচ্ছেন।’’
সিএএ-বিরোধী এই বিক্ষোভের জেরে অসুবিধায় পড়েছেন দিল্লিবাসী। তাঁদের দিল্লি থেকে নয়ডা যেতে অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। তাঁর মতে, ‘‘ষড়যন্ত্রকারীদের এখানেই না থামালে তারা অন্য কোথাও গিয়ে আন্দোলন করবে।’’
এ দিনের জনসভা থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক কাজ তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ, রামমন্দির নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়, সিএএ-এর মতো বিষয়। এ দিনের জনসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন মোদী | শনিবার বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ। বাজেট নিয়ে সরকারের প্রশংসা করে এ দিন মোদী দাবি করেন, ‘‘শুধু চলতি বছর নয়, শনিবার যে বাজেট পেশ হয়েছে তা গোটা দশক ধরে দিশা দেখাবে দেশকে। এর মাধ্যমে দিল্লির যুবক, মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব, মহিলা ও ব্যবসায়ী সকলেই লাভবান হবেন।’’ তাঁর সরকারের আমলে বিপুল কাজ হয়েছে বলে দাবি করেছেন মোদী। দাবি করেছেন, ‘‘সরকার এত দ্রুত কাজ করছে যে বিরোধীরা বলছে ধীরে কাজ করুন।’’
দিল্লির বিধানসভা ভোটের আগে এদিন মোদীর প্রথম জনসভা থেকে দিল্লির উন্নয়ন নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় গোটা দেশের নিরিখে অনেকটা পিছিয়ে দিল্লি। কেজরিওয়াল সরকার তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প আয়ুষ্মান যোজনা চালু করেনি বলেও তোপ দেগেছেন মোদী। তিনি বলেন, এই নির্বাচন কেবল সরকার গঠনের জন্য নয়, দিল্লির উন্নয়নকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া জন্য হবে এই নির্বাচন । এই নির্বাচন দিল্লির একবিংশ শতাব্দীর পরিচয় এবং অহংকারে অভিমানকে সমাধান করার জন্য।
তিনি আরও বলেন, দিল্লির মানুষের মনে কি আছে তা বলার দরকার নেই। এটি এখানে উপস্থিত জনতা থেকে পরিষ্কার। লোকসভা নির্বাচনে দিল্লির প্রতিটি ভোট বিজেপির শক্তি বাড়িয়েছিল এবং সাতটি আসন জিতে জানিয়ে দিয়েছিল তাঁরা কি ভাবছেন। দিল্লির ভোট দেশ পরিবর্তন করতে অনেক সাহায্য করেছে এবং তাদের ভোট দিল্লিরও অনেক পরিবর্তন করবে এবং দিল্লিকে আরও নিরাপদ ও আধুনিক করে তুলবে।
উল্লেখ্য, দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদী৷ আগামীকাল দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লির দ্বারকা এলাকায় আরও একটি প্রচারে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী ৷ প্রধানমন্ত্রীর ভোটের জন্য সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন দলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ তাঁর আবেদনের পর দোটানায় রয়েছে এমন ভোটারদের কাছ থেকে ভোট আসবে বলেই মনে করছেন দলীয় কর্মীরা ৷
৮ ফেব্রুয়ারির বিধানসভা নির্বাচন নিয়ে দিল্লির উত্তেজনা তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দল একদিকে যেমন সত্বা ছাড়তে নারাজ। অন্যদিকে তেমন দিল্লিতে ঘাঁটি গাড়তে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গেরুয়া শিবির। বিধানসভা নির্বাচনের জন্য এতদিন প্রচারে দেখা গিয়েছে বিজেপির বৃহত্তর নেতাদের। কখনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো কখনও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ গিয়েছেন জনগণের কাছে ভোট চাইতে। দুই দলই একে অপরের নানান খামতির কথা তুলে ধরেছেন।
এবার শেষলগ্নে মাঠে নামলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন কারকারডুমার সিবিডি ময়দান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন নরেন্দ্র মোদী। এই জনসভায় উপস্থিত হয়েছেন বিজেপির একাধিক নেতা-মন্ত্রী ও সমর্থকেরা।