BRAKING NEWS

প্রবীণদের পরামর্শ ছাড়া দেশ এগিয়ে যেতে পারে না : মুখ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩১ জানুয়ারি৷৷ প্রবীণরা হলেন সমাজের পথ প্রদর্শক৷ তাঁরা সমাজের ভাল, মন্দ, উন্নয়ন নিয়ে চিন্তা করেন৷ প্রবীণদের পরামর্শ ছাড়া একটি সমাজ, রাজ্য ও দেশ এগিয়ে যেতে পারেনা৷ তাই অবসর গ্রহণের পর আপনারা বুড়ো হয়ে গেছেন, অথর্ব হয়ে গেছেন তা মনে করলে চলবেনা৷ নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে আপনাদের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত কাজ করতে হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব আজ নজরুল কলাক্ষেত্রে ত্রিপুরা সিনিয়র সিটিজেন এবং পেনশনার্স সংঘের দ্বিতীয় বার্ষিক সাধারণ সভার উদ্বোধন করে একথা বলেন৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীদেব প্রবীণ নাগরিক ও চাকুরি থেকে অবসরপ্রাপ্তদের প্রতি জীবনের শেষদিন পর্যন্ত সমাজের জন্য কাজ করে যাবারও অনুরোধ জানিয়েছেন৷ তিনি বলেন, কর্মই ধর্ম৷ সততা, নিষ্ঠা ও কর্ম একজন মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে প্রতিষ্ঠিত করে৷ তাই চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর হীনমন্যতায় না ভুগে আপনাদের সমাজের জন্য কাজ করে যেতে হবে৷ এক্ষেত্রে তিনি প্রবীণ ও কর্মব্যস্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অনুসরণ করার জন্য প্রবীণদের প্রতি অনুরোধ জানান৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারিদের দাবী দাওয়ার ব্যাপারে আন্তরিক রয়েছে৷ অথচ বাম আমলে দাবী আদায়ের জন্য শিক্ষক-কর্মচারী ও অবসরপ্রাপ্তদের মিছিল, মিটিং করতে হতো৷ ত্রিপুরাতে ক্ষমতার পরিবর্তন হয়েছে৷ মানুষের মধ্যে কর্মক্ষমতা বেড়েছে৷ স্বচ্ছ নিয়োগ নীতি প্রনয়ণ করা হয়েছে৷ এই সরকার সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস নীতি নিয়ে চলতে চায়৷ তিনি বলেন, বাম সরকার সরকারি শিক্ষক ও কর্মচারিদের ২.২৫ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর দিয়েছিল৷ কিন্তু ঐ ফ্যাক্টর দেবার জন্য কোন ব্যবস্থা না রেখে বাম সরকার ১৩ হাজার কোটি টাকা দেনা রেখে গেছে৷ পে-রিভিশন হবার আগে বাম সরকার সরকারি কর্মচারি ও পেনশনার্সদের মাসিক বেতন ভাতা দিতে ৪৩৩ কোটি টাকা খরচ করত৷ আমরা ক্ষমতায় এসে সরকারি কর্মচারি ও পেনশনার্সদের ৭ম বেতন কমিশনের আদলে বেতন ভাতা দেবার ব্যবস্থা করেছি৷ এজন্য প্রতিমাসে ব্যয় হয় ৭৮০ কোটি টাকা৷ অর্থাৎ তৎকালীন বাম সরকার থেকে ৩৪৭ কোটি টাকা বেশি৷


মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন সরকারই বিধানসভায় জিরো ডেফিসিট বাজেট পেশ করেছে৷ এখন রাজস্ব সংগ্রহ হয় ২৬ শতাংশ৷ আগে সংগৃহীত হতো ৮.৯ শতাংশ৷ ব্যাঙ্কের সিডি রেশিও ৩৯ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫৬ শতাংশ৷ হোমগার্ডদের বেতন ৬০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা করা হয়েছে৷ বিদ্যৎ নিগমের লাইনম্যান, অপারেটর প্রমুখের কাজ করার সময় দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা সহায়তা করা হয়৷ আগে সহায়তা করা হত ২ লক্ষ টাকা৷ আহত হলে দেওয়া হত ৩০ হাজার টাকা৷ এখন দেওয়া হয় ৫ লক্ষ টাকা৷ ৫০ বছরের বেশি বয়সের কোন সরকারি কর্মচারি মারা গেলে তার পরিবারকে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়৷


নতুন বেতনক্রম আসার পর একজন গ্রপ-সি কর্মচারির নূন্যতম পে-স্কেল হয়েছে ১৮ হাজার টাকা এবং গ্রপ-ডি কর্মচারির হয়েছে ১৬ হাজার টাকা৷ গত ২০১৭-১৮তে রাজ্যে শিল্প ইউনিট ছিল ৫৪৯৩টি৷ নতুন সরকারের মাত্র ২ বছরে মোট শিল্প ইউনিট হয়েছে ৮১৪২টি৷ নতুন সরকারের সময় ডাই-ইন-হারনেসে মোট চাকুরি হয়েছে ৬৫০ জনের৷ প্রতিটি দপ্তরে ডাই-ইন-হারনেসের জন্য ১৫ শতাংশ পদ রিজার্ভ রাখা হয়েছে৷ বিগত সরকারের আমলে বার্ষিক মাথা পিছু আয় ছিল ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা৷ আশা করা যায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে তা দাঁড়াবে ১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা৷ প’দশ অর্থ কমিশন থেকে টাকা পেলে কর্মচারিদের অন্যান্য পাওনা মানবিকতার সাথে বিবেচনা করা হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এদেশ মহাত্মা গান্ধী, স্বামী বিবেকানন্দ, নেতাজী, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, দত্ত পন্থ ঠেংরীজী, দীনদয়াল উপাধ্যায়ের দেশ৷ প্রবীণ ও নবীনদের তাঁদের পথ অনুসরণ করে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ভারতকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ দেখছেন৷ একে বাস্তবায়িত করতে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে৷


অনুষ্ঠানে এছাড়া বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগম লিমিটেডের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা এবং বি এম এস-এর সভাপতি শঙ্কর দেব৷ স্বাগত ভাষণ দেন ত্রিপুরা সিনিয়র সিটিজেন ও পেনশনার্স সংঘের সভাপতি রণজিৎ দে৷ অনুষ্ঠান শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী সহ অতিথিগণ বি এম এস-র প্রতিষ্ঠাতা দত্ত পন্থ ঠেংরীজী, ভারতমাতা ও শ্রী শ্রী বিশ্বকর্মার মূর্ত্তিতে পুপার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা ’াপন করেন৷ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীকে সংবর্ধনা ’াপন করা হয়৷ পরিবেশন করা হয় জাতীয় সংগীত৷ অনুষ্ঠান শেষে ত্রিপুরা সিনিয়র সিটিজেন ও পেনশনার্স সংঘের সভাপতি তথা অনুষ্ঠানের সভাপতি রণজিৎ দে মুখ্যমন্ত্রীর হাতে ১২ দফা দাবী সনদ তুলে দেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *