কলকাতা, ২০ ডিসেম্বর (হি.স): চলতি বছর তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবসকে ‘নাগরিক অধিকার দিবস’ হিসেবে পালন করা হবে বলে শুক্রবার ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পাশাপাশি নাগরিকপঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরুদ্ধে সোমবার থেকে বছর শেষ পর্যন্ত একগাদা ঠাঁসা প্রতিবাদ কর্মসূচির ঘোষণা করলেন তৃণমূলনেত্রী । নাগরিকপঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিক আইনের বিরোধিতায় সোমবার বাংলা জুড়ে প্রতিবাদ মিছিলের ডাক তৃণমূলের । পাশাপাশি ২৪ ডিসেম্বর কলকাতার রাজপথে ফের প্রতিবাদ মিছিল করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
আজ আশ্চর্য জনক ভাবে নাগরিকত্ব আইন প্রশ্নে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নজরদারিতে গণভোটের দাবি থেকে সরে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বলেন,গতকাল আমি ঠিক গণভোটের কথা বলিনি । বলেছি, নাগরিকত্ব আইন প্রনয়ণ করা ঠিক হয়েছে কিনা তা নিয়ে জনমত নেওয়া হোক । পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন, ‘দেশ জুড়ে এই যে প্রতিবাদের আগুন জ্বলছে, তা থামানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হস্তক্ষেপ করুন । তাঁর কাছে আবেদন করছি, নাগরিকত্ব আইন প্রত্যাহার করে নিন’।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতার রাজপথে গর্জে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী । টানা তিন দিন মহামিছিল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । পাশাপাশি বৃহস্পতিবার রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে নাগরিকপঞ্জি এবং সংশোধিত নাগরিক আইনের প্রতিবাদে সভাও করেছেন তিনি । সেই সভা থেকে মোদী সরকারকে চ্যালেঞ্জ করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঞ্চল্যকর দাবি, ‘বুকের পাটা থাকলে গণভোটে এগিয়ে আসুন । রাষ্ট্রসংঘকে দিয়ে গণভোট করানো হোক । দেখা যাক, কতজন আইন মানছেন, না মানলে আপনারা ইস্তফা দিতে বাধ্য হবেন ’।
বৃহস্পতিবার ধর্মতলার সভায় দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, নাগরিকত্ব আইনের পক্ষে ক’জন রয়েছেন আর বিপক্ষেই বা ক’জন তা জানতে গণভোট করা হোক । রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের মতো নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানের নজরদারিতে হোক সেই নির্বাচন ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই প্রস্তাবই হাতিয়ার করে নেয় বিজেপি । বিজেপির মুখপাত্ররা বলেন, একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে একথা বলেন ? এ তো দেশের গণতন্ত্রের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ । পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালও মুখ্যমন্ত্রীর তীব্র সমালোচনা করেন । তিনি এও বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী ।
গণভোটের দাবি তোলা যে ঠিক হয়নি তা তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব গতকাল বিকেলেই বুঝতে পারেন । তাই দলীয় মুখপাত্রদের এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয় । অবশেষে আজ ব্যাখ্যা দেন মুখ্যমন্ত্রী । শুক্রবার দুপুরে তপসিয়ায় তৃণমূল ভবনে দলের কোর কমিটির বৈঠক ডেকেছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো । তার পর সাংবাদিক বৈঠকে গণভোট সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মানুষের মতামত নেওয়া হোক । রাষ্ট্রসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনের কথা যেমন বলেছি তেমন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কথাও বলেছি ।‘ তিনি এও বলেন, গণভোটের ইংরেজি প্রতিশব্দটা কিন্তু বলিনি । বার বার বলছি, জনমত নেওয়ার কথা বোঝাতে চেয়েছি মাত্র । আমি ভাত আর আমি ভাত খাই এক ব্যাপার নয় । মুখ্যমন্ত্রীকে এদিন রাজ্যপালের মন্তব্য নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল । তাতে দৃশ্যত বিরক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘ছাড়ুন তো । এক কথা কতবার বলব ।‘
এক রাতের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই ‘ডিগবাজি’ দেখে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র সায়ন্তন বসু বলেন, ‘পাকিস্তান যে ধরণের দাবি জানায় মুখ্যমন্ত্রী সেরকম কথা বলছিলেন । আসলে তোষণের রাজনীতি তৃণমূলের মজ্জায় ঢুকে গেছে । ভিতর থেকে সেই মর্মেই কথা বেরিয়ে আসে । কিন্তু ওরা বুঝতে পেরেছে, গণভোটের দাবি তোলায় শুধু বাংলা নয় গোটা দেশের সব ধর্ম, জাতির মানুষ তৃণমূলের উপর ক্ষেপে গেছে । কারণ, দেশের গণতন্ত্রের অপমান করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাই ভয় পেয়েই পিছু হটল তৃণমূল’।