নিজস্ব প্রতিনিধি, ধর্মনগর, ১৫ ডিসেম্বর ৷৷ উত্তর ত্রিপুরা জেলার পানিসাগর গ্রামীণ ব্যাঙ্কে বেয়ারার চেক জমা দিয়ে টাকা পেলেন না এক ভোক্তা৷ তার নাম মিনারানী নাথ৷ এ বিষয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনও ধরনের সদুত্তর মিলেনি৷ চেক জমা দেওয়ার পর টাকা কোথায় বেপাত্তা হয়ে গেল সে সম্পর্কে কোনও তথ্যও জানাতে চাননি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ৷ এই ঘটনায় পানিসাগর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে ক্ষোভের আগুন পুঞ্জীভূত হচ্ছে৷ পানিসাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের দক্ষিণ পানিসাগর এলাকার দুই নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কুসুম নাথের স্ত্রী মিনারানী নাথ পানিসাগর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখায় ১০ হাজার টাকার একটি বেয়ারার চেক জমা দেন ক্যাশিয়ার অনুপ কুমার ঘোষের কাছে৷
চেক জমা দিলে টাকা কিভাবে পাওয়া যায় সে সম্পর্কে অবগত ছিলেন না গ্রামীণ ওই মহিলা৷ দীর্ঘ দেড় ঘণ্টা ব্যাঙ্কে অপেক্ষা করার পর ক্যাশিয়ার অনুপ কুমার ঘোষকে ওই মহিলা টাকা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তাকে নাকি জানানো হয় ওই টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাবে৷ ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার অনুপ কুমার ঘোষের কথায় বিশ্বাস করে মিনারানী নাথ যথারীতি বাড়িতে চলে যান৷ দীর্ঘ ২২ দিন পরও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হওয়ার পর কোনও ম্যাসেজ মোবাইল ফোনে না আসায় তার মনে সন্দেহ ঘনীভূত হতে থাকে৷ শেষ পর্যন্ত তিনি বিষয়টি তার ভাইকে জানান৷ সবকিছু জেনে ভাই শম্ভু নাথ তার বোন মিনারানী নাথকে সঙ্গে নিয়ে গত ৯ ডিসেম্বর পানিসাগর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখায় যান৷
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার এবং ম্যানেজার সাফ জানিয়ে দেন এজন্য ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ দায়ী নন৷ শুধু তাই নয়, টাকা নিয়ে যাওয়ার প্রামাণ্য সব তথ্যও নাকি তাদের কাছে আছে৷ অসহায় মিনারানী নাথ ও তার ভাই ব্যাঙ্কে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ দেখানোর জন্য ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছে আর্জি জানান৷ কিন্তু ব্যাঙ্ক ম্যানেজার সিসিটিভি ফুটেজ দেখাতে অস্বীকার করেন৷ আইনি মোতাবেক ফুটেজ দেখা যাবে বলে তাদের জানিয়ে দেন৷ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এহেন মানসিকতায় দিশাহীন হয়ে ভাই-বোন নিরাশ হয়ে গত ১০ ডিসেম্বর পানিসাগর থানায় এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন৷
অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের শাখায় সিসিটিভি’র ফুটেজ খতিয়ে দেখতে যায়৷ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পুলিশকে জানিয়ে দেয়, ফুটেজ দেখার কিছু নিয়ম কানুন রয়েছে৷ আগরতলাস্থিত হেড অফিসে অনুমতি ছাড়া কোনও ফুটেজ দেখানো সম্ভব নয়৷ হেড অফিসে চিঠি দিয়ে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বিষয়টি জানাবেন এবং অনুমতি পেলেই পুলিশকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখানো হবে বলে জানান৷ এরই মধ্যে বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমের গোচরে আসে৷ সংবাদ মাধ্যমের কর্মীরা ঘটনা সম্পর্কে খোজ নিতে পানিসাগর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অভিজিৎবাবুর কাছে যান৷ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার জানান, বিগত আট মাস পূর্বে তিনি আসার আগেই নাকি সিসি ক্যামেরা সম্পূর্ণ খারাপ হয়ে রয়েছে৷ তাই কোনও ফুটেজ দেখানো সম্ভব হবে না৷ প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতেই নাকি তদন্ত করতে হবে৷ তিনি দায় এড়ানোর কৌশল হিসেবে আরও বলেন, বিগত আট মাস ধরে নাকি বিষয়টি তিনি গ্রামীণ ব্যাঙ্কের হেড অফিসকে জানিয়েছেন৷
কিন্তু দপ্তর কর্তৃপক্ষ কোনও কর্ণপাত করেননি বলে পাল্টা দোষারোপ করেন অভিজিৎবাবু৷ এখন প্রশ্ণ হল ব্যাঙ্কের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে কিভাবে দীর্ঘ আটমাস যাবৎ সিসিটিভি বিকল হয়ে রইলো এবং কেনই বা সেটি সাড়াইয়ের ব্যবস্থা করা হলো না৷ দেশের বিভিন্ন স্থানে হ্যাকারদের কবলে পড়ছেন ভোক্তারা৷ এরই মধ্যে পানিসাগরে এ ধরনের কর্মকাণ্ডে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে৷ গ্রাহকরা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় রীতিমতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন৷ পানিসাগর গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ক্যাশিয়ার ও ম্যানেজারের কাছ থেকে ভিন্ন ভিন্ন যে তথ্য উঠে এসেছে তাও সন্দেহের উর্দ্ধে নয় বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন৷ প্রকৃতপক্ষে তথ্য আড়ালের উদ্দেশ্যেই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ এ ধরনের কৌশল নিয়েছে৷ অসহায় পরিবারটি ১০ হাজার টাকা খুইয়ে আরও অসহায় হয়ে পড়েছে৷ এখন দেখার বিষয় উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পরবর্তী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে৷