নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৩০ জানুয়ারি৷৷ রাজ্যে ব্যবসা বাণিজ্যের অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে৷ বহির্রাজ্য এমনকি বিদেশের মানুষও তা বুঝতে পারছেন৷ রাজ্যের মানুষ এখন রোজগারের কথাও চিন্তা করছে৷ মানুষের মধ্যে কাজ করার ও স্বনির্ভর হওয়ার মানসিকতা সৃষ্টি হয়েছে৷ আজ হাঁপানিয়াস্থিত আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রদর্শনী কেন্দ্রে আয়োজিত ৩০তম ত্রিপুরা শিল্প ও বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করে এই অভিমত ব্যক্ত করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর আয়োজিত এই মেলা চলবে আগামী ১৫ ফেবয়ারি পর্যন্ত৷ প্রতিদিন মেলা দুপুর ২টা থেকে শুরু হয়ে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত চলবে৷
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, নতুন সরকারের স্বল্প শাসনকালের মধ্যেই ত্রিপুরাবাসীর মানসিকতার পরিবর্তন ঘটেছে৷ মানুষের মধ্যে কাজের প্রতি আগ্রহ, স্বচ্ছতা, সময়ের কাজ সময়ে শেষ করার অভ্যাস ও দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়েছে৷ রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং তথ্য ও প্রযুক্তি হাব গঠিত হবে৷ বাড়বে কাজের সুুযোগ ও রোজগার৷ উন্নত হবে রাজ্য৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৭-১৮ সাল পর্যন্ত রাজ্যে কেবলমাত্র ৫,৪৯৩টি ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট ছিলো৷ নতুন সরকার আসার পর ২,৬৪৯টি নতুন ইণ্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট বসেছে৷ চালু হয়েছে সিঙ্গল উইণ্ডো সিস্টেম৷ যার মাধ্যমে শিল্প স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যপ্রণালী ৩০দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করা যাবে৷ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ত্রিপুরার মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ যা বিগত সরকারের আমলে ১ লক্ষ ১৬ হাজার টাকা ছিলো৷
মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে শিল্প বিকাশের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, রাজ্যে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা থাকলেও প্রচার ও প্রসারের অভাবে সঠিকভাবে কখনওই মানুষের নজরে আসেনি৷ যার ফলস্বরূপ এর আশানুরূপ বিকাশ হয়নি৷ তিনি বলেন, বর্তমানে ছবিমুড়া, উজ্জয়ন্ত প্রাসাদ, ত্রিপুরেশ্বরী মা-র বাড়ি সহ বিভিন্ন পর্যটনস্থলগুলিতে পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ পর্যটন শিল্পের বিকাশে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্ত’ক অনেকগুলি অভিনব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ রাজ্যে রাবার শিল্পের সাথে প্রায় দেড় লক্ষ পরিবার যুক্ত রয়েছে৷ যাদের মধ্যে অধিকাংশই জনজাতি অংশের মানুষ৷ মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যের সামগ্রিক বিকাশে যোগাযোগ ব্যবস্থা, পরিকাঠামোর উন্নয়ন একান্ত আবশ্যক৷ তাই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বন্দর ব্যবহার, প্রোটোকল রোড স্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে চুক্তি হয়েছে৷ সাবমে সেজ স্থাপন করা হবে৷ ফেণী নদীর উপর সেতু তৈরি হয়ে গেলে ত্রিপুরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার করিডোরে পরিণত হবে৷ মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতি করে না৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যেমন ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে সর্বশ্রেষ্ঠ করতে চাইছে, ঠিক তেমনি রাজ্য সরকারও ঐ সময়কালের মধ্যে ত্রিপুরাকে সর্বশ্রেষ্ঠ বানানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে৷ বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে তিনি ত্রিপুরার উন্নয়নে বাংলাদেশ যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে এরজন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সভাপতি তথা ত্রিপুরা শিল্পোন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান টিংকু রায় বলেন, রাজ্য স্বনির্ভর হওয়ার পথে এক কদম এগিয়েছে৷ এই মেলা পরিসরের নতুন যেসব পরিকাঠামো তৈরী করা হয়েছে তা সবকিছুই শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের দু’বছরের আয়ের মাধ্যমে করা হয়েছে৷ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে কোন সহায়তা নেওয়া হয়নি৷ নাগিছড়াতে নতুন শিল্পনগরী স্থাপন করা হয়েছে৷ সাবমের সেজ-এ কাজ করার জন্য শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তর অর্থ ম’রী দিয়েছে৷ রাজ্যকে স্বনির্ভর করার মুখ্যমন্ত্রীর যে স্বপ সে পথে রাজ্য এগিয়ে চলছে৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, এবারের শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় মোট স্টল হয়েছে ২৮২টি৷ যার মধ্যে সরকারী স্টল ২৬টি, আন্তর্জাতিক স্টল ৪৭টি, বহির্রাজ্যের ৪৫টি এবং স্থানীয় স্টল রয়েছে ১৬৪টি৷ বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার কিরীট চাকমা বলেন, ত্রিপুরার উন্নয়নে বাংলাদেশ পাশে থাকবে৷ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ত্রিপুরায় বিনিয়োগ করলে উভয়ই সমানভাবে লাভবান হবে৷
এছাড়াও, এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, বিধায়ক মিমি মজমদার, ত্রিপুরা চা উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান সন্তোষ সাহা, ত্রিপুরা হস্ততাঁত ও হস্তকারু শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান বলাই গোস্বামী, শিল্প ও বাণিজ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে ও অধিকর্তা ড. পি কে গোয়েল প্রমুখ৷ উল্লেখ্য, স্বউদ্যোগী ও বেকার যুবক যুবতীদের স্বার্থে মেলা উপলক্ষ্যে ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু করে ১৩ ফেবয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় যেমন রপ্তানী, এম এস এম ই, স্কিল ডেভেলপমেন্ট, রাবার, চা, বাঁশ, জি এস টি, তথ্য ও প্রযুক্তি প্রভ’তি বিষয় ভিত্তিক আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হবে৷ এই কর্মসূচি প্রতিদিন ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে৷