কাঞ্চনপুরে শান্তির পক্ষেই সায়, জোরদার আওয়াজ উঠল রিয়াং শরণার্থী প্রত্যাবর্তনের

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ ডিসেম্বর৷৷ শান্তি বৈঠকে রিয়াং শণীদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনের আওয়াজ উঠেছে৷ তাছাড়া, কাঞ্চনপুর মহকুমাজুড়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধির দাবি উঠেছে৷ কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসক অভেদানন্দ বৈদ্য জানিয়েছেন, আজ শান্তি বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে৷ প্রত্যেকেই শান্তির পক্ষেই সওয়াল করেছেন৷ তাঁর কথায়, উদ্বাস্তুদের নিরাপত্তার প্রশ্ণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় ত্রিপুরা বনধে কাঞ্চনপুরে সংঘর্ষ হয়েছে৷ শরণার্থীদের একাংশের আক্রমণে উদ্বাস্তুরা থানায় এবং বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছেন৷ গত সোমবার থেকে কাঞ্চনপুরে পরিস্থিতি থমথমে হয়ে রয়েছিল৷ বনধের সময় রিয়াং শরণার্থীদের মধ্যে একদল উশৃঙ্খল যুবক একজন বনরক্ষীকেও মারধর করেছে৷ স্বাভাবিকভাবেই পরিস্থিতি কাঞ্চনপুরে ভয়ংকর রূপ নিয়েছিল৷ সেখানে মহকুমা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছিল৷


প্রশাসনের উদ্যোগে কাঞ্চনপুরে দশদা টাউন হলে শান্তি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক প্রেম কুমার রিয়াং, জেলা পরিষদের সদস্য ললিত দেবনাথ, বিজেপি কাঞ্চনপুর মন্ডল সভাপতি গৌতম রায়, প্রাক্তন বিধায়ক রাজেন্দ্র রিয়াং, চাকমা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি নিরঞ্জন চাকমা, আইএনপিটি কাঞ্চনপুর বিভাগীয় সম্পাদক ভবরঞ্জন রিয়াং, আইনজীবী প্রলয় দেবনাথ, সমাজসেবী শৈলেন্দ্র নাথ, উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসক হেমেন্দ্র যাবেল কুমার, উত্তর ত্রিপুরা পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী, কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসক অভেদানন্দ বৈদ্য, কাঞ্চনপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক বিক্রমজিৎ শুক্লদাস এবং জাতি-উপজাতির বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা প্রমুখ৷


সূত্রের খবর, বৈঠকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে৷ তাতে প্রশাসনিক আধিকারিকরা নানা পরামর্শ দিয়েছেন৷ কিন্তু, দীর্ঘক্ষণ আলোচনা সত্ত্বেও শান্তি-শৃঙ্খলার প্রশে সকলেই একমত হলেও রিয়াং শরণার্থী ইস্যুতে আনন্দবাজার এলাকার উদ্বাস্তুরা সওয়াল করেছেন৷ শুধু তাই নয়, তাঁরা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন৷ উদ্বাস্তুদের প্রতিনিধিদের দাবি, ১৯৯৭ সালে মিজোরাম থেকে প্রাণভয়ে ত্রিপুরায় আশ্রয় নেওয়া ব্রু শরণার্থীদের স্বদেশে ফিরে যেতে হবে৷ তাদের অভিযোগ, ব্রু শরণার্থীদের একাংশ মাঝে মধ্যেই সন্ত্রাস করে থাকেন৷ বনধের দিনেও তারা সন্ত্রাস করেছেন৷ এই বিষয়ে উত্তর ত্রিপুরা জেলা শাসক জাানিয়েছেন, তদন্ত সাপেক্ষে ব্রু শরণার্থীদের হিংসাত্মক ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে৷ পাশাপাশি উত্তর ত্রিপুরা পুলিশ সুপার ভানুপদ চক্রবর্তী নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করার আশ্বাস দিয়েছেন৷


এদিকে, আলোচনায় আইনজীবী প্রলয় দেবনাথ রিয়াং শরণার্থীদের পথ অবরোধ নিয়ে কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে কাঞ্চনপুর থানায় মামলা রয়েছে বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, তাদের কেন এখনও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না৷ ওই সভায় আরও অনেকে রিয়াং শরণার্থীদের উশৃঙ্খল আচরণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন৷ শুধু তাই নয়, তাদের মিজোরামে প্রত্যাবর্তনে জোর সওয়াল করেছেন৷


এই বৈঠক নিয়ে কাঞ্চনপুর মহকুমা শাসক অভেদানন্দ বৈদ্য বলেন, শান্তি বৈঠকে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে৷ প্রত্যেকেই শান্তি-শৃঙ্খলার পক্ষেই মত দিয়েছেন৷ তবে, নিরাপত্তারক্ষী আরও বৃদ্ধির দাবি উঠেছে৷ পাশাপাশি নিরাপত্তারক্ষীর টহলদারি বাড়ানোরও দাবি উঠেছে৷ তিনি জানান, আনন্দবাজারের উদ্বাস্তুরা এদিন পুনর্বাসনের দাবি তুলেছেন৷ মহকুমা শাসক বলেন, বনধে হিংসার ঘটনায় বাড়িঘর ছেড়ে এখনও আনন্দবাজার থানায় ৯৪ পরিবার, দশদা দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে ও রতনমণি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে ৪০০ পরিবার আশ্রয় নিয়ে আছেন৷ তিনি জানান, তাদের বাড়িফেরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
এদিকে, বৈঠক শেষে ফেরার পথে প্রশাসনিক আধিকারিকরা স্থানীয় জনগণের অবরোধের মুখে পড়েন৷ বড়হলদিতে স্থানীয় জনগণ প্রশাসনের কাছে এলাকায় কঠোর নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন৷ ওই এলাকায় একটি টিএসআর ক্যাম্প বসানোর আবেদন জানিয়েছেন তারা৷ প্রশাসনিক আধিকারিকরা তাদের ওই দাবি বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *