প্রসূতি ও শিশুদের রক্তাল্পতার হার কমাতে মিশন মুডে কাজ করতে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৫ ডিসেম্বর৷৷ রাজ্যের জনগণকে উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের লক্ষ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যে-সমস্ত প্রকল্প রাজ্যে চালু রয়েছে তা সফলভাবে রূপায়ণ করার জন্য নিয়মিত পর্যালোচনা করতে স্বাস্থ্য দফতরের সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব৷ পাশাপাশি গর্ভবর্তী মহিলা এবং শিশুদের রক্তাল্পতার হার আরও কমানোর জন্য স্বাস্থ্য দফতরকে মিশন মুডে কাজ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷


বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের ১ নম্বর কনফারেন্স হল-এ স্বাস্থ্য দফতরের এক পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এই নির্দেশ দিয়েছেন৷ সভায় স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন প্রকল্পের পর্যালোচনা করেন তিনি৷ তিনি বলেন, রাজ্যের যে-সব এলাকায় মহিলা ও শিশুদের রক্তাল্পতার হার বেশি, সে-সব এলাকায় স্বাস্থ্য দফতরকে আরও বেশি করে কর্মসূচি নিতে হবে৷ বিশেষ করে জনজাতি এলাকায় মহিলা ও শিশুদের রক্তাল্পতার হার কমাতে বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷ রক্তাল্পতার হার কমানোর জন্য প্রতিটি জেলার মুখ্য চিকিৎসা আধিকারিকদের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে দিতে স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷


পঞ্চায়েত স্তর থেকেই এই কাজটি করার জন্য সভায় উপস্থিত মুখ্য চিকিৎসা আধিকারিকদের দায়িত্ব নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ সভায় তিনি আরও বলেন, গর্ভবর্তী মহিলাদের জন্য প্রয়োজনীয় যতগুলি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরীক্ষা রয়েছে সেগুলি ১০০ শতাংশ করার ক্ষেত্রে প্রতিটি জেলার মুখ্য চিকিৎসা অধিকারিকদের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে৷ প্রয়োজনে স্বাস্থ্য শিবিরের আয়োজন করে গর্ভবর্তী মহিলাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরীক্ষাগুলি করাতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে৷
সভায় স্বাস্থ্যসচিব দেবাশিস বসু বলেন, রাজ্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিকে আরও শক্তিশালী ও উন্নীতকরণের উদ্যোগ নিয়েছে তাঁর দফতর৷ রাজ্যে বর্তমানে ২-টি মেডিক্যাল কলেজ, ৬-টি রাজ্য হাসপাতাল, ৬-টি জেলা হাসপাতাল, ১২টি মহকুমা হাসপাতাল, ২২টি কমিউনিটি হেলথ সেন্টার, ১১৩টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ১,০০৫টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে৷


এ-প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্য পরিষেবার উন্নয়নে চিকিৎসক-সহ সকলকেই দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে৷ স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে যাতে কোনও প্রকার ঘাটতি না থাকে সে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে৷ প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সিটিস্ক্যান-সহ যে-সমস্ত যন্ত্রপাতি রয়েছে সেগুলি সবসময় যাতে সচল থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷ এছাড়াও হাসপাতালের জনঔষধী কেন্দ্রগুলিতে যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ মজুত থাকে সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দেন৷


সভায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা অদিতি মজুমদার জানান, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে রাজ্যের প্রতিটি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি হেলথ সেন্টারগুলিতে ৬৫ ধরনের চিকিৎসা পরিষেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে৷ এছাড়াও মা ও শিশুদের সুরক্ষার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের জননী ও শিশু সুরক্ষা প্রকল্পে মা ও শিশুদের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে গর্ভবর্তী মহিলাদের বিনামূল্যে শিশুদের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে৷ এই প্রকল্পের মাধ্যমে গর্ভবর্তী মহিলাদের বিনামূল্যে আহার, ঔষধ, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, হাসপাতালে সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে পরিবহণ খরচ ইত্যাদি প্রদান করা হচ্ছে৷


এ-প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, জননী সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পটি সম্পর্কে মানুষ যাতে আরও বেশি করে জানতে পারেন তার জন্য এই প্রকল্পটিকে রাজ্যব্যাপী প্রচারে নিয়ে যেতে হবে৷ এই প্রকল্পের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার তথ্য সংবলিত বড় বড় হোর্ডিং তৈরি করে প্রতিটি হাসপাতাল-সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানোর জন্য নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পাশাপাশি আশাকর্মীরা যাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবর্তী মহিলাদের এ বিষয়ে সচেতন করতে পারেন সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে হবে৷


সভায় আয়ুষ্মান ভারত প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের মিশন অধিকর্তা অদিতি মজুমদার বলেন, রাজ্যের প্রায় ২০ লক্ষ ৫৭ হাজার সুবিধাভোগী প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন৷ এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ৭ লক্ষের অধিক সুবিধাভোগীকে ই-কার্ড প্রদান করা হয়েছে৷ তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী জন অরোগ্য যোজনা কর্মসূচিতে রাজ্যের ৬২টি সরকারি এবং ২-টি বেসরকারি হাসপাতালকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে৷ এই প্রকল্পে রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৪৩ হাজার ৩৮০ জন রোগীকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে৷ আগামী ২০২২ সালের মধ্যে রাজ্যের সমস্ত উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলিকে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টারে রূপান্তর করার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও মিশন অধিকর্তা সভায় জানান৷


সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের প্রতিটি জেলা হাসপাতালে ই-হাসপাতাল পরিষেবা চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে৷ রক্তাল্পতার হার কমানো, ম্যালেরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রণ, জননী সুরক্ষা যোজনা প্রকল্পের প্রচার-সহ স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়নে যে সকল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে সেগুলি নিয়মিত পর্যালোচনা করার জন্যও স্বাস্থ্য সচিবকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী৷


পর্যালোচনা সভায় মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও মুখ্যসচিব মনোজ কুমার, মেডিক্যাল এডুকেশনের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা ডা. সঞ্জীব ঘোষ, ত্রিপুরা হেলথ সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত অধিকর্তা ডা. শুভাশিস দেববর্মা, পরিবার পরিকল্পনা দফতরের অধিকর্তা ডা. রজত দেববর্মা এবং আট জেলার মুখ্য চিকিৎসা আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন এবং আলোচনা করেন৷