শান্তির জন্য ব্রু শরণার্থীরা চাইছেন আলোচনা, প্রত্যাবর্তনের দাবিতে অনঢ় কাঞ্চনপুরবাসী

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ ডিসেম্বর৷৷ ত্রিপুরা বনধ-এর ফলে কাঞ্চনপুরের বহু মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন৷ ঘরবাড়ি ছেড়ে থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷ এতে চটে লাল হয়ে গেছেন কাঞ্চনপুরবাসী৷ কারণ ব্রু শরণার্থীরাই বাঙালিদের উপর হামলা করেছেন বলে অভিযোগ৷ ফলে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে দাবি করে ব্রু শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার দাবিতে অনড় কাঞ্চনপুরবাসী৷ এর ফলে কার্যত অশান্ত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সমগ্র মহকুমায়৷ তাই শান্তির জন্য সৌভ্রাতৃত্বের বার্তা ছড়িয়ে দিলেন ব্রু শরণার্থী নেতারা৷


উত্তর ত্রিপুরার জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা৷ ব্রু শরণার্থী নেতা ব্রুনো মিসার দাবি, বনধের সময় কারোর ওপর হামলা করেননি ব্রু শরণার্থীরা৷ শুধুমাত্র ভুল বোঝাবুঝির জন্য তাঁদের ওপর রুষ্ট হয়েছেন বাঙালিরা৷ কিন্তু, তাঁরাই আমাদের পরম মিত্র, বলেন তিনি৷


নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে আহূত ত্রিপুরা বনধ-এ বহু মানুষের ক্ষতি হয়েছে৷ তবে কাঞ্চনপুরের পরিস্থিতি এখনও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে ওঠেনি৷ সম্প্রতি প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত শান্তি বৈঠকে উন্নয়নমঞ্চ এবং নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ ব্রু শরণার্থীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিতের জোরালো দাবি জানায়৷ তাঁরা কাঞ্চনপুরে অনির্দিষ্টকালের বনধ প্রত্যাহারের প্রধান শর্ত হিসেবে ব্রু শরণার্থী প্রত্যাবর্তন সুনিশ্চিত করার বিষয়টি তুলে ধরেছিল৷


সম্প্রতি ব্রু শরণার্থী সংগঠনের পক্ষ থেকে উত্তর ত্রিপুরার জেলাশাসকের কাছে শান্তি বৈঠকের আয়োজন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়৷ কাঞ্চনপুরের মহকুমাশাসক অভেদানন্দ জানিয়েছেন, ব্রু শরণার্থী সংগঠনের কাছ থেকে আলোচনার জন্য চিঠি পেয়েছেন উত্তর ত্রিপুরার জেলাশাসক৷ তবে এখনও আলোচনার দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি৷


এদিকে, এ-বিষয়ে ব্রু শরণার্থী সংগঠনের নেতা ব্রুনো মিসা বলেন, ব্রু শরণার্থীরা কারোর ওপর হামলা করেননি৷ ত্রিপুরা বনধ-এ যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তার জন্য ব্রু শরণার্থীরা দায়ী নন৷ তাঁর দাবি, ভুল বোঝাবুঝির কারণে কাঞ্চনপুরবাসী ব্রু শরণার্থীদের ওপর রুষ্ট হয়েছেন৷ তাঁর কথায়, ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়ার পর থেকে বাঙালিদের সাথে মিলেমিশে রয়েছি আমরা৷ কারণ, তাঁরা আমাদের পরম মিত্র৷ তাঁর দাবি, ত্রিপুরা বনধ-এ হামলা হুজ্জুতির জন্য ২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ তাতে একজনও ব্রু শরণার্থীর নাম নেই৷ ব্রুনো মিসা বলেন, ভুল-ভ্রান্তি দূর করার জন্যই আলোচনা করতে চাইছি৷ তাই জেলাশাসকের কাছে শান্তি বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছি৷


অবশ্য ব্রু শরণার্থীদের এই আবেদনে চিড়ে ভিজবে বলে মনে হচ্ছে না৷ কারণ, কাঞ্চনপুরবাসী তাঁদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে অনড় রয়েছেন৷ এ-বিষয়ে উন্নয়ন মঞ্চের কনভেনর রঞ্জিত নাথ বলেন, ১৯৯৭ সালের পর থেকে ব্রু শরণার্থীরা বহুবার বাঙালিদের ওপর অত্যাচার করেছেন৷ তাদের জন্য বহু পরিবার উদ্বাস্তু হয়েছেন৷ তবুও সবকিছুই খোলামনে সহ্য করেছি আমরা৷ কিন্তু, এখন সহ্যের সমস্ত সীমা লঙ্ঘন করেছে৷ তাঁর কথায়, শান্তি প্রতিষ্ঠায় আমরাও ইচ্ছুক৷ তাই অনির্দিষ্টকালের বনধ প্রত্যাহার করেছি৷ কিন্তু, এতকাল ধরে ব্রু শরণার্থীদের অত্যাচারের জবাব দেওয়ার সময় এসেছে৷ তাঁর দাবি, বনধে-এর নামে ব্রু শরণার্থীরাই হামলা হুজ্জুতি করেছেন, তার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে৷ সাথে তিনি যোগ করেন, মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ওই সমস্ত প্রমাণ তাঁর হাতে তুলে দিতে চাইছি৷


তিনি বলেন, ব্রু শরণার্থীদের শান্তি বৈঠকের প্রস্তাব নিয়ে প্রশাসনের তরফে কিছুই জানানো হয়নি৷ তবে তাঁদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত হলে যে কোনও বৈঠকে আমরা প্রস্তুত, বলেন তিনি৷ ফলে, উদ্ভূত ওই সমস্যার আদৌ সমাধান সম্ভব হবে কিনা, সংশয় দেখা দেওয়া স্বাভাবিক বলেই মনে হচ্ছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *